Categories: Bangladesh News

ছাগলের চামড়া ২ টাকা ফুট, গরুর ১০ টাকা!


ট্যানারি মালিকসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে এবারও চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। গরুর চামড়া ফুটপ্রতি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী চামড়ার দাম না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন দিনাজপুরের বিক্রেতারা। চামড়ার মৌসুমি বিক্রেতাদেরও অভিযোগ একই। কয়েকজন বলছেন, ২ টাকা ফুট বিক্রি হচ্ছে ছাগলের চামড়া, আর ১০ থেকে ১২ টাকা ফুট গরুর চামড়া। যদিও চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দাম চামড়া কিনছেন তারা।

কাঁচা চামড়ার দাম না থাকলে চামড়াজাত পণ্যের মূল্য দিন দিন বাড়ছে। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। চামড়া আড়তদাররা বলছেন, এটা সম্পূর্ণ সরকার ও বায়ারদের বিষয়।

কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অপরদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। অর্থাৎ এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ ৫ টাকা, আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৭ টাকা বাড়ানো হয়। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ফুটপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দিনাজপুর জেলার রামনগর চামড়ার বাজারে জেলার ১৩টি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন এলাকার চামড়ার বেচাকেনা হয়। বলা হয়ে থাকে, এই চামড়ার আড়তটি উত্তরের এই জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। বছরের প্রতিদিনই এখানে চামড়ার বেচাকেনা হয়। তবে কোরবানির ঈদের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিনে সবচেয়ে বেশি চামড়া আমদানি হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে বাজারে গরুর চামড়ার চাহিদা থাকলেও আগ্রহ নেই ছাগলের চামড়ায়। চামড়া আমদানি হয়েছে, বেচাকেনাও হচ্ছে। তবে দামে খুশি নন বিক্রেতারা। একই কথা বলছেন চামড়ার মৌসুমি বিক্রেতারাও।

সোমবার (১৭ ‍জুন) বিকালে ও মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে চামড়ার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চামড়া নিয়ে আসছেন বিক্রেতা। সেই সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চামড়া কিনে সেগুলো বাজারে বিক্রি করতে আসছেন মৌসুমি বিক্রেতারাও। বাজারে আসার পর সেগুলোর কেনার জন্য আসছেন ব্যবসায়ীরাও। তবে দাম একেবারেই কম।

এই বছরে বাজারে ষাঁড়ের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। আর গাই গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। বড় ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও ছোট ছাগলের চামড়ার আগ্রহ নেই কারও। এই বাজারে কোনও ফুট হিসেবে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না।

৯০ থেকে ১ লাখ টাকার গরুর চামড়া পরিমাপ হয় প্রায় ২০ ফুট। অর্থাৎ এই পরিমাপের চামড়ার মূল্য হওয়ার কথা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। প্রতি চামড়ায় শ্রমিক খরচসহ আনুসাঙ্গিক খরচ আরও ১০০ টাকা বাদ দিলে সেই চামড়ার ক্রয়মূল্য হওয়ার কথা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু সেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

তবে বাজারে চামড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ বিক্রেতারা। চামড়ার দাম না পেলেও চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের দাম বেশি, যা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা। এই চামড়ার টাকার হকদার গরিব ও এতিমদের। ফলে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বড়ইল গ্রামের ইসাহাক আলী আসেন চামড়া বিক্রি করতে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আগে চামড়া বিক্রি হতো ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, সেই চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এই টাকাটা আমরা গরিব-দুখি ও এতিমদের দিয়ে দিতাম। একেকটি গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

শহরের শেরশাহ মোড় এলাকার আশরাফ আলী বলেন, সরকারকে চামড়ার দাম আরও বাড়াতে হবে। খাসির চামড়ার কোনও মূল্য নাই। আমরা আগে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত খাসির চামড়া বিক্রি করেছি।

চামড়া নিয়ে আসা আব্দুস সামাদ বলেন, বর্তমান চামড়ার অবস্থা খুবই খারাপ, দাম নাই। কয়েক বছর ধরে এটা চলছে। টাকাটা পরিমাণে বেশি হলে গরিবরা পেতো। কাজেই সরকারের উচিত এই চামড়া যাতে করে বিদেশে রফতানি করে ভালো দাম পাওয়া যায়।

চামড়া বিক্রি করতে আসা নয়ন ইসলাম বলেন, এগুলো সরকারকে দেখতে হবে। আমরা একটি কোমড়ের বেল্ট কিনতাম ২০০, ২৫০ টাকা দিয়ে, কিন্তু এখন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। চামড়ার জুতা বা সেন্ডেল নিম্নে ২০০০ টাকা। অথচ চামড়ার কোনও মূল্য নাই। ৩০০, ৪০০, ৫০০ টাকা মাত্র। অথচ এই টাকা দিয়ে গরিব মানুষ উপকৃত হতো। কিন্তু তারা এখন বঞ্চিত হচ্ছে, সরকারের এগুলো দেখা উচিত। 

৩০ বছর ধরে এই বাজারে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায় করেন আবু বকর সিদ্দিক। কথা হলেন তিনি বলেন, দিন যাচ্ছে আর চামড়ার বাজার খারাপ হচ্ছে। সিন্ডিকেট করছেন চামড়ার ব্যবসায়ীরা। এদিকে সরকারকে নজর দেওয়া উচিত। এটা দেশের সম্পদ, ইচ্ছা করে সরকার অবহেলা করছে। এই চামড়া আমরা আগে ২৪০০-২৫০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা করেছি। গত ৩ বছর থেকে চামড়ার দাম নাই, আড়তদাররা চামড়া কিনছে না। আমরা গৃহস্থের কাছ থেকে কিনে আড়তদারদের বিক্রি করতে পারছি না।

মৌসুমী ব্যবসায়ী কুরবান আলী বলেন, আমরা গাই কিনছি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। আড়িয়া বা ষাঁড় কিনছি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আমাদের ট্যানারি থেকে যেমন রেট দিয়েছে, এর ওপরে আমরা কিনতে পারছি না।

শরিফুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুরে চামড়ার বাজার ভালো না। ২ টাকা ফুট ছাগলের চামড়া, আর ১০ থেকে ১২ টাকা ফুট গরুর চামড়া। এই দামেই আমরা বেচাকেনা করছি।

মৌসুমি বিক্রেতা মো. দুলাল বলেন, আমরা বাইরে থেকে চামড়া কিনে এই বাজারে নিয়ে এসেছি। কিন্তু দাম পাচ্ছি না, গরুর চামড়ার দাম বলছে না। ছাগলের চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে। কোন দেশে আমরা বসবাস করছি? কয়েক বছর ধরে চামড়ার কোনও দাম নাই। আমরা মৌসুমি বিক্রেতারা, কিনে এনে এখন দাম বলছে না। একেকটি বড় বড় চামড়া কিনেছি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে। কিন্তু এখানে কোনও দাম বলছে না।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রাম থেকে চামড়া নিয়েছি এক পিস, দুই পিস করে। গ্রামে কিনেছি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে। এখানে বিক্রি করছি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে। সীমিত লাভ করছি, প্রতি পিস চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ৪০টি চামড়া নিয়ে এখানে এসেছি। একেকটির দাম বলছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে। আমাদের অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে। এই অবস্থায় কী করবো বুঝতে পারছি না।

তবে চামড়া ব্যবসায়ী ও নেতাদের মতে, বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে চামড়া। লবণ ও শ্রমিক খরচে লোকসান হচ্ছে। তারা বলছেন, শুধু চীন নয়, অন্য দেশের সঙ্গেও চামড়ার চুক্তি করতে হবে। তাহলেই ফিরবে চামড়ার স্বর্ণ যুগ।

চামড়ার আড়তদার ব্যবসায়ী রায়হান বলেন, গত বছরের তুলনায় চামড়ার দাম বেশি। সরকার এবারে চামড়ার প্রতি নজর দিয়েছে। আমরা বেশি দামে চামড়া কিনছি, কিন্তু বেশি দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবো কি না সেই চিন্তায় রয়েছি। কারণ লবণের দাম অনেক বেশি। সরকার যেন লবণজাত শিল্প চামড়ার দাম বেশি করে, তাহলে এই শিল্পটি টিকে যাবে। আমরা ভর্তুকি মূল্যে লবণ পাইনি, কিছু মাদ্রাসাকে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চড়া দামেই লবণ কিনতে হয়েছে। ৭০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণ কিনতে হয়েছে ১১২৫ টাকায়। ঢাকার ট্যানারির গত বছরের টাকা এখনও পাইনি, এই বছরের টাকা পাবো কি না সেটা নিয়েও চিন্তায় রয়েছি। কিন্তু যেহেতু ব্যবসায়ী, ব্যবসা করার জন্য চামড়া কিনছি।

দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, চামড়ার দাম কম, কিন্তু চামড়ার পণ্যের দাম বেশি। এটার কারণ আমরা বলতে পারবো না। বায়ারদের সঙ্গে যারা ব্যবসা করে তারাই এটা নিয়ন্ত্রণ করে। এটা সম্পূর্ণভাবে সরকার ও বায়ারদের সঙ্গে যারা ব্যবসা করে তারাই এটা নির্ধারণ করে। আমরা কাঁচা চামড়া কিনি, লবণজাত করি আর ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করি। আমরা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বলে আসছি যে সরকারকে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই চামড়াই আমরা বিক্রি করেছি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। অথচ এই চামড়াই এখন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। মানে তিন ভাগের দুই ভাগ নাই।

দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি জুলফিকার আলী স্বপন বলেন, সরকারের দামের চেয়েও প্রতি ফুটে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে চামড়া কিনছি। কর্মচারী ও লবণ খরচের জন্য চামড়ায় আমরা মার খাচ্ছি। চামড়ার দাম আছে, কিন্তু প্রকারভেদে। যদি গাইয়ের চামড়া হয় তাহলে দাম কম, আবার ষাঁড়ের চামড়ার দাম বেশি। আমি একটি চামড়া ১১০০ টাকা দিয়েও কিনেছি। চামড়ার আগের মূল্য ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু চীনের সঙ্গে চুক্তি করলে হবে না, আরও ৩-৪টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। যদি আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়ে, চুক্তির এ বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আবার আগের সময় ফিরে আসবে। বাংলাদেশে চামড়ার দাম কম, ইন্ডিয়ায় চামড়ার দাম বেশি। যদি বর্ডার কড়াকড়ি না করে তাহলে বাংলাদেশের সম্পদ ইন্ডিয়ায় চলে যাবে।


👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago