Categories: Bangladesh News

কীসের ভিত্তিতে চারবার দুদকের ‘ক্লিন’ সার্টিফিকেট পান মতিউর?


সব সরকারের আমলেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে চিঠি পেয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালে প্রথম দুদক থেকে তিনি ‘ক্লিন’ হিসেবে চিঠি পেয়েছিলেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে একবার এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৩ সালে ও সর্বশেষ ২০২১ সালে দুদকের কাছে যাওয়া অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন তিনি।

এছাড়াও একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রেস কাউন্সিল থেকে তিনি ‘ক্লিন’ সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, হয়তো আগের চারবার মতিউরের বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারা তেমন কোনও তথ্য পাননি। এ কারণেই ওই চারবার অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি টানা হয়েছিল।

কিন্তু নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মতিউর রহমান শুরু থেকেই ছিলেন ‘ধুরন্ধর’ প্রকৃতির। সবসময় ওপর মহলকে ম্যানেজ করে চলেছেন। মতিউরের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে হয়তো সক্ষমতার অভাব ছিল, আর না হয় ‘ম্যানেজ’ হয়েছিলেন তদন্তে জড়িতরা।

কোরবানির ঈদের সময় ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে পঞ্চমবারের মতো অনুসন্ধান করছে দুদক। বারবার কীভাবে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম থেকে তিনি নির্দোষ হিসেবে ছাড় পেলেন, কী কারণে চারবারেও তার দুর্নীতির উৎস খুঁজে পেলো না দুদক–এসব প্রশ্ন জানতে চাইলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন ২৩ জুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হয়তো তখন তার বিরুদ্ধে তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। সে কারণেই তখন অনুসন্ধান আর এগোয়নি। পরিসমাপ্তি টানতে হয়েছে। আবার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে বলা যাবে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে।

চার দফায় দুদক কোন ‘অজ্ঞাত কারণে’ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি– জানতে চাইলে দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন (পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চারবার অনুসন্ধানের পরও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলেই অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। হয়তো অভিযোগটাই সঠিক ছিল না। এমন অনেক অভিযোগ দুদকে আসে। দুদকের নিয়ম অনুযায়ী কোনও অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হলে তখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেটাকেই অনেকেই ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ বলে থাকেন। আসলে ক্লিন সার্টিফিকেট বলতে কিছু নেই।

তবে ‘অতীত না ঘেঁটে’ এবারের অনুসন্ধানের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন ওই কর্মকর্তা।

চার দফায় অনুসন্ধান হলো, অথচ মতিউরের দুর্নীতি প্রমাণ করা গেলো না কেন– এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে বাংলাদেশে দুর্নীতির গভীরতা ও প্রসার এত বেশি হয়েছে যে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের বিচারহীনতার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাও একটা দৃষ্টান্ত যে দুদক পর পর চারবার দুর্নীতি অনুসন্ধান করার পরও তার কিছুই হয়নি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এটার একটা কারণ হতে পারে, দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের যে সক্ষমতা, সেই তুলনায় তাদের ওপর কাজের চাহিদাটা বেশি। এত বেশি ঘটনা, একটার পর একটা উন্মোচিত হচ্ছে, সেটা হয়তো তাদের সক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। যে কারণে এ প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক। তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সদিচ্ছারও একটা বিষয় আছে। সত্যিকার অর্থে চারবার উদ্যোগ নিয়েও কিছু করা হয়নি।’

দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে অভিজ্ঞ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখন যেটা প্রমাণিত হয়েছে বা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে, এর ভিত্তিতে দুটো জিনিস দেখা যায়। ব্যক্তি পর্যায়ে প্রভাবিত না হয়ে দুদক কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তখন, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অন্যদিক থেকে, যেহেতু বর্তমানে ব্যাপকভাবে আলোচিত হওয়ার কারণে এ বিষয়ে মানুষের চাহিদা আছে, বাধ্যবাধকতাও আছে, সবগুলো না হলেও দুদক অন্তত এ ধরনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলকভাবে কার্যকর উদ্যোগ ও ফলাফল দেখানোর চেষ্টা করতে পারে। তাহলে দুদকের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। তাছাড়া অনেক কিছুই দালিলিক প্রমাণসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব জনসম্মুখে এখন উদঘাটিত। বীভৎস একটা চিত্র। কাজেই দুদকের মতো সংস্থার কাছে এগুলো নিয়ে অগ্রসর হওয়া কেনও সম্ভব হবে না সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুদক যে কারও কারও পরিচয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিংবা বিশেষ মহলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে যথাযথ ভূমিকা রাখছে না– এ প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। এত সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে যে বিষয়গুলো উদঘাটিত হয়েছে সেগুলোকে পুঁজি করে অবৈধ সম্পদের হিসাব চাইতে পারে। তারপর তারা প্রসিকিউশনের দিকে যাবে। দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এগুলো একটা সুযোগ বলে আমি মনে করি। আর দুদক যদি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে সুযোগ নিতে না পারে তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য হতাশাব্যঞ্জক হবে এবং দুদকের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যাবে।’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিনি যখন এনবিআরের চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান করে নাই। তবে ওই সময় ‘শীর্ষ কাগজ’ নামের একটি পত্রিকায় মতিউরের দুর্নীতি নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তখন মতিউর রহমান শীর্ষ কাগজের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করে জিতেছিলেন।

মতিউরের বিরুদ্ধে চার দফায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক কেন থেমে গেলো জানতে চাইলে বদিউর রহমান বলেন, ‘দুদক থামে নাই। দুদক অনুসন্ধান শেষ করে বলেছে যে মতিউরের কোনও দোষ নাই। তাকে নির্দোষ হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।’ তাই বলে বারবার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মতিউর তো ম্যানেজ করার জন্য ক্যাপাবল। সে হয়তো দুদককে ম্যানেজ করেছিল। তাছাড়া যার বিরুদ্ধে দুদকে চারবার অভিযোগ যায়, অনুসন্ধান হয়, যতই তিনি সাধু সার্টিফিকেট পান না কেন, তার প্রমোশন হয় কী করে? অনেক কিছুই আমাদের দেশে আইনে প্রমাণ হয় না, করে না। কিন্তু পারসেপশন তো আছে। একটা লোকের সঙ্গে দু-চার বছর চাকরি করলেই লোকটা কেমন সেটা সবার নজরে পড়ে।’

এ বিষয়ে শীর্ষ কাগজের সম্পাদক একরামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রেস কাউন্সিলের মামলায় শীর্ষ এই দুর্নীতিবাজ মতিউর জিতে ছিলেন। তিনি প্রেস কাউন্সিলের রায়ে ২০১০ সালের ৫ এপ্রিল ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, শীর্ষ কাগজের সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের ভর্ৎসনা, তিরস্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন- 

পঞ্চমবারের মতো মতিউরের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত

সোনালী ব্যাংক থেকেও সরে যেতে হলো মতিউর রহমানকে

এনবিআর থেকে সরানো হলো মতিউরকে, সরতে হচ্ছে সোনালী ব্যাংক থেকেও

‘রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরই ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সেই ইফাতের বাবা’

আত্মগোপনে মতিউরের স্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago