Categories: Bangladesh News

কল এলে মুহূর্তেই পাল্টে যায় মসলার দাম


প্রতি বছর কোরবানির ঈদ এলে অস্থির হয়ে ওঠে মসলার বাজার। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবারের মসলার বাজার ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই অস্থির। সেই অস্থিরতা এখনও কমেনি। গত দুই মাসে কয়েক ধাপে বেড়েছে মসলার দাম। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মসলা। এলাচের কেজি ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। জিরার দাম এখন হাজার ছুঁই ছুঁই। লবঙ্গ, জায়ফল, দারুচিনিসহ সব ধরনের মসলার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি।

অনুসন্ধানে নেমে জানা যায়, বাজারে মসলার দাম ওঠানামার পেছনে রয়েছে বিশাল এক চক্র, যারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কল এলে মুহূর্তেই পাল্টে যায় মসলার দাম। মঙ্গলবার (১১ জুন) তেমনি একটি ঘটনা চোখে পড়ে বাংলা ট্রিবিউনের। রাজধানীর মৌলভীবাজারের পারফেক্ট মসলা স্টোরের বিক্রেতারা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ৩ হাজার ৩২০ টাকা কেজি দরে এলাচ বিক্রি করছিলেন। কিছুক্ষণ পর কোথা থেকে কল এলো। সেই কল আসার পরই এলাচের কেজি হয়ে গেলো ৩৬০০ টাকা, জিরার দাম বেড়ে গেলো ৪০ টাকা, লবঙ্গ-দারুচিনিও কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

কে কল দিয়েছেন? কেনই বা মুহূর্তের মধ্যে মসলার দাম বেড়েছে? এর পেছনের রহস্য জানতে কথা হয় সেই দোকানের একজন কর্মচারীর সঙ্গে। যে দামে মসলা কেনা সে অনুযায়ী কেন বিক্রি হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে পারফেক্ট মসলা স্টোরের একজন বিক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাজার ঠিক রাখতে এই নির্দেশনা আমাদের সবাইকে মানতে হয়। এটা শুধু আমি না, মৌলভীবাজারের যত ব্যবসায়ী আছে সবাই এই কাজ করে। এখন যদি আবার কল আসে, তাহলে এই মূল্য তালিকা মুছে আবার দাম বাড়ানো হবে।

কোথা থেকে কল আসে এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, ‘চট্টগ্রাম’।

কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর পাইকারি মসলার বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা এমন কলের অপেক্ষাতেই থাকেন সবসময়। আর কল এলেই বেড়ে যায় মসলার দাম। তবে কমানোর বিষয়ে কল এলে করেন গড়িমসি।

মৌলভীবাজারে এখন মানভেদে জিরার কেজি ৬৯০ থেকে ৯৪০ টাকা, এলাচ মানভেদে ৩ হাজার ৩৮০ থেকে ৩ হাজার ৮২০, দারুচিনি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, জয়ত্রী ২৮৪০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪২০ এবং গোলমরিচ ৭৫০ থেকে ৭৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কালো গোল মরিচ প্রায় ১ হাজার টাকা, দারুচিনি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, সাদা মরিচ ১ হাজার ২৮০ টাকা, আলুবোখারা ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রমজানে ঈদের সময় এসব মসলার দাম ৫০-২৪০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল। এলাচের দাম তো রমজানের তুলনায় এখন দ্বিগুণ বেড়েছে।

মৌলভীবাজারের বিক্রেতারা বলছেন, ওপর থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সব মসলায় বিক্রেতারা মানভেদে ৫-১০ টাকা কমবেশি বিক্রি করতে পারেন। তবে বেশি হলে সমস্যা। যেমন জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল এসব মসলার দাম এক হতে হবে।

মৌলভীবাজারের পাইকারি মসলা বিক্রেতা আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পাইকারি মসলার বাজারে সব বিক্রেতা একই দামে মসলা বিক্রি করে থাকেন। মানভেদে কিছু মসলার দাম ভিন্ন থাকে। ক্রেতারা অনেক সময় মসলার মান যাচাই না করে কম দামে একই মসলার অন্য আরেক জাত কেনেন। যেমন এক জাতের এলাচের কেজি আছে ৩১৫০ টাকা। আরেকটা আছে ৩৪০০, আরেকটা ৩৬৫০। এখন যারা না চিনবে তারা তো ভাববে সব এলাচ একরকম।

মসলার দাম ওপর থেকে কে নির্ধারণ করে দেয়? আপনারা আপনাদের ক্রয়মূল্য অনুযায়ী কেন বিক্রি করেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন,  এটা বলতে পারবো না।

মসলার পাইকারি ক্রেতারা বলছেন, একদিনে দুই থেকে তিনবারও মসলার দাম ওঠানামা করে।

মৌলভীবাজারে পাইকারি দরে মসলা কিনতে আসা মোনায়েম শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুই বছর ধরে ক্রমান্বয়ে মসলার দাম শুধু বাড়ছেই। কেজিতে ১০০ টাকা মসলার দাম বাড়লে পরে হয়তো ২০ টাকা কমে। এভাবে আজ ১২০০ টাকার এলাচের দাম ৩৬০০ টাকা হয়েছে। ৪০০ টাকার জিরার কেজি ১০০০ টাকা হয়েছে। কোনও কিছুর দাম বাড়লে এই দেশে সহজে আর দাম কমে না। বিক্রেতারা ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বেশি, শুল্ক বেশি, এসব অজুহাত দিয়ে দাম শুধু বাড়াতেই থাকেন। কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না।

খুচরা বাজারে মসলার ঝাঁজ

পাইকারি বাজারে যে দামে মসলা বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বিশেষ করে জিরা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল ইত্যাদি। খুচরা বাজারে ১০০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০০ টাকায়। এতে কেজি দাঁড়ায় ৫ হাজার টাকা। ১০০ টাকায় হাতে গোনা ১৫-১৬টা এলাচ দেওয়া হয়।

জিরা খুচরায় ১০০ গ্রাম ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ৫০ টাকার দুই চিমটি জিরাও দেওয়া হয় না। বিক্রেতাদের দাবি, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা অনেক বেশি দামে কিনে এনেছি। খুচরায় যদি লাভ না করি তাহলে চলবো কীভাবে!

পুরান ঢাকার কলতাবাজার মেহেদী স্টোর থেকে ৫০ টাকার এলাচ ও ২০ টাকার জিরা কিনতে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন গৃহিণী সুরমা বেগম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, দোকানদারকে ২০ টাকার জিরা আর ৫০ টাকার এলাচ দিতে বলায় প্রথমে দোকানদার দিতেই ইতস্তত করেন। পরে যা দিলো আমি তো দেখে হতবাক। ৭/৮টি এলাচ আর এক চিমটি জিরা দিয়ে বললো ৭০ টাকা দেন। আমি পরে আরও বাড়িয়ে কিনেছি।

খুচরা বাজারে মসলার ঝাঁজের বিষয়ে বিক্রেতা মেহেদী হোসেন বলেন, ১ কেজি এলাচ কিনতে আমাদের প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। জিরা কিনতে হয় ১২০০ টাকা দামে। জয়ত্রী, দারুচিনি এগুলোর দাম আগের থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে বেড়েছে। এখন আমরা যদি লাভ না করে বিক্রি করি তাহলে কীভাবে চলবে? আমাদের দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, নিজেদের খরচ সবকিছু তো দোকানের বেচাকেনার ওপরেই নির্ভর। আমরা যদি পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারতাম তাহলে তো বেশি দামে বিক্রি করতাম না। একসময় ২০ টাকার জিরা কিনলে অনায়াসে দুই-তিনবার গরুর মাংস রান্না করে খাওয়া যেত। এখন একবারের রান্নাতেই ২০ টাকার জিরা হয় না। এলাচ যেন স্বর্ণের চেয়ে দামি।

বেচাকেনায় ভাটা

পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের কাছ থেকে আগে যে দোকানদার পাঁচ কেজি এলাচ কিনতেন এখন তিনি নিচ্ছেন দুই কেজি। যে দোকানদার ১০ পদের মসলা নিতেন তিনি নিচ্ছেন ৫ পদের। গত দুই বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক বেচাকেনাও হচ্ছে না বলে জানান মৌলভীবাজারের আবাবিল মশলা ঘরের ম্যানেজার মিজানুর রহমান মিজান।

বাংলা ট্রিবিউনকে এই ব্যবসায়ী বলেন, মসলার দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। আগে যে পরিমাণ বেচাকেনা হতো এখন তার অর্ধেক বেচাকেনাও হয় না। তাছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। মসলা হচ্ছে রান্না সুস্বাদু করার অন্যতম একটা মাধ্যম। মানুষ এখন মসলা কেনার চেয়ে আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে। যার কারণে বেচাকেনা কমেছে।

বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে বলে মন্তব্য করেন মৌলভীবাজারের বেশকয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে একজন তাহসিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. নাসির উদ্দিন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, মসলার বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। আগে কোরবানির সময় যেমন বেচাকেনা হতো এখন তার তিন ভাগের এক ভাগও হয় না। এই সময় আগে দোকানে মানুষের ভিড়ে ঠিকভাবে পা ফেলার জায়গা থাকতো না। অথচ এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায় কাস্টমার আসে না।

এছাড়াও মৌলভীবাজারে অনেক মসলা ব্ল্যাকে (কালোবাজারি বা চোরাই পথে) প্রবেশ করে দাবি করেন তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী বাজারে ক্রেতা আসলে তাদের সিস্টেমে ব্ল্যাকের মালামাল বিক্রি করে। এর কারণে আমরা যারা ভ্যাট দিয়ে বৈধ পথে মসলা ইমপোর্ট করি তাদের বেচাকেনা কম হয়, লস হয়ে যায়।

মৌলভীবাজারের আরেক ব্যবসায়ী বোরহান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রমজানের ঈদে যে এলাচ ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি ছিল, সেটা এখন ৩ হাজার ৬৫০ টাকা। ১ হাজার ৪০০ টাকা যে এলাচ ছিল, তার কেজি এখন ৩ হাজার ৩৮০ টাকা। মানে দুই মাসের ব্যবধানে এক-দেড় হাজার টাকা দাম বেড়েছে। কালো গোলমরিচ, কাঠবাদাম, সাদা মরিচ সবকিছুর দাম কেজিপ্রতি দুই আড়াইশো টাকা করে বেড়েছে। আমরা পাইকারি বিক্রি করি ঠিক আছে, কিন্তু আমরাও তো পাইকারি চট্টগ্রাম থেকে কিনে আনি। সেখান থেকে যদি কম দামে না কিনতে পারি তাহলে তো আমাদের পক্ষে কম দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে মসলার দাম বেশি দেখে ক্রেতারা আগের চেয়ে কম কিনছেন। যার কারণে বেচাকেনা নাই।

নামেমাত্র মূল্য তালিকা

‘মসলার বাজার’ হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মৌলভীবাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানের অনেক দোকানে মূল্য তালিকা আছে, অনেক দোকানে নেই। আবার অনেক দোকানে থাকলেও মূল্য তালিকা দেখাতে অনাগ্রহী বিক্রেতারা। এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দামে মসলা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

কেরানীগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজারে পাইকারি মসলা কিনতে আসা মোসলেহ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দোকানগুলোয় মূল্য তালিকা থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন এটা গত কালকের দাম বা ফোন এসেছে তাই দাম বেড়ে গেছে। অনেক দোকানে আবার মূল্য তালিকায় নেই। আর থাকলেও সেটা ক্রেতাদের জন্য না।

এই ক্রেতা আরও বলেন, আমি কেরানীগঞ্জ থেকে আমার মুদি দোকানের জন্য পাইকারি দরে মসলা কিনতে এসেছি। পুরো বাজার ঘুরে জিরা, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ এসব কিনেছি। মূল্য তালিকায় জিরার দাম লেখা ৬৬০ টাকা অথচ আমরা কাছ থেকে ৬৯০ টাকা করে রাখা হয়েছে। মূল্য তালিকায় এলাচ লেখা ছিল ৩৩৮০ টাকা। আমি দাম জানতে চাওয়ার পর আমারে বললো বিক্রি করি তো ৩৭০০/৩৮০০ আপনার জন্য একদাম ৩৬৫০ টাকা। আরও দুই-তিনটা দোকান ঘুরে দেখলাম সেখানেও একই দাম। এরকম তালিকার সঙ্গে দামের মিল নেই বলে অভিযোগ জানান এই ক্রেতা।

মৌলভীবাজারের আজমীর ট্রেডার্স, আলী আজগর হোসেন খান রোডের মেসার্স নরসিংদী স্টোর, রোহান এন্টারপ্রাইজ, ১০ নম্বর আলী হোসেন খান রোডের তাকওয়া এন্টারপ্রাইজ, আজমীর ট্রেডার্স, জোব্বার স্টোর সহ আরো অনেক দোকানেই দেখা যায়নি মূল্য তালিকা।

মূল্য তালিকা না থাকার বিষয়ে নানান বাহানা দিয়েছেন বিক্রেতারা। আবার অনেকে দোকানদার মূল্য তালিকা দেখতে চাওয়ায় রূঢ় ব্যবহারও করেছেন। তাদের মধ্যে জব্বার স্টোরও মেসার্স নরসিংদী স্টোরের বিক্রেতা অন্যতম। মূল্য তালিকা দেখতে চাওয়ায় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদককে তারা বলেন, আপনি কি কিছু কিনতে এসেছেন? না কিনলে আপনাকে কেন মূল্য তালিকা দেখাবো? গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় দেওয়ার পর তারা বলেন, এখন ব্যস্ত আছি দেখাতে পারবো না।

ক্রেতাদের দাবি, মূল্য তালিকার তোয়াক্কা করছেন না বিক্রেতারা। এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য ভোক্তা অধিকারের নিয়মিত অভিযান চালানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তারা। সরকারিভাবে নির্দিষ্ট বাজার মনিটরিং সেলের দাবিও জানান তারা।

ফজলুল হক নামের একজন ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারিভাবে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য একটা সেল থাকলে বিক্রেতারা ধোঁকাবাজি করতে পারত না। যারা অনর্থক বেশি দামে পণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সেই সেল। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বারবার এদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

ছবি: প্রতিবেদক।

আরও পড়ুন- 

মসলার বেড়ে যাওয়া দাম এখনও কমেনি

ঈদের আগেই মসলায় ঝাঁজ, কেজিতে বেড়েছে ১৫০০ টাকা


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

9 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

9 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

9 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

9 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

9 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

9 months ago