Categories: Bangladesh News

ছয় দিনে যা ঘটলো


গত ১৮ জুলাই রাত থেকে ২৩ জুলাই দিনগত রাত পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এখনও ইন্টারনেট সংযোগ আসেনি সব জায়গায়। এই পরিস্থিতিতে সংবাদ প্রচার বিঘ্নিত হয় ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে, যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলা ট্রিবিউনও। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনের প্রধান ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো–    

১৮ জুলাই

কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের কমপ্লিট শাটডাউন শুরু হয় এদিন। এর আগে ১৭ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় তারা। কর্মসূচি চলাকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। অবরোধকারীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশ প্রায় অচল ছিল। মহাখালীতে সেতু ভবন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবন, দুর্যোগ ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়। শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়। দুই দফা আগুন দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনে। এর জেরে অন্তত ১২ ঘণ্টা বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সেবা বন্ধ: এদিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। এর আগের দিন বুধবার (১৭ জুলাই) বন্ধ করা হয় দ্রুতগতির ফোরজি ইন্টারনেট সেবা। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সহিংসতায় সরকারের ডাটা সেন্টার পুড়ে যাওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে, তারা মেরামত করে দ্রুত লাইন চালুর চেষ্টা করছে।

১৯ জুলাই

১৪ দলের বৈঠক: সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে চলমান আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। পরে ১৪ দলের নেতারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ১৪ দলের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারির পরামর্শ দেওয়া হয়।

কারফিউ ও সেনা মোতায়েন: শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের সূত্রে ধরে দেশের চলমান অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিন রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরিক ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত আসে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার দিরাগত রাত ১২টা থেকে প্রথম দফায় শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ ছিল। এরপর দুই ঘণ্টা বিরতির পর বেলা ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে কারফিউ চলে। একই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দুটি মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

কারাগার থেকে ৮২৬ কয়েদির পলায়ন: এ দিন নরসিংদীর জেলা কারাগারের গেট ভেঙে ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। লুট করা হয় অস্ত্র। পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের মধ্যে আনসরুল্লাহ বাংলা টিমের সাত সদস্য ও জেএমবি’র দুই নারী সদস্যও রয়েছে। এসময় ৮৫টি অস্ত্র ও ১ হাজার ৫০টি গুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলেও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

৮ দফা দাবি পেশ: ১৯ জুলাই দিবাগত গভীর রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আট দফা দাবি তুলে ধরেন কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক। একইসঙ্গে তারা জানান, আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। অবশ্য এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ৯ দফা দাবির কথা জানান। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন।

২০ জুলাই

কারফিউ শুরু: সরকারি সিদ্ধান্তে এ দিন দেশজুড়ে কারফিউ দেওয়া হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় শুরু হওয়া কারফিউ এদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিথিল ছিল। কারফিউ চলাকালে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনা মোতায়েন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে।

কারফিউ চলাকালেও এদিন ঢাকার যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুরে সড়ক অবরোধের চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। রাজধানীর বাইরেও কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়।

নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি: এদিন সরকার এক ঘোষণায় ২১ ও ২২ জুলাই দুই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সরকার নির্বাহী আদেশে এ ছুটি ঘোষণা করেছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। পরে অবশ্য সাধারণ ছুটি আরও একদিন বাড়িয়ে ২৩ জুলাইও ছুটির আওতায় আনা হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করে তার পরিবার। তার মা মমতাজ বেগম অভিযোগ করেন, শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় এক বন্ধুর বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নাহিদ জানান, তাকে পূর্বাচলে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনেও অংশ নেন তিনি। 

২১ জুলাই

৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধায় আপিল বিভাগের রায়: সরকার পক্ষের আপিল আবেদনের পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোট বিভাগের রায় বাতিল করেন। একইসঙ্গে আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা/বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধার কোটা কেবল তাদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারের নাতিপুতিরা বিবেচ্য হবেন না। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে আদেশ দেওয়া হয়।

বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ সমন্বয়কের যৌথ বিবৃতি শিরোনামে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়। এতে কমপ্লিট শাটডাউন আরও জোরদারের আহ্বান জানানো হয়।

সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে নির্দেশনা: এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নির্দেশনা দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান, নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও  সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

২২ জুলাই

প্রজ্ঞাপন অনুমোদন প্রধানমন্ত্রীর: সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে (২০তম থেকে নবম গ্রেড) ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পর সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিয়: এ দিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামলা-অগ্নিসন্ত্রাস করেছে মন্তব্য করে ওই মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখনও তারা জ্বালাও-পোলাও আন্দোলনের হুকুম দিয়ে যাচ্ছে। যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, এত সহজে ছাড়া হবে না। শক্ত অ্যাকশন নিয়ে এটা দমন করে পরিবেশটা উন্নত করা হবে।

সরকার বাধ্য হয়ে কারফিউ ও সেনা মোতায়েন করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এটা আমরা চাই না। তারা (ছাত্ররা) যখন সরে এসেছে সেই সময় আমি আর্মি নামিয়েছি। আমি কিন্তু তার আগে আর্মি নামাইনি। আমরা শেষ চেষ্টা করি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে। তারপর আর্মি নামাতে বাধ্য হয়েছি। কারফিউ দিয়েছি। আস্তে আস্তে কারফিউ শিথিল করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

পাঁচ দিন পর নিয়ন্ত্রণে আসে যাত্রাবাড়ী এলাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে একক স্পট হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে  রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণার দিন সন্ধ্যা থেকেই এই এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে এটি চলমান ছিল ২২ জুলাই পর্যন্ত। আদালতের শুনানির আগের দিন ২০ জুলাই সারা দেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন হলেও যাত্রাবাড়ী এলাকায় কারফিউয়ের মধ্যেও সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ এলাকা কারফিউর দ্বিতীয় দিনে ২১ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে সেখানে সেনা ও পুলিশ প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা পরিদর্শনে যান। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ এলাকায় অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে পুলিশ বা হাসপাতাল থেকে কোনও নিশ্চিত সংখ্যা পাওয়া যায়নি।

পুলিশের আহত-নিহতের তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয় বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এছাড়া ১১৭ জন পুলিশ আহত হয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, আহতের মধ্যে ১৩২ জন গুরুতর আহত হন এবং তিন জন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন।

২৩ জুলাই

কোটার প্রজ্ঞাপন জারি: সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। একইসঙ্গে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিয়োগে ৯৩ শতাংশ মেধা, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য নির্ধারণ করা হয়। নতুন এই বিধান নবম থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধার ভিত্তিতে শূন্য আসন পূরণ করা হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু: পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ২৩ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড লাইনের ইন্টারনেট চালু করা হয়। তবে মোবাইলের ইন্টারনেট সেবা তখনও পর্যন্ত চালু হয়নি।


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago