Categories: Bangladesh News

কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে?


জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করে খুব শিগগিরই টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্রভাই দামোদারদাস মোদি। দিল্লিতে সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

তবে এই মোদি ৩.০-র সঙ্গে বিগত এক দশকে নরেন্দ্র মোদির প্রথম দুই মেয়াদের অবশ্যই একটা বড় পার্থক্য আছে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবার এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে সরকার গড়ার জন্য তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে জোটের অন্য শরিকদের ওপর।

রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম নরেন্দ্র মোদিকে কোনও জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে হবে। এর আগে যখন তিনি ১৩ বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বা টানা ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী– তখন তার নিজের দলেরই বিপুল গরিষ্ঠতা ছিল, সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণও ছিল একচ্ছত্র।

কিন্তু এই মোদি ৩.০ আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল হবে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। কিন্তু যে বাংলাদেশ নরেন্দ্র মোদির পররাষ্ট্রনীতির একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, তাতে কি এই তথাকথিত ‘দুর্বলতা’র কোনও প্রভাব পড়বে?

পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ও দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাবেক অধ্যাপক ড. বলদাস ঘোষাল অবশ্য মনে করেন, পার্লামেন্টে সংখ্যার দিক থেকে নরেন্দ্র মোদির এখন যে সামান্য দুর্বলতা আছে সেটা তিনি খুব শিগগিরই কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

অধ্যাপক ড. বলদাস ঘোষাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির সরকার চালানোর যে স্টাইল তাতে পূর্ণ কর্তৃত্ব তার হাতে নিতে খুব একটা দেরি হবে বলে মনে হয় না। কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো তিনি আবার আগের মতো ক্ষমতা নিজের হাতে পুরোপুরি সংহত করে ফেলবেন। তবে হ্যাঁ, দেশের ভেতরে তার কর্তৃত্ব কমবেশি যাই থাকুক, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের গ্রাফ তার আমলে যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে সেটাকে তিনি কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেবেন না এতে কোনও সন্দেহ নেই।’  

এই পরিস্থিতিটাকে আবার একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পর্যবেক্ষক এবং ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শ্রীরাধা দত্ত।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, “দেখুন, ভারতের যে নেইবারহুড পলিসি (প্রতিবেশী দেশগুলো সম্পর্কে নীতি) তাতে কিন্তু একটা ‘ব্রড কনসেনসাস’ (মোটা দাগে ঐকমত্য) তৈরি হয়েই গেছে। ফলে ভারতে বিজেপি বা কংগ্রেসের একক সরকারই থাকুক বা জোট সরকার, সেখানে খুব কিছু পার্থক্য হবে না। হ্যাঁ, আমেরিকা বা চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা কখনোই হবে না।”

তবে এ ধরনের পর্যবেক্ষণের পরেও নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ‘মৃদু পালাবদলে’র প্রভাব বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও পড়তে পারে – এ কথা বিশেষজ্ঞরাও মানছেন। এরকম কয়েকটি ক্ষেত্র নিয়েই নিচে আলোচনা করা হল:

গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তি

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি সই হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা, আর ভারতে এইচ ডি দেবেগৌড়া। ৩০ বছর মেয়াদি সেই চুক্তি নবায়ন করার কথা ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে, অর্থাৎ আগামী আড়াই বছরের মধ্যেই। সে ব্যাপারে দুই দেশের আলাপ-আলোচনাও চলছে।

অন্য দিকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা চলছে এক যুগেরও ওপর ধরে। ২০১১ সালে চুক্তি সম্পাদনের সব প্রস্তুতি সেরে ফেলার পরও শেষ মুহূর্তে মমতা ব্যানার্জির আপত্তিতে সেই চুক্তি সই করা যায়নি, একথাও সুবিদিত। এখন প্রশ্ন হলো, নতুন সরকারের আমলে এই চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ কী?

শ্রীরাধা দত্ত বলছিলেন, ‘একটা জিনিস খেয়াল করবেন, শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণে যেমন আসছেন, তেমনি দু-তিন সপ্তাহের ভেতরে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরেও তার আবার দিল্লিতে আসার কথা। এখন এত ঘন ঘন দিল্লিতে এসে তিনি নিশ্চই খালি হাতে ফিরতে চাইবেন না। বরং আমার ধারণা তিস্তার মতো ইস্যুতে তাকে বড় কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বলেই তিনি এই সফরগুলোতে সম্মতি দিয়েছেন।’

অধ্যাপক বলদাস ঘোষাল আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘একটা দেশের সরকার যখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছুটা দুর্বল হয়, তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে তারা হামেশাই দেখাতে চায় তারা আসলেই শক্তিশালী। ফলে তারা কিছুটা অনমনীয় অবস্থানও নেয়। ফলে এমনও হতে পারে, এতদিন যে তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তির কথা বলে নরেন্দ্র মোদি সরকার তিস্তা চুক্তিতে সায় দিতে পারেনি, এখন নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার জন্যই তারা হয়তো আগ বাড়িয়ে তিস্তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নিয়ে ফেলবে। গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে – আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই সেই চুক্তি নবায়ন করার জন্য ভারতের দিক থেকে তাগিদ থাকবে বেশি।’

নাগরিকত্ব আইন

গত কয়েক বছরে ভারত ও বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে হাতেগোনা কয়েকটি বিষয় অস্বস্তির ছায়া ফেলেছে তার একটি হলো ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-শিখদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। এই আইন মুসলিম-বিরোধী ও অসাংবিধানিক, সেই কারণ দেখিয়ে এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন হাজার হাজার ভারতীয়। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সে সময় গালফ নিউজ পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি তো কিছুই বুঝলাম না ভারতের এই আইনটা আনার কী দরকার ছিল!’

বছর চারেকের বিরতির পর এবারের নির্বাচনের ঠিক আগে ভারত যখন এই আইনটি বাস্তবায়নের জন্য রুল জারি করে এবং ভোটের মাঝপথে এই নতুন আইন অনুযায়ী পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে কয়েকজনকে নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়– তখনই বোঝা গিয়েছিল সিএএ-কে বিজেপি আসলে একটি নির্বাচনি হাতিয়ার করতে চাইছে। বাংলাদেশ থেকে আসা মতুয়া সম্প্রদায়ের বড় অংশের ভোট যে বিজেপি এবারেও পেয়েছে, তারও কারণ ছির এই সিএএ।

কিন্তু ভোটের পর বিজেপি জোট সরকারের এখন যে চেহারা দাঁড়াচ্ছে, তাতে সিএএ নিয়ে তারা যে খুব জোরেশোরে এগোতে চাইবে সেই সম্ভাবনা বেশ কম বলেই মনে হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, মোদি ৩.০-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই জন শরিক হলেন টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু ও জেডিইউ-এর নীতীশ কুমার এবং এই দুটি দলেরই সমর্থনের একটা বড় ভিত্তি হলো দেশের মুসলিম জনগণ।

ফলে যে আইন মুসলিমবিরোধী বলে পরিচিতি পেয়েছে, সেটা নিয়ে তারা বিজেপিকে চাপে রাখতে চাইবে এবং এটা যাতে ঘটা করে কার্যকর না করা হয় সে জন্য চাপ দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত, প্রবীণ কূটনীতিবিদ মুচকুন্দ দুবেও মনে করেন, ‘নরেন্দ্র মোদির প্রথম দুটি আমলে ভারতে মুসলিম নির্যাতনের অসংখ্য অভিযোগ বাংলাদেশে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি করেছিল। কিন্তু মোদি ৩.০-তে ভারতের সেই ছবিটা পাল্টাবে বলে অনেকেই মনে করছেন।’ 

পেঁয়াজ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে?

গত এক দশকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি নিয়ে বারবার বিতর্ক ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে বা সামনে কোনও নির্বাচনের হাতছানি থাকলেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দুম করে বিদেশে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফল ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশ বা নেপালের মতো আমদানিকারী দেশকে।

পেঁয়াজ অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর একটি কৃষিপণ্য এবং পেঁয়াজের দামের কারণে ভারতে বহু সরকারের পতনেরও নজির আছে। কিন্তু তারপরও মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই বিশ্বে পেঁয়াজ রফতানি নিয়ে ভারতের এই খামখেয়ালিপনা বাংলাদেশও কিন্তু খুব ভালো চোখে দেখেনি।  

বছর কয়েক আগে দিল্লিতে এসে এক সফরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তো প্রকাশ্যেই অনুযোগ করেছিলেন, ভারত এভাবে না বলে-কয়ে দুম করে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করে দিলে তাদের সত্যিই খুব অসুবিধা হয়। এমনকি সেরকম পরিস্থিতিতে তাকে নিজের হেঁশেলেও পেঁয়াজ বুঝেশুনে খরচ করতে হয়, কথাচ্ছলে সেটাও জানিয়েছিলেন।

তবে প্রতিবারই যেটা দেখা যায়, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যখনই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের নির্দেশ দেয়, মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিরা তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এমনকি বহুবার তারা কেন্দ্রের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় অবরোধে বসেছেন, পেঁয়াজ ফেলে জ্বালিয়ে দিয়েছেন– এমন ঘটনাও ঘটেছে।

এর কারণটাও খুব সহজ, দেশের বাজারের বদলে বাংলাদেশসহ বাইরে রফতানি করলে তারা পেঁয়াজের অনেক বেশি দাম পান। ডলারে নির্ধারিত ন্যূনতম রফতানি মূল্যের কারণে তাদের পকেটেও বাড়তি পয়সা আসে। ভারত সরকার রাতারাতি সে উপার্জন বন্ধ করে দিলে তাদের ক্ষোভ তো খুবই স্বাভাবিক!

এবারের লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্র বিজেপিকে দারুণভাবে নিরাশ করেছে। বিজেপি জোটের আসন ওই রাজ্যে গতবারের ধারেকাছেও পৌঁছয়নি, আর এর জন্য কৃষকদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ একটা খুব বড় কারণ বলে পর্যবেক্ষকরা চিহ্নিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মহারাষ্ট্র হলো ভারতের পেঁয়াজ রাজধানী। দেশের সিংহভাগ পেঁয়াজ এই রাজ্যের নাসিক ও তার আশেপাশেই উৎপন্ন হয় এবং মহারাষ্ট্রের ‘অনিয়ন লবি’ রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত প্রভাবশালী।

এখন বিগত দুটি ভার্সনের চেয়ে মোদি ৩.০ যে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল হতে যাচ্ছে, তার পেছনে এই মহারাষ্ট্রের বড় ভূমিকা আছে। তার ওপর কয়েক মাস পরেই ওই রাজ্যে বিধানসভার ভোট, ফলে মহারাষ্ট্রের চাষিদের আর চটানোর ঝুঁকি কেন্দ্রীয় সরকার নেবে না বলেই মনে হচ্ছে। অন্যভাবে বললে, রাতারাতি বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ফরমান জারিতেও হয়তো সরকারকে রাশ টানতে হবে।

পরোক্ষভাবে এর সুবিধা অবশ্যই পাবে বাংলাদেশ। আসন্ন কোরবানির ঈদের আগেই শুধু নয়, আগামী দিনেও আশা করা যায় পেঁয়াজ রফতানি নিয়ে এই অনিশ্চয়তার অবসান হবে এবং বাংলাদেশের বাজারেও পেঁয়াজের যোগান ও দাম স্থিতিশীল থাকবে।


👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

9 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

9 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

9 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

9 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

9 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

9 months ago