Categories: Bangladesh News

এবার আনন্দে বাড়ি ফেরা


পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেন, লঞ্চ ও বাসে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। আনন্দ ভাগাভাগি করতে ফিরছেন শিকড়ের টানে, নিজ গ্রামে। কিন্তু এবারের বাড়ি ফেরা অন্যরকম। এবার নেই অতীতের মতো ঝক্কি-ঝামেলা। নেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা। বিকালের লঞ্চের জায়গা নিশ্চিত করতে কাকডাকা ভোরে সদরঘাটে এসে লঞ্চের ডেকে সিট রাখার প্রতিযোগিতাও নেই। গাবতলী মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস স্টেশনে কাঙ্ক্ষিত গাড়ির অপেক্ষায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনিশ্চিত অপেক্ষার দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে না। নেই ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ও। নেই টঙ্গি থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে পরবর্তী কয়েক মাইলজুড়ে সীমাহীন যানজট। পরিবহন শ্রমিকদের যাত্রী টানার প্রতিযোগিতাও চোখে পড়ছে না। মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী বাস স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট আর কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। তাদের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সদরঘাটে নেই যাত্রীদের সেই চিরচেনা ভিড়। মালিকরা বলছেন, যাত্রীদের চাপ শুরু হলে ঈদের বিশেষ সার্ভিসের লঞ্চ দেওয়া হবে। সাধারণত ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে রাজধানীর গাবতলী মহাখালী, সায়েদাবাদের বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। তবে এবার সেই চিরচেনা চিত্র দেখা যাচ্ছে না। স্বস্তিতে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। অতীতের মতো এবার  রাজধানী ছেড়ে উত্তরবঙ্গে যাত্রা পথে জয়দেরপুর, টঙ্গি, চন্দ্রার সেই চিরচেনা মাইলের পর মাইল যানজট নেই।

কঠোর মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সড়ক পথের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কের ৮টি ওভারপাস ও ২টি সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের টোল প্লাজার সব লেনে চালু করা হয়েছে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি। এসবের সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অপরদিকে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জানিয়েছেন, কোনও জাদু নয়, সঠিক ব্যবস্থাপনাই এবার রেলের সিডিউল বিপর্যয় ঘটাতে পারেনি। আর নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সদরঘাটের চিরায়িত চিত্র বদলে গেছে। এখানেও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। আগে দেখতাম রাত ৮টার লঞ্চে জায়গা পেতে যাত্রীরা সকাল বেলা এসে থাকতো দুপুরের খাবার নিয়ে। বর্তমানে সে অবস্থা নেই। ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কাছে একটা লোভনীয় ছবি ছিল যে পুরো লঞ্চ থেকে ছাদ পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষ। এই ছবি কিন্তু এখন আর পাওয়া যাবে না। এটা এখন একটা ইতিহাস, এটা আর ফিরে আসবে না।

সূত্র জানিয়েছে, সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে নির্মিত ১টি রেলওভারপাস, ৭টি ওভারপাস ও ২টি সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বগুড়ার তিনমাথা রেলগেটে ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ১টি রেলওভারপাস, ২টি সেতু, সিরাজগঞ্জে ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দাতিয়া সেতু ও ৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের ফটকি সেতু ছাড়াও সিরাজগঞ্জে ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের মুলিবাড়ি ওভারপাস, ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের পাঁচিলা ওভারপাস ও ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দাতপুর ওভারপাস, বগুড়ায় ১৫৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বি-ব্লক ক্যান্টনমেন্ট ওভারপাস ও ১৭৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ফুলতলা ওভারপাস, রংপুরে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ধাপেরহাট ওভারপাস এবং ৮ মিটার দৈর্ঘ্যের মির্জাপুর ওভারপাস যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ির চাপ রয়েছে, তবে যানজট নেই। রাজধানীতেও যানজট নেই।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের টোল প্লাজার সব লেনে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতির উন্মুক্তকরণ ও মেঘনা সেতু টোল প্লাজা-২ এর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় ২০১৬ সাল থেকে সীমিত পরিসরে একটি করে লেনে ইটিসি কার্যক্রম চালু আছে। মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজায় বিদ্যমান কমসংখ্যক টোল বুথগুলোর মাধ্যমে যানবাহন থেকে টোল কালেকশন, বিশেষ করে ঈদের সময় যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষমাণ থেকে টোল পরিশোধ করার কারণে জনভোগান্তি বেড়ে যায়। সে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় টোল কালেকশনকে অধিকতর প্রযুক্তি নির্ভর করা এবং জনভোগান্তি লাঘবে বিদ্যমান মেঘনা সেতু টোল প্লাজার পাশে নতুন আরেকটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকা জোনের আওতায় আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাসহ প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন এ টোল প্লাজায় ৬টি নতুন টোল কালেকশন বুথের সংস্থান রয়েছে। ফলে বিদ্যমান পুরনো টোল প্লাজা ৬টি এবং নবনির্মিত মেঘনা টোল প্লাজা-২ এর নতুন ৬টিসহ সর্বমোট ১২টি টোল বুথের মাধ্যমে টোল কালেকশন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

১২টি টোল বুথের সবকটিতেই ক্যাশ ও ক্যাশলেস (ইটিসি) ট্রানজেকশনের মাধ্যমে টোল দেওয়া যাবে। ফলে যেসব যানবাহন ইটিসি পদ্ধতিতে টোল দেবে তারা বিরতিহীনভাবে অর্থাৎ টোল প্লাজায় না থেমেই দ্রুততম সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে টোল প্লাজায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টোল দেওয়ার চিরাচরিত ভোগান্তি আর থাকছে না। এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে নেই তেমন যানবাহনের চাপ। দূরপাল্লার গণপরিবহন চলছে স্বাভাবিক গতিতে।

গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীরা বাসে করে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। অন্যান্য বার ঈদকে কেন্দ্র করে যেমন যাত্রীদের চাপ থাকে, এবার তেমন নেই। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। মহাখালী বাস টার্মিনালে তেমন যাত্রী নেই। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা জানিয়েছে, বিভিন্ন নৌপথের জন্য অতিরিক্ত লঞ্চ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। যাত্রীর চাপ হলে প্রয়োজনে বিশেষ লঞ্চ পরিচালনা করবেন মালিকরা। বিশেষ ঈদ সার্ভিস থাকবে কিনা তা নির্ভর করবে যাত্রীর চাপের ওপর।

অপরদিকে এখন পর্যন্ত রেলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে পেরেছে বলে গত দুই দিন যাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিল। আগামী দুই দিনও চাপ থাকবে, কারণ গার্মেন্টস ছুটি হবে কাল থেকে। তখনও এমন পরিবেশ থাকবে বলে প্রত্যাশা তাদের। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, কমলাপুর ও এর আশপাশের স্টেশন থেকে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা ৩৩ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে। এদিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রবেশ বন্ধ করতে কড়াকড়ি অবস্থান নিয়েছে রেলওয়ে। দুই দফা টিকিট চেকিং করে যাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন কর্তব্যরতরা। এছাড়া স্টেশনে শৃঙ্খলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বুথ বসিয়েছেন এবং প্ল্যাটফর্মে টহল দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, রোজা ২৯টি হলে আগামী ১০ এপ্রিল এবং ৩০টি হলে ১১ এপ্রিল সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। রোজা ৩০টি ও ঈদুল ফিতর ১১ এপ্রিল ধরে নিয়ে সরকার আগামী ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল (বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ঈদের ছুটি নির্ধারণ করেছে। এর পর ১৩ এপ্রিল (শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল রবিবার নববর্ষের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। পাশাপাশি এবারই প্রথম সংবাদপত্রে ঈদ এবং নববর্ষ মিলিয়ে ৯ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৬ দিনের ছুটি দিয়েছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব।

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

5 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

5 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

5 months ago