Categories: Bangladesh News

এবার পাহাড়ি ছড়ায় ‘কংক্রিটের বাঁধ’ নির্মাণ করেছে জিপিএইচ ইস্পাত


পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে পাহাড়ি ছড়ার মুখে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছিল দেশের অন্যতম রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৭ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা বিটের তৎকালীন কর্মকর্তা বিভাষ কুমার মালাকার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলায় জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুলসহ তিন জনকে আসামি করা হয়। বাকি দুই আসামি হলেন কুমিরা ইউনিয়নের কাজীপাড়ার মৃত ছালেহ আহম্মদের ছেলে মো. লিটন (৪০) ও একই এলাকার মৃত দিদারুল ইসলামের ছেলে মো. আলমগীর (৩২)। তবে পাঁচ বছর পার হলেও মামলার কার্যক্রমে গতি নেই। এর মধ্যে উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এরই ফাঁকে ওই স্থানে গত মার্চ মাসে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলা করেও ছড়ার মুখে বাঁধ নির্মাণ থেকে ফেরানো যায়নি জিপিএইচ ইস্পাতকে। যেখানে মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়েছিল, সেটি অপসারণ করা যায়নি। উল্টো একই স্থানে গত মার্চ মাসে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ছড়ার পানি পাইপের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কারখানায়। নতুন বাঁধ নির্মাণ করলেও রহস্যজনক কারণে নীরব আছে পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ইস্পাত, রড, ঢেউটিন ও কাচ তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। সারা দেশে ইস্পাত পণ্য যত উৎপাদন হয়, তার অন্তত ৬০ শতাংশই আসছে সীতাকুণ্ডের কারখানাগুলো থেকে। দেশের শীর্ষস্থানীয় চারটি কোম্পানির কারখানা এখানে। আবার ছোট ছোট কারখানাও রয়েছে। সবকটি শিল্পকারখানা পানির সংকটে আছে। এর মধ্যে সংকট মেটাতে পাহাড় কেটে ছড়ার পানি পাইপের মাধ্যমে কারখানায় নিয়ে যাচ্ছে জিপিএইচ ইস্পাত।

জিপিএইচ ইস্পাতের বিরুদ্ধে বন বিভাগের করা মামলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ি ছড়ার মুখে উঁচু বাঁধ নির্মাণ, ছড়ার পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া, ছড়ার গতিপথ ও স্বকীয়তা পরিবর্তন, পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলা, পরিবেশ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ গত পাঁচ বছরেও এই মামলার কার্যক্রম এগোয়নি। এরই মধ্যে ঘটেছে মামলার এজাহার সংশোধন, চার্জশিট থেকে জিপিএইচ ইস্পাতের এক কর্মকর্তার নাম বাদ দেওয়াসহ নানা নাটকীয়তা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুলসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালের বন আইনের-৩৩-এর ১ (গ) ধারায় চার্জ গঠন করেন চট্টগ্রাম বন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াসমিন। এই চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর আসামিরা চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আজিজুর রহমান ভূঁইয়া রিভিশন খারিজ করে দেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান আসামিরা। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সূত্র জানায়, তিন ধাপে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন কুমিরা বিটের ফরেস্টার বিভাষ কুমার মালাকার। চার্জশিটে জিপিএইচ ইস্পাতের বিরুদ্ধে ১৫ হাজার ১৭৫ ঘনফুট পাহাড় কাটা ও প্রবাহমান ছড়ায় লম্বা বাঁধ দেওয়ার সত্যতা পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় সীতাকুণ্ডের জঙ্গল বাঁশবাড়িয়া মৌজার আরএস দাগ নম্বর-৬২০ ও তৎসংলগ্ন পাহাড়ি ছড়া এলাকায় বন বিভাগের ফরেস্টার বিভাষ কুমার মালাকার ও সাক্ষী আরও তিন বনপ্রহরী জিপিএইচ ইস্পাতের বাঁধ নির্মাণের স্থান পরিদর্শনে যান। এলাকাটি গেজেট নোটিফিকেশন অনুসারে ৭ জুন ১৯৩৫ সাল মূলে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি। এর পশ্চিমে জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানার অবস্থান। তবে কারখানার পূর্বে সংরক্ষিত বনে সর্বসাধারণের সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ওই দিন বন কর্মকর্তারা দেখতে পান ১৫০-২০০ শ্রমিক কোদাল দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বস্তায় ভরে প্রবাহমান পাহাড়ি বারোমাসি ছড়ার মুখে বাঁধ নির্মাণ করছেন। আমরা ওই কাজের কিছু স্থিরচিত্র ধারণ করি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড কোম্পানির কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাঁধ নির্মাণ করছেন বলে জানান। তাদের নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করি। এ অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের দুজন লোক ধারালো দা হাতে এসে সরকারি কাজে বাধা দেয়। তারা অনতিবিলম্বে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলে এবং ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। জনবল কম থাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি আমরা। বিট অফিসে ফিরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরদিন ৪ এপ্রিল বেলা ১১টায় রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের দেখে শ্রমিকরা কাজ ফেলে সব যন্ত্রপাতি নিয়ে গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। শ্রমিকদের খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। এরপর ঘটনাস্থলের বাস্তব চিত্র ধারণ করা হয়। ঘটনাস্থলের আরএস দাগ নম্বর-৬২০-এর মাটি কাটা ও সদ্য নির্মিত বাঁধ পরিমাপ করা হয়। নমুনা হিসেবে মাটি ভরাট করার জন্য ব্যবহৃত ১০ বস্তা জব্দ করা হয়। পরে মামলা করা হয়। 

ওই ঘটনার পর কারা পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে ছড়ার পানিপ্রবাহ বন্ধ ও বাঁধ নির্মাণ করেছিল, তা অনুসন্ধান শুরু করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তদন্তে জিপিএইচ ইস্পাতের দুই মালিক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল ও জাহাঙ্গীর আলমের নাম ওঠে আসে। তাদের দুজনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল আদালতে অভিযোগ দেয় উত্তর বন বিভাগ। একদিন পর ৮ এপ্রিল আদালতে সংশোধিত অভিযোগ দাখিল করেন মামলার বাদী ফরেস্টার বিভাষ কুমার মালাকার।

সংশোধিত অভিযোগে বলা হয়, এই মামলার অভিযোগ গত ৭ এপ্রিল আদালতে দাখিল করা হয়। সেটির ১ নম্বর আসামি আলমাস শিমুল ও ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। অধিকতর তদন্তে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি দেয় মো. লিটন ও মো. আলমগীর। তারাই কাজ পরিচালনা করেছিলেন। আগের অভিযোগের ১ নম্বর ও ২ নম্বর আসামি হুকুমদাতা। আগে উল্লেখিত ১ নম্বর ও ২ নম্বর আসামির নির্দেশে বর্তমানে উল্লেখিত ১ নম্বর আসামি ও ২ নম্বর আসামি ১৫০-২০০ শ্রমিক নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এখানে হুকুমদাতা হিসেবে আলমাস শিমুলকে ৩ নম্বর ও জাহাঙ্গীর আলমকে ৪ নম্বর আসামি দেখানো হয়।

এরপর চার্জশিটে বলা হয়, অধিকতর তদন্তে জানা যায় ৮ এপ্রিল দেওয়া অভিযোগের ৪ নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ফলে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হলো। এতে আরও বলা হয়, প্রবাহমান পাহাড়ি ছড়াতে বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক জলধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের ফলে একদিকে পানির স্তর বেড়ে যাবে, কিছু নিচু জমির বন ও বনভূমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। অন্যদিকে পানির অভাবে পাহাড়ের, বনভূমির গাছ ও ভূমির ব্যাপক ক্ষতি হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৯ সালে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আছে। মামলার কার্যক্রম নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারবো না। বর্তমানে যেখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের জায়গায় দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনও ছড়ার মুখ বন্ধ করে বাঁধ দিইনি। সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে নিজেদের জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করেছি। তবে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়নি।’

এ ব্যাপারে মামলার বাদী ফরেস্টার বিভাষ কুমার মালাকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাত ছড়ার মুখে মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এ কারণে মামলাটি করা হয়েছিল। আমরা ঘটনাটি তিন স্তরে তদন্ত করেছি। কুমিরা বিট অফিস, রেঞ্জ অফিসার ও বিভাগীয় বন সংরক্ষক তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। এরপর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি। জিপিএইচ ইস্পাত পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতিসাধন করেছে, তা অপূরণীয়। বর্তমানে মামলার কার্যক্রম কোন পর্যায়ে আছে, তা আমার জানা নেই।’ 

মামলাটি নিয়ে বন বিভাগের পক্ষে লড়ছেন অ্যাডভোকেট রবি শংকর চৌধুরী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাতের বিরুদ্ধে করা মামলায় চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছিল। চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে জিপিএইচ ইস্পাত উচ্চ আদালতে গেছে। আদালত মামলায় ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এখনও ওই অবস্থায় আছে। বন ধ্বংস করা কিংবা ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পানির গতি ধ্বংস করার সুযোগ কারও নেই। এটি অপরাধ।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার কার্যক্রম কোন অবস্থায় আছে, কিংবা নতুন করে তারা কংক্রিটের বাঁধ দিয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে চট্টগ্রাম উত্তর বন কর্মকর্তা ভালো জানবেন। আমিও তাকে খোঁজখবর নিতে বলবো।’

এ প্রসঙ্গে উত্তর বন বিভাগের কুমিরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাদেকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাতের বিরুদ্ধে করা মামলাটি বিচারাধীন। আদালতের আদেশ নিয়ে বাঁধটি কেটে ফেলা হবে। যদি তারা সেখানে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে থাকে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নেটওয়ার্ক প্রতিনিধি ও সাংবাদিক আলিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাত পরিবেশের জন্য একটি রেড শ্রেণির শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তারা কারখানা সংলগ্ন অনেক পাহাড় কেটে ফেলেছে। যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। পাহাড়ি ছড়ার ওপর বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অবৈধ। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ এবং বন কর্মকর্তাদের সজাগ হওয়া জরুরি।’


👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

9 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

9 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

9 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

9 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

9 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

9 months ago