কোটা সংস্কার ও ছাত্র নিহতের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এই কর্মসূচি পালন করার সময় গত বৃহস্পতি (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) মিরপুরে জ্বালাও-পোড়াও ও আহত-নিহতসহ ঘটে নানা ঘটনা। দুই দিনের এই ঘটনায় মিরপুরে বিআরটিএর ভবনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা এবং মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এ ছাড়া মিরপুর ১০-এ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসের সামনে থাকা প্রায় ২৯টি বর্জ্য পরিষ্কারের গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আন্দোলকারী, সাধারণ পথচারী, উৎসুক জনতা ও শিশু নিহতের ঘটনাও ঘটে।
১৮ জুলাই: আন্দোলনকারীদের দখলে মিরপুর
কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রথম ১৮ জুলাই সকালে মিরপুর ১০ গোল চত্বরে অবস্থান নেন আশপাশ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টায় পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ ও আওয়ামী কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পরে। পুলিশ সারা দিনই আন্দোলনকারীদের দমনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
পরে আন্দোলনকারীরা মিরপুর ১০, ১১ ও ১৩ কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া দখলে রাখে। এ ছাড়া মিরপুর কালশী থেকে ইসিবি ও মাটিকাটায় অবস্থান নেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এদিকে বিকালে বিক্ষুব্ধ কিছু আন্দোলনকারী মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরে থাকা পুলিশ বক্সটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে আগুন বক্সের ওপরে থাকা ফুটওভার ব্রিজেও ছড়িয়ে যায়। এতে মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। পরে জননিরাপত্তার স্বার্থে বিকাল সাড়ে ৫টায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোনও সুবিধা করতে পারেননি। রাত ১১টার পর পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দখলে থাকে রাজপথ।
এদিকে রাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আন্দোলনকারীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে জানান সড়কে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে ধীরে ধীরে সড়ক ছাড়েন তারা।
১৯ জুলাই: মিরপুর দেখেছে ভয়াবহতা
১৯ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকালে কোনও আন্দোলনকারী দেখা যায়নি। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন এবং চিহ্নিত কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বাইক নিয়ে শোডাউন দেয় এবং বন্দুক নিয়ে ওপেন ফায়ার করেন।
তবে জুমার নামাজের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। দুপুর ২টার পর থেকেই কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে মিরপুর ১০ এলাকায় জড়ো হতে থাকে। তবে জড়ো হতে থাকা আন্দোলনকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম দেখা যায়। অধিকাংশই স্থানীয় যুবক ও সাধারণ মানুষ ছিল। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একত্রে কোনও দল আসতে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীরা নিজ উদ্যোগে পরিচিত বন্ধুদের নিয়েই উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাখেন।
এ সময় আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এগিয়ে এলে আবারও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের পক্ষ থেকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। আন্দোলনকারীরা স্থানীয় হওয়ায় বিভিন্ন গলি দিয়ে বের হয়ে পুলিশকে ঘেরাও করে ফেলে। পরে পুলিশ ধাওয়া খেয়ে মিরপুর ১০ থেকে উত্তরে মিরপুর ১১-এর দিকে, পশ্চিমে মিরপুর ২-এর দিকে, পূর্বে মিরপুর ১৩-এর দিকে ও দক্ষিণে শেওড়াপাড়ার দিকে সরে যায়। এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষ আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাত পর্যন্ত ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয় দুই পক্ষ থেকে। এটি নিশ্চিত করেন বিএনপির স্থানীয় একাধিক কর্মী।
এ ছাড়া বিক্ষুব্ধ কিছু আন্দোলনকারী মিরপুর ১০ ও কাজিপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতর ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। মেট্রোরেল স্টেশনের পাশেই উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে থাকা বর্জ্য অপসারণ করার ২৯টি বড় কনটেইনার ও কম্পেক্টর পুড়িয়ে দেয়, ১৪টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এদিকে বিআরটিএর ফটকে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, আন্দোলনকারীদের মাঝ থেকে স্থানীয় অছাত্রের একটি দল হঠাৎ সিটি করপোরেশন অফিসের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে গাড়িতে আগুন দেয় এবং মেট্রোরেলের গেট ভেঙে ওপরে উঠে আশপাশ বিহারি ক্যাম্পের ছেলেপেলে, তাদের সঙ্গে একটি গ্রুপ গিয়ে মেট্রোরেলের ভেতরে ভাঙচুর চালায় ও লুটপাট করার চেষ্টা করে।
এ অবস্থায় পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে গুলি টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। এতে গুলিবিদ্ধ হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে এলে গুলির শব্দ শোনা যায়। আশপাশের হাসপাতালগুলোয় একের পর এক গুলিবিদ্ধ মানুষকে নিয়ে আসতে দেখা যায়।
হতাহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা অলিগলির ভেতর থেকে প্রধান সড়কে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। এতে আন্দোলনকারীসহ সাধারণ মানুষ ও শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুজন কর্মীও গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সুযোগে মাঠে নেমেছে বিএনপি
১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর যখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে নিজেরা অবস্থান নিয়ে রাখেন, তখন মিরপুর ৬ ও কাজীপাড়ায় বিএনপির কর্মীদের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়। সংঘাতে অংশ নেওয়া একাধিক বিএনপি কর্মী জানান, মিরপুর ৬ চলন্তিকার মোড়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তাদের মাঝ থেকেও আনুমানিক চার জন নিহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান বিএনপির কর্মীরা।
বিএনপির কর্মীরা আরও জানান, জুমার নামাজের পর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাত শেষে তাদের একটি অংশ ফার্মগেট চলে আসে। আর ফার্মগেটের অংশটি মিরপুরে আসে।
দুই হাসপাতালে ১৪ লাশ, বাকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুপ
১৯ জুলাই বিকালের পর মিরপুরের পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটলে এই প্রতিবেদক মিরপুর ১০-এর ফায়ার সার্ভসের পশ্চিম পাশে থাকা ডা. আজমল হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। এ সময় কেবল গুলির শব্দই শোনা যাচ্ছিলো এবং একজনের পর একজন গুলিবিদ্ধ মানুষকে হাসপাতালে আনা হচ্ছিলো। এ সময় গুলিবিদ্ধদের মধ্যে অনেককে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। কেউ কেউ ছটফট করতে করতে মারা গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি শিশুও ছিল।
রাত ১১টার দিকে গুলির শব্দ থামলে এই প্রতিবেদক পরপর দুই রোডে অবস্থিত ডা. আজমল ও আলোক হাসপাতালে গেলে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৪ জনের লাশের তালিকা দেখতে পায়। উপস্থিত ১২টি লাশ হাসপাতালে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া এই দুই হাসপাতাল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয় প্রায় ১০ জনকে। ডা. আজমল ও আলোক হাসপাতালে ঘটনা সময় জরুরি বিভাগে উপস্থিত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অধিকাংশ ব্যক্তি সরাসরি গুলিবদ্ধ হয়েছে। কারও বুকে, কারও চোখে আবার কারও পেটে গুলি লেগে মারা গিয়েছে।
পরের দিন ২০ জুলাই ডা. আজমল ও আলোক হাসপাতাল ছাড়া মিরপুরের অন্য হাসপাতালগুলোয় আগের দিনের ঘটনায় হতাহত মানু্ষের বিষয়ে জানতে যান এই প্রতিবেদক। তবে হাসপাতালগুলো থেকে কোনও ধরনের তথ্য দিতে অপারগতা জানানো হয়। হাসপাতালগুলো বলেছে, ‘এসেছিল, আমরা অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
তবে হাসপাতালগুলোর বিভিন্ন স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে যেসব তথ্য জানান, তাতে প্রতি হাসপাতালে দুই-তিনটি গুলিবিদ্ধ মৃত্যু দেহ এসেছিল, যা কর্তৃপক্ষ রাখেনি। ওই সব হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আল হেলাল হাসপাতাল, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল।
২০ জুলাই যেভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলো
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মিরপুরের উদ্ভূত এই বৈরী পরিস্থিতি সামাল দিতেই শুক্রবার ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কারফিউ শুরুর পর শনিবার ২০ জুলাই সকাল থেকেই সেনাবাহিনী অবস্থান নেয় রাজপথে। সারা দেশসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সতর্ক অবস্থায় থাকে সেনা সদস্যরা। মিরপুর ১০ নম্বর রাত থেকেই সাঁজোয়া যান নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন সেনা সদস্যরা। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর গাড়িতে টহলরত দেখা যায় তাদের। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে এদিন সকাল থেকেই মিরপুর ১০ নম্বরে দেখা যায়নি আন্দোলনকারীদের। তবে কারফিউ চলামান অবস্থায় বিকালের দিকে আশপাশ এলাকার প্রায় শ-খানেক সাধারণ মানুষ জড়ো হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত সেনাবাহিনীর দল মিরপুর ১০ থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে দেয়। পরে উপস্থিত সাধারণ মানুষদের শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিতে বলেন।
এ সময় উপস্থিত জনতা মূল সড়কে না উঠলেও সড়কের দুই পাশ থেকে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তারা আরও স্লোগান দিতে থাকেন, ‘এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনী সরকার’। একসময় তারা মূল সড়কে চলে আসেন। তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের মূল সড়ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। তারপর আন্দোলনকারীরা মূল সড়ক ছেড়ে গলির ভেতর অবস্থান নেয়। এভাবেই চলতে থাকে পুরো বিকাল।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিরপুর ১০ নম্বর থেকে অরিজিনাল ১০ নম্বরে ও মিরপুর ৬ নম্বরের মূল সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় টহলরত সেনা সদস্যরা আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বলতে থাকে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সেনা সদস্যদের কথা কানে না তুলেই মূল সড়কে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় রাস্তায় থাকা সড়কবাতিও নিভে যায়। তখন আন্দোলনকারীরা ছুটতে থাকে বিভিন্ন গলিতে। তারপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিছুটা কঠোর অবস্থানে গেলে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর ও আশপাশের এলাকা আন্দোলনকারী শূন্য হয়ে পড়ে। সেদিন আর কোনও আন্দোলনকারীর দেখা পাওয়া যায়নি এই এলাকায়। কোনও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি।
অরিজিনাল ১০ নম্বর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামাতে অনেক ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়েছে। আর পুলিশ যেভাবে ছাত্রদের মেরেছে, গুলি করেছে সেটা সেনাবাহিনী করছে না। আবার ছাত্রলীগের লোকরাও নামতে পারছে না। এটা খুবই ভালো হয়েছে।
এই এলাকারই আরেক বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, দুই-তিন দিন ধরে মিরপুরের যে অবস্থা হয়েছিল, তা অনেকটাই কমে সেনাবাহিনী আসাতে। শুধু মিরপুরই নয়, সব জায়গার অবস্থাই অনেকটা শান্ত হয়েছে।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…