চট্টগ্রাম বন্দর প্রধান অঞ্চল হওয়ার সুবাদে এখানে বেশিরভাগ ইউরোপীয় বণিকদের আনাগোনা দেখা যেত। এসব ইউরোপীয় বণিকরা নিজেদের ভদ্র দাবি করতো। কিন্তু আসলেই কি তারা ভদ্র ছিল? এ প্রশ্ন হয়তো প্রত্যেক ঐতিহাসিকদের মনে ধাঁধা তৈরি করতে পারে।
এসব বণিকরা মাঝে মধ্যে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে হানা দিত। তারা হঠাৎ করে উপকূলীয় অঞ্চলে হানা দিয়ে গরীব ও নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে যেত। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন দেশে দাস হিসাবে বিক্রি করা হতো।
এরপর আসা যাক বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লবের একনিষ্ঠ কর্মী চাটগাঁইয়া যুবক জামর ওরফে ‘লুই বেনেডিক্ট জামর’ সম্পর্কে।
১৭৭৩ খ্রীস্টাব্দের কোনো একদিন হঠাৎ করে চট্টগ্রামের উপকূল সংলগ্ন এলাকায় ফরাসি দাস ব্যবসায়ীরা হানা দেয়। এ হানায় তারা বেশ কয়েকজন মানুষকে জাহাজে তুলে নিয়ে চলে যায়। তুলে নেওয়া মানুষগুলোর মধ্যে একটা ছিল ছোট্ট বাচ্চা। তার বয়স ১১-১২ এর কাছাকাছি। দেখতে কালো, মনে হয় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। ফরাসি দাস ব্যবসায়ীরা তাকে বর্তমানে মাদাগাস্কারের জাহাজে করে পাচার করে দেয়। সেখান থেকে কোনো এক মাধ্যমে ফরাসি সম্রাট পঞ্চদশ লুই তাকে ক্রয় করেন। তারপর কয়েক জোড়া পশুপাখিসহ তাকে উপহার হিসেবে তুলে দিলেন সম্রাটের প্রিয় রক্ষিতা (উপপত্নী) কাউন্টেস মাদামাম দ্যু বারির (১৭৪৩-১৭৯৩) হাতে।
এ বিস্ময় বালকের ডাকনাম ছিল ‘জামর’। তার নাম আসলেই জামর ছিল নাকি ভাষার পরিবর্তনে জমির নাম থেকে জামর হয়, তা নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য রয়েছে। ফরাসিতে তার পুরো নাম ছিল লুই বেনেডিক্ট জামর। তার জন্ম ১৭৬২ খ্রীস্টাব্দের আশেপাশে হবে বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন।
তার মালিক ‘দ্যু বারি’ তাকে আফ্রিকান বলে মনে করতেন। তিনি সম্ভাব্য সিদ্দি জনগোষ্ঠীর ছিলেন। সিদ্দিরা পূর্ব আফ্রিকার বান্টু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। সিদ্দিরা আরব আর পর্তুগিজদের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াতে প্রবেশ করে।
মাদাম বারি কৃষ্ণকায় এ বালকটিকে পুত্রস্নেহ দিয়েছিলেন। তাকে সাজিয়েছিলেন রেশম আর মসলিনে। দিয়েছিলেন শিক্ষা-দীক্ষাও। জামর দাস হলেও বিলাসবহুল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ফলে সমাজের উচ্চশ্রেণির সঙ্গে তার হাঁটা-চলা ছিল। এতে তিনি ধ্রুপদি ফরাসি সাহিত্য ও দর্শন চর্চার স্পর্শে আসেন।
একদিন তার হাতে এলো জাঁ জাক রুশোর বই। প্রবল এক ঝাঁকুনিতে রুশো তাকে জাগিয়ে দিলেন। ভেতরে বুনে দিলেন বিদ্রোহের বীজ। তখন তার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ হলো জ্যাকবপন্থী বিপ্লবীদের সঙ্গে। বিপ্লবের সময় জামর প্যারিস রয়্যাল ক্যাফেতে যাতায়াত করতেন। ইংরেজ বিপ্লবী জর্জ গ্রিভের সঙ্গে সেখানেই তার বন্ধুত্ব হয়। ১৭৮৯ খ্রীস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব শুরু হলে জামর হলেন- কমিটি অব পাবলিক সেফটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
বিপ্লবীদের হাতে সম্রাটের পতন ঘটলে প্রাসাদ থেকে বিতাড়িত হন মাদাম বারি। ফরাসি অভিজাত শ্রেণির ওপর গভীর প্রভাব থাকায় তিনি বিপ্লবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। বিপ্লবীরা তাকে গ্রেপ্তার করলেও তথ্য প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ৬ ডিসেম্বর ১৭৯৩ তিনি আবার গ্রেপ্তার হলেন। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে এবার হাজির করা হলো জামরকে।
মাদাম বারির কাছে এর আগ পর্যন্ত জামর তর পরিচয় প্রকাশ করেননি। এবার আদালতে দাঁড়িয়ে আত্মপরিচয় দিয়ে বললেন, ‘আমি আফ্রিকার নই, চট্টগ্রামের ছেলে। দাস-ব্যবসায়ীরা আমাকে মাদাগাস্কার নিয়ে যায়। সেখান থেকে নিয়ে আসে ফ্রান্সে।’
বিচারসভায় তিনি মাদামের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেন। তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মাদাম বারিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। মাদাম বারিকে সহযোগিতার অভিযোগে তারও কারাদণ্ড হয়। তবে ছয় সপ্তাহ পর বিপ্লবী বন্ধুরা তাকে মুক্ত করে নিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় জামরের গোপনে জীবন-যাপন।
১৮১৫ খ্রীস্টাব্দে ওয়াটার লু যুদ্ধে হেরে নেপোলিয়ন নির্বাসিত হলে তিনি আবার প্রকাশ্য জীবনে ফিরে আসেন। বাড়ি নেন প্যারিসে, লাতিন কোয়ার্টারের কাছে। কাছে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার স্বভাব ছিল বদরাগী। ছাত্রদের বেদম পেটাতেন বলে জানা যায়।
৭ ফেব্রুয়ারি ১৮২০ দারিদ্র্য ও অনাহারে নিঃসঙ্গ অবস্থায় জামর মারা যান। লোকচক্ষুর প্রায় অগোচরে সম্পন্ন হয় তার শেষকৃত্য।
জামর সম্পর্কে মাদাম বারি তার স্মৃতিকথায় বলেন, ‘আফ্রিকার কিশোর জামর স্বভাবে ছিল বুদ্ধিদীপ্ত ও দুষ্ট, সরল ও স্বাধীনচেতা। কিন্তু তার দেশের মতোই বুনো। রাজাকে যে কিছুটা সম্মান দেখাত, আর তা কেবল ছদ্মবিনয়ে।’
পরবর্তীতে জামরের বিপ্লবে অংশগ্রহণের কথা শুনে বারি বলেন, ‘শুরুতে আমি তাকে পুতুল বা খেলার সামগ্রী হিসেবেই দেখতাম। ধীরে ধীরে বালক ভৃত্যটির ওপর আমার মায়া জন্মাতে থাকে। ছোট্ট এই শজারুটিরও আমার মনোযোগ কাড়ার চেষ্টা ছিল। শেষমেশ সে হয়ে উঠেছিল অভদ্র ও বেয়াড়া।’
ফ্রান্সের সেকালের কয়েকজন শিল্পী জামরের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন। ল্যুভরে রক্ষিত একটি প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন ফরাসি নারী-শিল্পী মারি-ভিক্তোয়ার লোমোয়ান। তাতে ঘন কোকড়া চুল, পুরু ঠোঁট, উঁচু কপাল ও গাঢ় কৃষ্ণবর্ণের জামরকে কৃষ্ণাঙ্গ বলে মনে হয়। তার পরনে অভিজাত ধূসর রেশমি কোট। নিচে উঁকি দিচ্ছে বাহারি লেসের কাজ করা জামা। অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা, এ প্রতিকৃতি অতিরঞ্জিত, সম্ভবত কল্পিত। শিল্পী তাকে মাদাম বারির চোখে দেখেছেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…