অনেকটাই বিলুপ্তির পথে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাদা বা ধবল গরু। এই গরু মিরকাদিমকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলেছিল। একসময় ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য পুরান ঢাকার ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে থাকতো। তবে দিন দিন সংখ্যা কমতে কমতে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মিরকাদিমের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাদা গরুর খামারিদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। তারা জানালেন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে সাদা গরু। কেন বিলুপ্তির পথে জানতে চাইলে খামারিরা বললেন, মূলত লালন-পালনের খরচ এবং গরু মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবু বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১০-১২ জন খামারি দু’চারটি করে এই জাতের গরু পালন করছেন। ছোট পরিসরে ধরে রেখেছেন বংশপরম্পরার ঐতিহ্য।
সাদা গরুর বৈশিষ্ট্য
চোখের পাপড়ি সাদা, শিং সাদা, নাকের সামনের অংশ সাদা, পায়ের খুর সাদা, লেজের পশম সাদা, আর সারা শরীর তো সাদা আছেই। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে বিক্রি একটি আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়।
ছিল পুরান ঢাকার প্রধান আকর্ষণ
একসময় কোরবানির ঈদের প্রধান আকর্ষণ ছিল এই গরু। বিক্রির জন্য পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের হাটের (গণি মিয়ার হাট) প্রচলন শুরু হয়েছিল শত বছর আগে। মিরকাদিমের দুই শতাধিক খামারি কয়েক হাজার গরু নিয়ে হাটে যেতেন। কিন্তু গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতায় ঐতিহ্য হারিয়েছেন খামারিরা। বর্তমানে খামারির সংখ্যা নেমেছে ১০-১২ জনে। এখন দলবেঁধে রহমতগঞ্জের হাটে যান না তারা। পুরান ঢাকার কেউ কেউ শখের বসে খামারে এসে পছন্দ করে সাদা গরু কিনে নিয়ে যান।
যে জন্য আলাদা
কোরবানির ঈদের জন্য মিরকাদিমের গরুগুলোকে আলাদা করা হতো। খামারিদের নিজস্ব মিলে ভাঙানো খৈল, বুট, খেসারি, গম, চালের গুঁড়া, ভুট্টা ভাঙা, মসুর ডালের ভুসি, কাঁচা ঘাস ও রাব (মিষ্টিগুড়) খেতে দেওয়া হয়। তবে দেওয়া হয় না কোনও ধরনের ইনজেকশন কিংবা মোটাতাজাকরণের ওষুধ। একেবারে প্রাকৃতিকভাবে পালন করা হয়। তাই এই গরুর মাংসে আঁশ কম। একটু নরম ও তেলতেলে হয়। তবে পালনে খরচ বেশি। দামও অন্যান্য গরুর চেয়ে বেশি। বর্তমানে এক থেকে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়।
যেসব কারণে পেশা ছেড়েছেন খামারিরা
৩০ বছর ধরে সাদা গরু লালন-পালন করেছেন মিরকাদিম পৌরসভার কাগজিপাড়া এলাকার মো. সাফিন দেওয়ান। এখন তার পরিবারের কেউ পালন করেন না। কারণ জানতে চাইলে সাফিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তিন ভাই দীর্ঘ ৩০ বছর সাদা গরু লালন-পালন করেছি। তার আগে বাবা-চাচা পালন করতেন। আমরা তাদের কাজে সাহায্য করতে করতে এই পেশায় এসেছিলাম। গত চার বছর ধরে করছি না। কারণ গোখাদ্যের দাম যেমন বেড়েছে আবার কাঁচা ঘাস তেমন নেই। একটা সময় পরিবারের নারীরা এই কাজে সাহায্য করতেন। এখন সবাই আধুনিক। আমাদের বয়স হয়েছে। দূর থেকে ঘাস কেটে আনা সম্ভব হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন চাকরি করে, তাদের পক্ষে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখা সম্ভব নয়। সময়ের পরিবর্তনে এভাবেই দিন দিন খামারি কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে সাদা গরু লালন-পালনের ঐতিহ্য।’
৪০ বছর ধরে সাদা গরু পালন করেছেন মিরকাদিমের গোয়ালপাড়া এলাকার আকাশ ঘোষের বাবা। গত পাঁচ বছর ধরে তারাও বাদ দিয়েছেন। আকাশ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে সব সময় ২০-৩০টি গরু থাকতো। আমি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পছন্দ করে সাদা গরু কিনে নিয়ে আসতাম। বাবা সেগুলোকে পালন করতেন। বাবা মারা গিয়েছেন পাঁচ বছর হলো। তারপর দুই বছর নিজে পালন করেছি। কিন্তু আগের মতো সেই চাহিদা ও দাম নেই। এতে লাভ হয় না তেমন। কারণ গোখাদ্যের দাম বেশি। পালন করতে অনেক কষ্ট। বাধ্য হয়ে তিন বছর আগে ছেড়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জে কাপড়ের ব্যবসা করছি। তা দিয়ে চলছে সংসার।’
মিরকাদিমে ‘মজিবর অ্যাগ্রো লিমিটেড’ নামে খামার দিয়ে ৫১টি গরু পালন করছেন ইমন বেপারি। সাদা গরু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মাংসও সুস্বাদু উল্লেখ করে ইমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গরুগুলো যত্নে লালন-পালন করা হয়। দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। পুরান ঢাকার মানুষজন এখানে এসে কিনে নিয়ে যান। চাহিদা ভালোই আছে। তবে এখন আর ঢাকার হাটে নেওয়া হয় না। গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় কমে গেছে লালন-পালন। শখের বসে পালছি। আমার মতো হাতেগোনো কয়েকজন পালন করেন।গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতায় সাদা গরু টিকছে না। দাম বেশি হওয়ায় আবার অনেকে কিনতে চান না। ফলে অনেক খামারি পালন ছেড়ে দিয়েছেন।’
মজিবর অ্যাগ্রোর কর্মী মো. রাশেদ বলেন, ‘খামারে দুই বছর ধরে কাজ করছি। ৫১টি গরুকে তিনবেলা খাবার দানাদার খাবার দেওয়া হয়। দিনে তিনবার গোসল করাতে হয়। তবে কোনও ওষুধ দেওয়া হয় না।’
একই এলাকার শাহিন অ্যাগ্রো লিমিটেডের কর্মী সেলিম বেপারি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমাদের খামারে ৫০টি গরু পালন করছি। প্রতিবার ঈদে পুরান ঢাকার লোকজন এসে কিনে নিয়ে যান। খামারে আকারভেদে ৮০ হাজার থেকে চার লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে।’
মিরকাদিমের বাসিন্দা মেহেদী মিরাজ বলেন, ‘আমাদের এলাকার গরু সারা দেশের মধ্যে এক নম্বর ছিল। একসময় ঢাকার হাটে দলবেঁধে নিয়ে যেতেন খামারিরা। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না। একসময় দুই শতাধিক খামারি থাকলেও এখন কয়েকজন পালন করেন। অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।’
ঐতিহ্য রক্ষায় খামারিদের ঋণ দেওয়া হবে
মিরকাদিমের গরুর ঐতিহ্য রক্ষায় খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ এবং সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সাদা গরুর ইতিহাস ও ঐতিহ্য প্রায় ২০০ বছরের। একসময় মিরকাদিমে প্রচুর খামারি লালন-পালন করলেও এখন কমে ১০-১২ জনে নেমেছে। এজন্য মূলত এই গরু বিলুপ্তির পথে। আমরা ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
গরুগুলো পালনে খাদ্য কম লাগে উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দানাদার ও কচি ঘাস খাইয়ে খামারিরা পালন করেন। যেহেতু কাঁচা ঘাস খাইয়ে পালন করা হয়, সেহেতু মাংসে চর্বি কম থাকে। প্রচুর চাহিদা ছিল এবং আছে। বর্তমানে মিরকাদিমে দেড় শতাধিক গরু আছে। কোনও ধরনের ইনজেকশন কিংবা মোটাতাজাকরণের ওষুধ দেওয়া হয় না। তবে রোগ প্রতিরোধে টিকা দিই আমরা। গরুগুলোকে লালন-পালনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে থাকি খামারিদের।’
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…