Categories: Bangladesh News

দানবীর আরপি সাহার অন্তর্ধান ও মির্জাপুর গণহত্যা দিবস


১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতা দেখে ইতিহাসের জঘন্যতম ফ্যাসিস্ট হিটলার-মুসোলিনিও লজ্জা পেতেন। পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার আরেকটি দৃষ্টান্ত মানবহিতৈষী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার অন্তর্ধান। আজ তাঁর ৫৩তম অন্তর্ধান ও মির্জাপুর গণহত্যা দিবস। 

১৯৭১ সালের ৭ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা মির্জাপুরের সাধারণ মানুষের উপর আকস্মিক আক্রমণ করে গণহত্যা চালায়। দোকানপাট, গ্রামবাসীর বাড়িঘর লুটপাট করে এবং জ্বালিয়ে দেয়। এ দিন রাতে আরপি সাহা এবং তার একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৭জনকে নারায়ণগঞ্জ কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। এরপর আর তাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এদিন মির্জাপুর, আন্ধরা, সরিষাদাইড়, দুর্গাপুর, কান্ঠালিয়া, পোস্টকামুরী ও বাইমহাটি গ্রামের শতাধিক মানুষকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। এর মধ্যে ৫৯ জনের পরিচয় জানা যায়। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের অনেকে  দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে ব্যবসায়িক কাজে শুক্রবারের হাটে মির্জাপুর এসেছিলেন।

৭ মে ছিলো শুক্রবার। মির্জাপুরে সাপ্তাহিক হাটবার। এদিন জুমা নামাজের পর স্থানীয় দালাল মওলানা ওয়াদুদের নির্দেশে ও তার দুই ছেলে মান্নান ও মাহবুবের নেতৃত্বে কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তি মির্জাপুর বাজারে ব্যাপক লুটপাট করে। একই সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মির্জাপুরের সাহা পাড়া এবং আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরাপরাধ গ্রামবাসীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহতদের কিছু লাশ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বংশাই নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বাকিদের নদীর পাশে পুঁতে ফেলা হয়। 

আরপি সাহার প্রতি সাধারণ মানুষের আকাশ প্রমাণ ভালোবাসা সবসময় ঈর্ষার চোখে দেখেছেন মওলানা ওয়াদুদ (কুমিল্লার অধিবাসী পরে মির্জাপুরে দ্বিতীয় বিয়ে করে স্থায়ী হন)। ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠার পর কোনো এক দুর্গাপূজার সময় বংশাই নদীতে এক নৌকা ডুবিতে হোমসের বেশ কজন ছাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। এরমধ্যে মুসলমান ছাত্রীও ছিলেন। ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীদের আরপি সাহা নিজের সন্তানের মত স্নেহ করতেন। ওইসব ছাত্রীর মৃত্যুর পর অভিভাবকদের সম্মতিতে কুমুদিনী কমপ্লেক্সেই তাদের দাফন করা হয়। এ ঘটনাকে মওলানা ওয়াদুদ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। তিনি হিন্দুর জায়গায় মুসলমানদের দাফনের বিরোধিতা করে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের যে জায়গায় কবরস্থান করা হয়েছে সে জায়গা মুসলমানদের কাছে হস্তান্তরের দাবি তোলেন। মওলানা ওয়াদুদ আরপি সাহার বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের বিরোধিতা শুরু করেন। ওয়াদুদের অভিযোগ পর্যালোচনা করতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা, জেনারেল আইযুব খানসহ অনেকেই মির্জাপুর সফরে আসেন এবং তাদের কাছে ওয়াদুদের অভিযোগ মিথ্যা প্রতীয়মান হয়। তারা আরপি সাহার বিরুদ্ধাচারণ করা দূরের কথা তার বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। যা ওয়াদুদ কোনো ভাবেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি।

মওলানা ওয়াদুদ কোনোভাবেই যখন কিছু করতে পারছিলেন না, তখন পুঞ্জিভূত ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ আসে ১৯৭১ সালে। ২৫ মার্চের কালরাতের পর পাক হানাদার বাহিনী ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দিকে রওয়ানা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাঁধার মুখে তারা টাঙ্গাইল পৌঁছে। এরপরই মওলানা ওয়াদুদ মির্জাপুরে শান্তিকমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। তার দুই ছেলে মান্নান ও মাহবুবের নেতৃত্বে শান্তিকমিটি স্থানীয় হিন্দুদের উপর অত্যাচার শুরু করে। আর অন্যদিকে মওলানা ওয়াদুদ পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে আরপি সাহাকে দমন করার কাজে মনোনিবেশ করেন। দালাল ওয়াদুদের প্ররোচনায় এপ্রিলের শেষ দিকে পাকহানাদার বাহিনী নারায়ণগঞ্জ থেকে আরপি সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে অনেক চেষ্টার পর সে দফায় তিনি ছাড়া পান। তার শুভার্থীরা তাকে দেশ ত্যাগের পরামর্শ দিলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। আর্তপীড়িত মানুষের সেবা দেওয়া ত্যাগ করে নিজের জীবন বাঁচাতে রাজি হননি।  

’৭১ এর নরখাদক হিসেবে খ্যাত জেনারেল টিক্কা খান ৮ মে মির্জাপুরে কুমুদিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। টিক্কা খানের মির্জাপুর সফর নিয়ে আরপি সাহা ব্যস্ত ছিলেন। ওয়াদুদ ও তার দোসররা জানতো টিক্কাখান একবার কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আসতে পারলে আরপি সাহাকে আর শায়েস্তা করা যাবে না। আর এ কারণে ওয়াদুদ তার দুই ছেলে এবং কুপরামর্শদাতাদের সঙ্গে ৬ মে রাতে বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ মে দিনের বেলায় মির্জাপুরে লুটতরাজ চালায় আর রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবি ও আরপি সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা আর ফিরে আসেননি।

সে সময় মির্জাপুরে হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন আইয়ুব নামে উগ্রপন্থি এক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তার সঙ্গে ওয়াদুদ গংদের সুসম্পর্ক ছিল। ৬ মে সারারাত ওয়াদুদের দখল করা হেরেমখানায় নেশায় বুদ হয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাপ্টেন আইয়ুব তার বিশ্বস্ত কয়েকজন সেনা সদস্য, মান্নান, মাহবুব নারায়ণগঞ্জ যান। সেখানে হানাদার বাহিনীতে কর্মরত এক সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আইয়ুবের বন্ধুর সঙ্গে পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী স্থানীয় কয়েকজন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার কমপ্লেক্সে যান এবং  আরপি সাহাকে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। এমন সময় পাশের ঘরে থাকা একমাত্র সন্তান ভবানি প্রসাদ সাহা তার পিতাকে একা ছাড়তে চাননি।  তখন তাকেসহ মোট ৭ জনকে হানাদার বাহিনী নিয়ে যায়। সেটাই তাদের শেষ যাওয়া।

কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদ সাহা গ্রামের এক সাধারণ বাঙালি থেকে নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমে বিত্তশালী হয়েছিলেন। বিত্তবৈভবের সবকিছু অকাতরে দান করেছিলেন মানুষের কল্যাণে। তিনি বাংলাদেশে হাসপাতাল, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গরিবদের কল্যাণে ট্রাস্ট গঠন করেন। মানবতাধর্মী কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার রণদা প্রসাদ সাহাকে রায় বাহাদুর খেতাব দেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় ও তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত করে।

আরপি সাহা ১৮৯৬ সালের ৯ নভেম্বর সাভারের কাছে কাছৈড় গ্রামের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে। বাবা দেবেন্দ্র নাথ সাহা ও মা কুমুদিনী সাহার চার সন্তানের মধ্যে রণদা ছিলেন দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন দলিল লেখক আর মা ছিলেন গৃহিণী। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গ্রামবাংলার আর দশজন শিশুর মতোই রণদার হাতেখড়ি হলেও লেখাপড়া বেশি দূর এগোয়নি। কারণ তার ৭ বছর বয়সে সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মা কুমুদিনী দেবী। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা তার অর্জন করা হয়নি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত।

প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের দেখাশুনার জন্য দেবেন্দ্র নাথ সাহা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু সৎ মায়ের অনাদর ও নিষ্ঠুরতা রণদাকে একরোখা ও বেপরোয়া করে তোলে। অবস্থা দেখে তার বাবা রণদাকে পাঠিয়ে দিলেন মামাবাড়ি সাভারের শিমুলিয়ায়। মা হারা রণদার মন বাবা ও সৎ মায়ের অনাদরে এতটাই বিষিয়ে উঠেছিলো যে মামা বাড়িতেও আর তার মন বসলো না। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে গেলেন কলকাতায়। অপরিচিত কলকাতায় তার কোনো আশ্রয় নেই। জীবন ধারণের জন্য তখন কুলিগিরি, রিকশা চালানো, ফেরি করা, খবরের কাগজ বিক্রির মতো বিচিত্র কাজ করেছেন রণদা। কলকাতায় তখন কাজের সন্ধানে ছুটে আসা ভুখানাঙ্গা মানুষের ভিড়, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয় ম্যালেরিয়া- এসবই তাকে স্বদেশি আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য বিপ্লবের দীক্ষা নেন তিনি। এজন্য তাকে কারাভোগও করতে হয়।

১৯১৪ সালে সারা বিশ্বে মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিপ্লবীদের আহ্বান জানালেন ইংরেজদের হয়ে বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করার জন্য। স্বেচ্ছাসেবী বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরের হয়ে যুদ্ধে নামলেন রণদা প্রসাদ সাহা। ব্রিটিশ সেনাদের তখন দারুণ খাদ্যাভাব, নানা রোগে আক্রান্ত তারা। রণদা আহত সৈনিকদের সেবায় একেবারে ডুবে গেলেন। তিনি শক্রদের চোখ এড়িয়ে সবার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যখন বাগদাদে বন্দি তখন সেখানে ছিল অ্যাম্বুলেন্স কোরও। একদিন হঠাৎ সামরিক হাসপাতালে আগুন লেগে যায়। আগুনের ভয়ে সবাই জীবন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। রণদা প্রসাদ দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে একজন রোগীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তাকে দেখে আরও তিনজন উদ্ধার কাজে যোগ দিলেন। শেষ রোগীটিকে বের করে এনে অজ্ঞান হয়ে গেলেন রণদা। সুস্থ হয়ে কলকাতায় ফেরার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও রণদাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টে ভর্তি হয়ে রণদা যখন ইরাক যান তখন তার সঙ্গে দেখা হয় লম্বা চুল, বড় বড় চোখ আর প্রাণবন্ত এক যুবকের। তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। রণদা তখন অস্থায়ী সুবেদার মেজর। রণদা প্রসাদ সাহা কাজী নজরুল ইসলামকে সংগীত বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামও নিজের পছন্দের কাজটি পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

ব্রিটিশ সরকার প্রথম মহাযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা ভারতীয়দের সবাইকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিয়েছিল। লেখাপড়া সামান্য হলেও যুদ্ধে তার অবদানের কথা বিবেচনা করে রেলওয়ের কালেক্টরেটের চাকরি দেওয়া হয়েছিল রণদা প্রসাদকে। কর্মস্থল ছিলো সিরাজগঞ্জ থেকে শিলাইদহ। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে ১৯৩২ সালে এই চাকরিতে ইস্তফা দেন তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকাটা পান তা দিয়ে শুরু করেন কয়লার ব্যবসা। প্রথমে বাড়ি বাড়ি কয়লা সরবরাহ, পরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কয়লা সরবরাহের কাজ করেন রণদা প্রসাদ। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার সতীশ চৌধুরীর পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতায় মাত্র ছয় বছরে কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত কয়লা-ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন তিনি। কয়লার ব্যবসার সূত্রে রণদা নৌযানের ব্যবসা শুরু করলেন। অন্য ব্যবসায়ীরা যখন ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে কোনোকিছু জলের দামে বেচে দিতো, রণদা তা কিনে নিয়ে নতুন করে দাঁড় করাতেন। কোনো ব্যবসার সমস্যাগুলো দ্রুত খুঁজে বের করে সেটিকে আবার পুনর্জীবিত করে তুলতেন তিনি। 

এ সময়ে দ্য বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি নামে নৌ-পরিবহন সংস্থা এবং নৌ-পরিবহন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি নিজেকে একজন সফল নৌপরিবহন ব্যবসায়ী করে তোলেন। নৌপথে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত বেঙ্গল রিভার সার্ভিস প্রথমে যৌথ মালিকানায় থাকলেও পরে সব অংশীদারের অংশ কিনে নেন রণদা। ১৯৪২-১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের এজেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং জর্জ অ্যান্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রসেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ কিনে নেন। এরপরে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস কিনেন। চামড়ার ব্যবসাও শুরু করেন এই সময়। এভাবেই নিজ মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হন তিনি।

অর্থ বিত্তে বড় হলেও অর্থাভাবে মায়ের মৃত্যুকে ভুলেননি রণদা। মায়ের সেই স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে ফিরেছে সব সময়। তাই পরিণত জীবনে দুস্থ মানুষের সেবা দিতে গড়ে তুলেন মায়ের নামে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।’

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রণদা প্রসাদ বাংলাদেশে চলে আসেন। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসা দুভাগ হয়ে যায়। ভারতে থাকা কুমুদিনী ওয়েলফেরার ট্রাস্টের টাকায় পরিচালিত হতে থাকে কলকাতা, কালিম্পং ও মধুপুরের কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এ দেশে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই বছরই রণদা প্রসাদের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী ওয়েলফেরার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের আওতাভুক্ত হয়। নিজের স্বার্থ নয়, মানুষের কল্যাণকে বড় করে দেখার মানসিকতা থেকেই তার ব্যবসা পরিচালিত হতে থাকে। ’৭১সালে হানাদার বাহিনী ধরে নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতেন রণদা প্রসাদ সাহা। এ কারণেই শহর থেকে দূরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরকে কর্মস্থল হিসেবে বেছে নেন। অতঃপর মির্জাপুর গ্রামের প্রভাবশালী তালুকদার সতীশ চন্দ্র পোদ্দারের মেয়ে কিরণবালা দেবীকে বিয়ে করেন। কিরণবালা দেবী ছিলেন রণদা প্রসাদের সুযোগ্য সহধর্মিণী। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন তিনিও। ১৯৩৮ সালে কুমুদিনী হাসপাতালের শোভা সুন্দরী ডিসপেন্সারির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় কিরণবালা ২০০ ছাত্রীর জন্য একটি আবাসিক বালিকা বিদ্যালয় ভারতেশ্বরী হোমসের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।

একটি সমাজের উন্নতির জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য ১৯৪৪ সালে মির্জাপুরের মতো গ্রামেও পাশ্চাত্য ভাবধারায় গড়ে তুলেছিলেন ভারতেশ্বরী হোমসকে, যা ছিলো বিরাট চ্যালেঞ্জ। যোগেন্দ্র চন্দ্র পোদ্দারের (সম্পর্কে রণদার কাকা) বাড়ির আঙিনায় শুরু হয়েছিলো এ স্কুল। তারপর ধীরে ধীরে এ স্কুল আদর্শ এক বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। প্রথা ও কুসংস্কারের জালে বন্দি নারীদের শিক্ষিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবং সমাজপতিদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে টাঙ্গাইলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুমুদিনী মহিলা কলেজ। এটিই দেশের প্রথম আবাসিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ। নারী সমাজের উন্নয়নেই যে তিনি কেবল মনোযোগী ছিলেন তা নয়, নারীশিক্ষার পাশাপাশি পুরুষদের জন্য তিনি মানিকগঞ্জে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন দেবেন্দ্র কলেজ।

রণদা প্রসাদ অনুভব করেছিলেন শিক্ষার অভাবের মতো চিকিৎসার অভাব গ্রামের মানুষের জীবনে প্রবল। চিকিৎসার অভাবে অনেককেই মরতে দেখেছেন তিনি। মায়ের মতো অনেক নারীর অকাল মৃত্যু তার মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। তাই গ্রামের মানুষের সুচিকিৎসার জন্য তিনি মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুমুদিনী হাসপাতাল। তৎকালীন সময়েই এটি ছিল দেশের হাতে গোনা উন্নত চিকিৎসার সুযোগসমৃদ্ধ হাসপাতালগুলোর একটি। মাত্র ২০ শয্যা নিয়ে ১৯৪৪ সালে যাত্রা শুরু হয় এই হাসপাতালের। পরবর্তীতে ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হয়। দেশের দূর-দূরান্তের গরিব রোগীরা চিকিৎসা পাওয়ার আশায় আসেন এ হাসপাতালে। একসময় এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো। বর্তমানে বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য সামান্য অর্থ নেওয়া হয়।

রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন সংস্কৃতি প্রাণ একজন মানুষ। অন্যের মধ্যে শিল্প ও সংস্কৃতির গুণ দেখলে তিনি যেমন তা উস্কে দিতেন, তেমনি নিজেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। শুরু থেকেই ভারতেশ্বরী হোমসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন তিনি। ১৯৪৮ সালে মির্জাপুরে বিপুল উৎসাহ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সৌখিন নাট্যসংঘ ও মঞ্চ। এমন আধুনিক মঞ্চ তখন পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায়ও ছিলো না। তিনি নিজেও অভিনয় করতেন।

১৯৭১ সালে ৭ মে রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে ধরে নেওয়ার পর থেকেই শোকে শয্যাশায়ী হন তার স্ত্রী কিরণবালা দেবী। শেষ জীবনে তিনি নির্বাক হয়ে যান। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পর ১৯৮৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন তিনি।

২০১৯ সালে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা হত্যা মামলার রায় হয়। এ রায়ে খুনী ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর দোসর মওলানা ওয়াদুদের ছেলে মো. মাহবুবুর রহমানকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলাকে ঘিরে রণদা সাহার পরিবার এবং দেশবাসী বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘদিন। মামলার রায়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হয়। চাঞ্চল্যকর রণদা হত্যা মামলার রায়ে রণদা পরিবার এবং তার শুভাকাঙ্খী, এলাকাবাসী দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ভারতেশ্বরী হোমসের প্রাক্তন ছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার হত্যাকারী মওলানা ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই স্থানীয় জনগণের হাতে প্রকাশ্যে নিহত হন। তার এক ছেলে রাজাকার মান্নান অস্বাভাবিকভাবে মারা যায়। অপর রাজাকার ছেলে মাহবুব যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগেই জেলে মারা যায়।

কে এই মান্নান-মাহবুব:

’৭১ এর ঘাতক মওলানা ওয়াদুদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলে মান্নান আর মেঝ ছেলে মাহবুবুর রহমান। এলাকায় মাহবুব, মইবা নামে পরিচিত ছিল। ছোটবেলা থেকেই দুই ভাই বখাটে ছিলো। মাহবুবকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে দেখা গেছে। তাদের মায়ের গ্রাম বাইমহাটির মানুষ দুই ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকতো। কখন কার বাড়ি থেকে কি চুরি করে নিয়ে যায়, তা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হতো। এক পর্যায়ে তারা হাটে-বাজারে, বাসের যাত্রীদের পকেট কাটা শুরু করে। বিশেষ করে বড় ভাই মান্নান এ বিষয়ে খুবই পটু ছিল। সে সময় শোনা যেতো পকেট কাটার জন্য সে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়াও খাটতো। বেশ কয়েক বার ধরা পড়ে গণধোলাইয়েরও শিকার হন তারা। অনেক বার জেলও খেটেছেন।

’৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে মওলানা ওয়াদুদ এলাকায় শান্তি রক্ষায় চেষ্টা করেছে। কিছুদিন যেতেই তিনি স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় শান্তি কমিটি। এর পাশাপাশি রাজাকার বাহিনী গঠন করেন এবং নিরীহ মানুষদের সম্পদ লুন্ঠন শুরু করেন। স্থানীয় শীর্ষ ব্যবসায়ী রাখাল সাহাকে হত্যা করে তার বিশাল দোকান দখল করে সেখানে তার দরবার স্থাপন করেন। পেছনেই ছিল টর্চার সেল। নিজে অস্ত্র সঙ্গে রাখতেন সেই সঙ্গে প্রধান বডিগার্ড হেদায়েতউল্লার নেতৃত্বে  ৮/১০ জন বডিগার্ডও থাকতো। তার দুই ছেলেও সশস্ত্র এবং বডিগার্ড নিয়ে ঘুরতো। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে স্থানীয় জনতা মওলানা ওয়াদুদকে তার বাড়ি থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে হত্যা করে তার লাশ লৌহজং নদীতে ফেলে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুইভাই জেলে ছিলো। পরে তারা সাধারণ ক্ষমায় ছাড়া পায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক বাহিনী মাঠে নামে। সেসময় মেজর খালেক নামে এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সামরিক কর্মকর্তা পাকিস্তানে ছিলেন। মির্জাপুর এক সময় মুসলিম লীগ অধ্যুষিত এলাকা ছিল। এখানে ’৬৬ সালের পর প্রথমে ছাত্রলীগ এবং পরে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। ’৭০ এর নির্বাচনের কাজ পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের কোন অফিস যখন কেউ দিচ্ছিল না তখন ফজলুর রহমান খান ফারুক (বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি) প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। তার অনুরোধে পোস্টকামুরী গ্রামের মাজম আলী তার বাড়ি আওয়ামী লীগের অফিস করার জন্য ছেড়ে দেন। মওলানা ওয়াদুদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা ছিলো। তবে ’৭১ ওয়াদুদের ভূমিকার প্রতিবাদ করায় তাকে মির্জাপুর বাস স্টেশনে কুমুদিনী হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে কপালে গুলি করে হত্যা করা হয়। শোনা যায় মরার আগে পানি পান করতে চাইলে তার মুখে প্রশ্রাব করেছিল ঘাতক ওয়াদুদ।

যুদ্ধ চলাকালে অন্যান্যদের সঙ্গে ভাইয়ের নির্মম হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিলেন শহীদ মাজম আলীর দুই ভাই ইউসুফ আলী ও আবুল কাশেম কাচ্চেদ। মান্নান ও মাহবুব দুই ভাই ’৭৫ পরবর্তী সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে ইউসুফ আলীকে হত্যা করে পিতৃহত্যার বদলা নেয়। সে ঘটনার পর শোনা যায় নিরাপত্তা নিতেই মান্নান জেলে গিয়েছিলেন। জেল থেকে বের হয়ে নানা ধরনের নেশায় জড়িয়ে পড়ে ভগ্নদশায় ডুবে এক পর্যায়ে তার মৃত্যু ঘটে। বেঁচে থাকে ছোটভাই মাহবুব ওরফে মইবা। মূলত সে ছিলো জামায়াতপন্থি । তবে সবসময় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতেন। জাগোদল, জাপা, বিএনপি সব দলেই তাকে দেখা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একাধিকবার। প্রতিবারই জামানত হারিয়েছেন। কোন চাকরি বা ব্যবসা না করেও কিভাবে শানশওকতে  জীবন যাপন করতেন- সেটা এখনো মির্জাপুরবাসীর কাছে রহস্য।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল রণদা হত্যার মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে ওই বছরের নভেম্বরে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। তার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমম্বয়ক সানাউল হক।

হান্নান খান তখন বলেছিলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় হামলা চালায়। তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল, মতলব ও দারোয়ানসহ ৭ জনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন আসামি মাহবুব।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রসিকিউশনের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর ২৮ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এক বছরের বেশি সময় শুনানির পর ২৪ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

আসামি মাহবুবুর রহমানের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, ‘কেবল আরপি সাহা এবং তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যা করাই আসামিদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো না, আরপি সাহার জনক্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, তার নেতৃত্ব, প্রভাব, গ্রহণযোগ্যতাকে সমূলে ধ্বংস ও হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করাও ছিল তাদের উদ্দেশ্য।’

‘সুতরাং মানব হিতৈষী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া, তাদের হত্যা করা এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে উদ্দেশ্যমূলক এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা-গণহত্যা পরিচালনা করার যে অপরাধগুলো আসামি করেছে সে অপরাধগুলোকে সহজভাবে নেওয়ার আদৌ কোনো কারণ নাই।’

কেবল আসমি মাহবুবুর রহমানই নন, তার বড় ভাই মান্নান, বাবা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা ওয়াদুদ সে সময় পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় রায়ে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত কয়েদি রাজাকার মাহবুবুর রহমানের মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর শুক্রবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে।

আরপি সাহার মৃত্যুর পর কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তার ছোট কন্যা জয়াপতি। ভাইয়ের একমাত্র ছেলে রাজিব প্রসাদ সাহা বড় হওয়ার পর তার হাতে সংস্থাটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন জয়াপতি। রাজিব প্রসাদের যোগ্য নেতৃত্বে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যাপ্তি ঘটেছে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে দাদু দানবীর আরপি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, মির্জাপুরে কুমুদিনী মহিলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দেশ-বিদেশ থেকে মেয়েরা এখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ালেখা করছেন।

দিনটি উপলক্ষে আজ কুমুদিনী কল্যান সংস্থা বিশেষ প্রার্থনা সভা, কুমুদিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও দরিদ্রদের মাঝে উন্নত খাবার পরিবেশন, স্মরণসভাসহ মির্জাপুরবাসী নানা কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
 




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago