Categories: Bangladesh News

তারেক রহমানকে সাজা দিতে পিস্তলের ভয় দেখানো হয় বিচারককে


ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ বিচার চলছিল বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত কথিত দুর্নীতি মামলার। রায় ঘোষণার আগে নানা নাটকীয় ঘটনা। বিচারক মোতাহার হোসেন স্বাভাবিকভাবে মামলার রায় ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বদলে যায় দৃশ্যপট। চারদিক থেকে আসতে থাকে নানা চাপ, হুমকি। তারেক রহমানকে যেকোনোভাবে হোক সাজা দিতে হবে।

সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার রায় যা হওয়ার তাই হবে। বিচারক প্রথমে এমন মনোভাব প্রকাশ করলে তার ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (পরে আইন সচিব হন) আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল সরাসরি যোগাযোগ করেন মোতাহার হোসেনের সঙ্গে। চলে আলোচনা।


বিচারকের মনোভাব দেখে ভয় দেখানোর কৌশল নেন দুলাল। ধানমণ্ডিতে উচ্চ আদালতের এক বিচারপতির বাসায় ডাকা হয় মোতাহার হোসেনকে। সেখানে উপস্থিত হন জহিরুল হক দুলাল। সঙ্গে কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কয়েকজন কোমরে পিস্তল গুঁজে সেখানে প্রবেশ করেন। বিচারক মোতাহার হোসেনকে বলা হয়, তারেক রহমানকে যেকোনো মূল্যে সাজা দিতে হবে।

বিচারক তখন জানান, মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই সাজা দেয়ার মতো। এ মামলায় সাজা দেয়া আইনসম্মত হবে না। তখন দুলাল বিচারককে প্রাণনাশের ভয় দেখান। গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেন।

একপর্যায়ে দুলাল বিচারককে বলেন, আপনাকে রায় লিখতে হবে না। আমিই লিখে দেবো। আপনি শুধু পড়বেন। পরে দুলাল রায় লিখে পাঠিয়েছিলেন বিচারকের বাসায়। বিচারক মোতাহার অবশ্য আদালতে জহিরুল হক দুলালের লিখে দেয়া রায় পড়েননি। তিনি নিজের লেখা রায় পড়ে তারেক রহমানকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছিলেন।

রায় ঘোষণার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন বিচারক মোতাহার। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার এক মাস আগের এই ঘটনা উলটপালট করে দেয় তার সবকিছু। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর আদালতে ফিরে আসলেও বুঝতে পারেন তাকে শায়েস্তা করার নানা আয়োজন চলছে। পরে নিজের অফিস গুছিয়ে অবসর নেয়ার আগের দিন প্রিয় কর্মস্থল ছাড়েন। এক ছেলেকে নিয়ে চলে যান মালয়েশিয়া। এরপর অনেকটা ভবঘুরের মতো সময় কাটিয়েছেন।

গোয়েন্দারা পিছু নেয়ায় একস্থানে বেশি দিন থাকতে পারেননি। থাকতে পারেননি এক দেশেও। কয়েক দেশ ঘুরে ২০২২ সালে থিতু হন ফিনল্যান্ডে। ছেলেকে নিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরার চিন্তা করছেন বিচারক মোতাহার হোসেন।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি জানিয়েছেন, রায় দেয়ার আগে-পরের দুর্বিষহ পরিস্থিতি। দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই চুয়াডাঙ্গায় দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় দিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন। পরে ৪১দিন আত্মগোপনে থাকতে হয় তাকে। চার বছর আগে বাংলাদেশে তার স্ত্রী মারা যান। তাকেও দেখার সুযোগ হয়নি। দুই ছেলেকে নিয়ে মোতাহার হোসেনের স্ত্রী দেশে ছিলেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদেরকেও এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরতে হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৭ই নভেম্বর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা বিদেশে অর্থপাচার সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক মোতাহার। কোনও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে তিনি তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন।

অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের বিপক্ষে করা অভিযোগের কোনো তথ্য-প্রমাণ ছিল না উল্লেখ করে মোতাহার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়। সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে তাকে অভিযুক্ত করে এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরে মামলার নথি বিশদভাবে পর্যালোচনা করি। দেখি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো পর্যাপ্ত উপাদানও নেই। এরপরও যেহেতু চার্জ গঠিত হয়ে গিয়েছে এই কারণে আমাকে বিচার করতে হবে। আমি বিচার কন্টিনিউ করি। সাক্ষ্য গ্রহণ করি। আসামির বিরুদ্ধে তো কোনও এভিডেন্স নেই। এভিডেন্স হলো জিরো। একজন সাক্ষীও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে তার নাম উচ্চারণ করেনি। কোনও অভিযোগ দেয়নি। সেই মামলায় কী করে একজন আসামিকে সাজা দেয়া যায়।

মোতাহার হোসেন বলেন, দোষ না থাকার পরও বিদেশে অর্থ পাচার মামলার রায়ে যেনো তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয় সেজন্য সাবেক আইন সচিব দুলাল তাকে একের পর এক চাপ দিতে থাকেন। (জহিরুল হক দুলাল তখন আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন, আইন সচিব হন ২০১৫ সালে, অবসরের পর ২০২০ সালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান)। দফায় দফায় আমাকে, তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দিয়ে চাপ দিতে থাকেন। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে আমার পেছনে লেলিয়ে দেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধানও আমাকে নানাভাবে চাপ দেন। তারেক রহমানকে শাস্তি দেয়ার জন্য বলেন। আমি তাদের সবাইকে বলেছি, আমি আইন পর্যালোচনা করে আইনানুসারে বিচার করব। ন্যায়বিচার হবে।


তিনি বলেন, রায় ঘোষণার আগের শুক্রবারে আমার বাসায় গোয়েন্দা সদস্যরা আসলো। তারা আমাকে নিয়ে গেলেন ধানমণ্ডিতে তৎকালীন বিচারপতি আশিস রঞ্জন সাহেবের বাসায়। দুই-চার মিনিট পরেই দেখি জহিরুল হক দুলাল এবং ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশিস রঞ্জনের বাসায় আসেন। ঢুকে তাদের কেউ কেউ পিস্তল বের করলো। পিস্তল বের করে গুলি লোড করছে। নাড়াচারা করছে। বলছে একবার ট্রিগার চাপলে এই পিস্তল দিয়ে ৮টি গুলি বের হয়। এসব করার কারণ ছিল আমাকে ভয় দেখানো। আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি এবং বিচারপতিও ভয় পেয়ে যান। দুলাল বার বার বলতে থাকেন, মামলায় শাস্তি না দিলে, এই মামলায় জেল না দিলে, তারেক রহমানকে খালাস দিলে কেউ নিস্তার পাবেন না। তখন আমি বিচারপতি আশিস রঞ্জন সাহেবকে বলি, স্যার এই মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে- নো এভিডেন্স। একজন সাক্ষীও, সরকারপক্ষ ছাড়া, তার বিরুদ্ধে নামও বলে নাই, তার নামই উচ্চারণ করে না, কোনও অভিযোগ দেয়া তো দূরের কথা। তার নামই নাই এভিডেন্সে। আমি কীভাবে পানিশমেন্ট দেবো? আমি বললাম, আমি এ রায় লিখতে পারবো না। তখন দুলাল জাস্টিস আশিস রঞ্জন সাহেবকে বললেন, স্যার কী করা যায়? স্যার আপনি রায় লিখে দেন, আমি দেখবো। জাস্টিস সাহেব বললেন, না। আমি রায় লিখতে পারব না। মোতাহার সাহেবের রায় মোতাহার সাহেব লিখবে।

তখন জহিরুল হক দুলাল আমাকে বাসায় বসে রায় লিখতে বলেন। আমি বাসায় বসেই রায় লিখি। তারেক রহমানকে খালাস দেয়ার রায় লিখি। রোববার সকালে জহিরুল হক গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের মাধ্যমে আমার কাছে রায় লিখে পাঠান। রায়টাসহ গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন আমাকে বাসা থেকে কোর্টে নিয়ে যায়। কৌশলে আমি আমার লেখা রায়টাও সঙ্গে নিই। এজলাসে উঠে যা সত্য ও সঠিক সেই রায়ই ঘোষণা করি। এরপরই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, নিরাপত্তার উদ্বেগ নিয়ে আমাকে আত্মগোপনে যেতে হয়।একপর্যায়ে আমি আবার কোর্টে আসি। অবসরের ঠিক কয়েকদিন আগে জানতে পারি অবসর নেওয়ার দিনই তারা আমাকে অপহরণ করে গুম করে দিতে পারে। তাদের এই পরিকল্পনা জেনে আমি অবসরের আগের দিনই সব কাগজপত্র সই করে বের হয়ে যাই।

তিনি বলেন, প্রথমে ছেলেকে নিয়ে মালয়েশিয়া যাই। সেখানেও আমার পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। এক জায়গায় বেশি দিন থাকতে পারিনি। সেখান থেকে নেপালে গিয়ে থেকেছি কিছুদিন। সেখানেও গোয়েন্দারা যায়। ২০২২ সালে ছেলে আরিফ হাসান রাহুলকে নিয়ে ফিনল্যান্ডে আশ্রয়ের অনুমতি পাই। ওদিকে দেশে আমার স্ত্রী ও দুই ছেলে ছিল। তারাও দুর্বিষহ সময় পার করেছে। ছেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। তারা এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরে বেরিয়েছে। চার বছর আগে স্ত্রী মারা যান। আমরা যেতে পারিনি। এখন দুই ছেলে নাটোরে থাকে।

রায় দেয়া নিয়ে আগে এমন কোনও ঘটনা ঘটেছিল কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় একটি রায় দেয়ার পর আমাকে পালাতে হয়েছিল। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের আমি শাস্তি দিয়েছিলাম উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে। তারপর আদালতে হামলা হয়। আমার চেম্বারে গুলি করা হয়। বাধ্য হয়ে আমি আত্মগোপনে যাই। তখন প্রধান বিচারপতিসহ অনেকে আমাকে সাহায্য করেন। আমি আবার আদালতে ফিরতে পারি।

মোতাহার বলেন, আমার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হলো। আমার সম্পদের তথ্য চাইলো। ছেলের মাধ্যমে আমি তাদের জানালাম দেশে-বিদেশে আমার কোথাও প্লট বা ফ্ল্যাট নেই। পৈতৃক জমি আছে। বাগান আছে। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরির্তনের পর অবশ্য দুদক আমার বিরুদ্ধে করা মামলা এবং অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

এখন দেশে ফিরবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দেশে দ্রুতই ফিরতে চাই। আমার জীবন থেকে অনেক কিছু চলে গেছে। আমার পরিবার ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। দেশে ফিরে আসলে কিছুটা শান্তি পাবো।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে বাংলাদেশ স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এখন সময় বিচার বিভাগকে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত করা যাতে সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago