এখান থেকে তুমি তিনটি কাজ করতে পারো।
সামনে যে লোকটি, মোটামুটি শুয়োরের মতো দেখতে, বেঢপ ভুঁড়ি, থলথলে শরীর, ক্লিন সেভ- ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে যার ঝরে পড়ছে ইতরামি, কপাল চকচকে হয়ে উঠেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রিন রুমের ভেতরেও, যার বয়স হয়তো ৫০, নয়তো ৫৫; তাকে তুমি আটকাতে পারো। কষে একটা থাপ্পড় দিয়ে বের করে দিতে পারো এখান থেকে।
লোকটা তখন হয়তো একটু গোঙাবে। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে এরা সাথে সাথে রিঅ্যাক্ট করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে বৃত্তের ভেতর থাকতে থাকতে মানুষ হয়ে যায় সবজি। সবাইকে হুকুম দিতে দিতে শরীরের প্রত্যঙ্গগুলো এতটাই অকেজো হয়ে পড়ে যে; এমনকি স্বাভাবিক রিফ্লেকশনেও এরা পার করে দেয় পাঁচ মিনিট। ওই পাঁচ মিনিটের ভেতর তুমি বেরিয়ে আসতে পারো নিমিষেই।
বাইরে কোথাও এখন আছে এজাজ ফেরদৌস পাভলু। আজকের ইভেন্টের ইভেন্ট-ম্যানেজার। খুব ব্যস্ত সে নিশ্চয়ই। আর ঘণ্টাখানেক পরেই দেশের বিখ্যাত-প্রখ্যাত যত পারফরমারদের মঞ্চে ওঠাবে সে। কেউ গাইবে, কেউ নাচবে, কেউ কৌতুক শুনিয়ে হাসাবে পাঁচ হাজার, তিন হাজার আর দুই হাজার টাকার দর্শকদের। কিন্তু তুমি এ-ও জানো, শত ব্যস্ততার মধ্যেও, পাভলু তোমার কথা শুনতে শুধু কান না, পাতবে মনও। গত নয় বছরের ক্যারিয়ারে এটুকু জায়গা তুমি ঠিকই দাঁড় করিয়েছ। তুমি জানো, কোথায় তোমার কথা চলে, কোথায় তোমার হাসি চলে এবং কোথায় চলে তোমার কান্না! তোমার বিশ্বাস, তোমাকে এমনকি ভালোও বাসে পাভলু; সেটা এই শুয়োরের মতো মুখের ভালোবাসা না। শুয়োরটা তোমাকে প্রায় এক বছর ধরে রেখেছে দৌড়ের ওপর। তুমি বুঝতে পারছিলে ধীরে ধীরে তুমি শুয়োরটার নেটওয়ার্কের ভেতর ঢুকে পড়ছো। কখনও টেক্সট, কখনও ফোন। কখনও কখনও গভীর রাতে ভিডিও কল- কি হিরোইন, কেমন হচ্ছে সব?
‘কেমন হচ্ছে’ বলার মধ্যে লোকটার এতই অশ্লীলতা, তুমি এখন ‘হচ্ছে’ শব্দটা শুনেই অনুভব করো বিবমিষা। মনে হতে থাকে নাড়িভুঁড়ি উল্টে কিছু একটা বেরিয়ে আসতে চাইছে প্রচণ্ড শক্তিতে।
পাভলু তেমন না। এই নিয়ে তার সঙ্গে এগারোটা ইভেন্ট করছো তুমি। সেই প্রথম সিনেমা হিটের পর থেকেই। একদিন সে ফোন করে বাসা বয়ে আসে প্রচণ্ড ইতিবাচকতা আর প্রথম ইভেন্টের অফার নিয়ে। ১০ মিনিটের পারফরম্যান্স দিতে হবে পুরো অনুষ্ঠানে, থাকতেও হবে না; ফেরার সময় ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে ফিরবে তুমি। ভেতরে থাকবে ১০ লাখ।
ব্যাপারটা লোভনীয় বলা বাহুল্য! তুমি নখরামি করলে তবু। এই যে তোমার পেশা, নিজেকে পর্দার সামনে রাখা, নিজের শত শত ক্ষত লুকিয়ে অন্যের মনে ঝড় তোলা, অভিনয় দিয়ে দর্শককে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখা, এসবে নখরামি লাগে। তোমার আগের ম্যানেজার, পিও আপা, সে তো আরও ভেঙেচুড়ে বলতো- ছেনালি করবি। ছেনালিপনাই আসল। তোর আর দর্শকের পাশের বাড়ির বাড়ন্ত মেয়েটার মধ্যে পার্থক্য শুধু এইটাই যে, তুই ছেনালি করতে পারিস। নাইলে কোন মানুষ অ্যাক্টিং করবার পারে না, বল?
কথা সত্য।
তুমি যত মানুষকে চোখের সামনে ভান করতে দেখেছো, তত ভান ক্যামেরার সামনে দেখোনি। এই যে তুমি চুলটা পিঠের ওপর ছড়িয়ে, বুকের ভাঁজটা একটু দেখিয়ে সবার সামনে আসো, সবাই তোমার কী কী দেখে, কোথায় কোথায় চোখের চাটা চাটে, তুমি জানো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যখনই তারা মুখের বোল ফোটায় যেন কথা না, অমৃত ঝরছে, যেন চোখে ফোটাচ্ছে শিউলি, হাসিতে উপচে পড়ছে মধু। এমন ভান করে বেচারারা, মনে হয় যেন একেকটা নবজাতক শিশু!
হাসো তুমি।
নবজাতক শিশুই বাঙালি পুরুষগুলো। বুকেই এত নজর এদের! মায়ের বুক ছেড়ে আসার কষ্ট শুধু প্রেমিকা বা স্ত্রী দিয়ে মেটাতে পারে না। প্রতিদিন দশ হাজার বুক আর বিশ হাজার কম্পন লাগে পুরুষগুলোর।
নখরামি তোমার আছে, আছে ছেনালিও। যারা কাছে আসে, তারা এসব জয় করেই আসে। পাভলুও আসে সেভাবে এবং অতি আশ্চর্যের বিষয় সে এসে নিজের সীমানা সম্পর্কেও সচেতন থাকে, অনেক দিন পর্যন্তই, এত দিন তুমিও আশা করোনি। ফলে চার নম্বর ইভেন্টে তুমি তাকে বলেই ফেলো- কয়টা গার্লফ্রেন্ড তোমার?
পাভলু বুদ্ধিমান। ইশারা বুঝতে দেরি হয় না। হেসে বলে, গালফ্রেন্ড নাই তো। বউ আছে। একটা। সেও মফস্বলে।
হাত মারো কাকে ভেবে?
আর যারেই ভাবি, তোমারে ভাবি না। টেনশন নিও না!
হাসো তুমি। বলো, তুমি তো দেখি ঋষি হইয়া যাইতেছ। আমার বুকের দিকে না তাকায়া দেশের কেউ যে থাকতে পারে জানা ছিল না!
ফলে পাভলুকে তোমার বন্ধু মনে হয়। এতটাই যে মাঝে মাঝে তার লিঙ্গবিচার করতে বসো। আসলেই সে পুরুষ তো? অবশ্য পাভলু বলেছিল, আমি তো তোমারে আর মেয়েই মনে করি না। তুমি আমার বাডি!
বেইজ্জতিই বলা যায় এটাকে। ভরা শরীর নিয়ে পাশে-পাশে ঘুরফির করার পরও যদি তোমাকে কেউ মেয়ে না মনে করে, তোমার জন্ম আর সার্থক কোথায়? কিন্তু, তবুও, পাভলুর এ কথায় তোমার কেমন আরাম আরাম লাগে। এত শরীর-শরীর চারদিকে, এত স্থূল দৃষ্টিপাত দশপাশে যে তোমার মনে হয়, একটা কোথাও তুমি মেকআপ ছাড়াও যেতে তো পারো। একটা কোথাও তুমি মানুষ হয়েও দাঁড়াতে পারো। একটা কোথাও তুমি পাঁচটা গানের হিরোইন না, নায়কের বুকে মাথা রাখা সস্তা ডায়লগ বলা ছেনালিপনা না, একটা কোথাও তুমি শুধুই তুমি।
ফলে দেশসেরা এই শুয়োরকে ঘোল খাইয়ে তুমি পাভলুর কাছে যেতেই তো পারো। পাভলু তোমাকে সাময়িক শেল্টারও দিয়ে ফেলবে হয়তো। হয়তো তোমাকে পাঠিয়ে দেবে তার বন্ধুর কোনো রিসোর্টে। যার কথা বিবেচনায় আনতে পারবে না দেশবরেণ্য শুয়োরসমষ্টি। তাতে কয়েকটা দিন তুমি আত্মগোপনে থ্রিল-থ্রিল ভাব নিয়ে থাকতেও পারবে। নিজেকে কল্পনায় হলিউড-বলিউড করেও রাখতে পারো তখন কিছুদিনের জন্য। কিন্তু তারপর? তারপর কী?
শুয়োরটার যেহেতু টাকা রয়েছে; এ দেশে টাকা থাকা মানেই যে সব থাকা, সব থাকা মানেই যে চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকা, পকেটে থাকা সমাজ-রাষ্ট্র-সুধীসমাবেশ তুমি তা খুব ভালো করেই জানো। আত্মগোপনে যাও বা যাও মঙ্গলগ্রহে, শুয়োরটা তোমাকে বের করে নিয়ে আসবে সামনে। অথবা এসবের কোনো দরকারই পড়বে না তার। সে একটা ইশারা করলেই, যে-তুমি ফিল্মের হটকেক, সে-তুমি হয়ে পড়বে এক ঠোঙা নিঃস্ব বাদাম। তোমাকে খেয়েদেয়ে লোকজন ফেলে রাখবে রাস্তায়। তুমি ঠোঙা হয়ে এরপর উড়বে আকাশে-বাতাসে। গোত্তা খেয়ে চিরদিনের মতো পড়বে নিতান্ত ফুটপাতে। সে পতন শিউলির মতো সুন্দর না, বরং নর্দমার মতো কুৎসিত। তোমাকে কোনো প্রযোজক, কোনো নায়ক, কোনো পরিচালক, কেউই কাজে নেবে না। তুমি বলে যে কেউ এতদিন বাজারমাত করে রেখেছিল, পোস্টারে যে তুমি আগুন ধরিয়ে দিতে পারতে যে কোনো সময়, এসব কেউই আর মনে রাখবে না। খুব ভালো করে জানো, নায়ক হারালে তবু স্মৃতি হয় তার, নায়িকা হারালে কোনো শূন্যতাও আসে না এ প্লাস্টিক বাজারে।
ফলে, তুমি আসলে পড়বে মাইনকা চিপায়।
অবশ্য এখনও কম চিপায় যে তুমি পড়োনি, তা না!
শুয়োরটা এসে বসেছে তোমার পাশেই। তার শরীর থেকে অ্যালকোহলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। খুব দামি কোনো ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ডটা এমনকি তোমার পরিচিতও ঠেকছে। কিন্তু আসি আসি করেও নামটা মনে আসে না তোমার। তাতে অস্বস্তি বাড়ে। এ রকম এক উদগ্র পরিস্থিতির ভেতরেও তোমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ব্র্যান্ডের নামটা খুঁজতে। না পেয়ে নিজের ওপরেই নিজের রাগ জমতে শুরু করে। সেখান থেকে মন সরাতেই শুয়োরটার চোখের দিকে তাকাও তুমি। চোখের কোল দুটো কবেই যে কোলবালিশ হয়েছে কে জানে! জায়গাগুলো অনেকটা লালচে। এলার্জিও হতে পারে। কিন্তু তোমার মনে হয় ওখানে আসলে বছর বছর রক্ত জমেছে। কীসের রক্ত কে বলতে পারে, কিন্তু তোমার মনে আসে রক্ত খাওয়া মশার লাল-কালচে পাছার কথা। মৃদু হেসেই ওঠো তুমি। আর তাতেই দারুণ আস্কারা পেয়ে যায় শুয়োরটা। এ তো সেই পুরুষ প্রজন্ম, যারা নারীর ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ বলে জানে। নারীর অনিচ্ছাকে ইচ্ছা বলে মানে। তাই তোমার হাসি তাকে আশ্বস্ত করে, এমনকি তাতিয়েও তোলে। এতটাই যে, ডানহিলের প্যাকেট কেঁপে ওঠে তার হাতে। আঙুলগুলো ফস করে জ্বালিয়ে ফেলে সিগারেট। তোমাকে অফারও করে পুরুষ্ট ঠোঁট দুটো- খাবা?
সিগারেট তুমি খাও না। কিন্তু এ জীবনে বহুবার সিগারেট তোমাকে খেতে হয়েছে। শুধু পর্দায় না, পর্দার বাইরেও। নায়ক বাড়িয়ে দিলে নিতে হয়েছে সিগারেট, প্রযোজক বাড়ালে তো উপায় থাকে না কোনো, নিতেই হয়। আচ্ছা করে দম ছেড়ে ঠোঁট গোল করে ধোঁয়া ছাড়তে হয়। এসব না করা মানে অতি বেয়াদবি। ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হলে তোমার বেয়াদবি করা চলবে না। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে এমন বেয়াদবি কয়েকবার করেছিলে তুমি। বলেছিলে, আমি তো সিগারেট খাই না!
হঠাৎই রুমের ভেতর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সব। ওরা সবাই মিলে এমন করে তাকিয়েছিল যেন এই যে তুমি নায়িকা ফিল্মের, এই যে তোমার ঢলোঢলো মুখ-চোখ, এই যে তোমার শরীরে কামনার জ্বালাপোড়া, এসবের মধ্যে এই যে তুমি সিগারেট খাবা না বললা, তুমি তো দেখি নাচতে নেমে ঘোমটা দেওয়া পার্টি! তুমি তো দেখি ধরি মাছ না ছুঁই পানির দল! তুমি তো দেখি আস্ত একখানা শহরছাড়া বেয়াদব! তুমি সিস্টেম বোঝো না!
তবু, সিস্টেম না বোঝা বেয়াদবিটা তুমি করো। বলো, আমি তো খাই না স্যার!
শুয়োরটা মাথা নাড়ায়- আমিও ছাড়ার চেষ্টা করতেছি। রেহনুমা খুব বকা-ঝকা করে এইসব নিয়া!
রেহনুমা?
আমার স্ত্রী। বকাঝকা ছাড়া কিছুই করবার পারে না। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থাকে। সকাল-বিকাল ফোনে আমাকে খালি ঝাড়ি মারে। বলে, আমি নাকি বিজনেসের জন্য না, তোমাদের জন্য দেশে পড়ে থাকি!
আমাদের জন্য?
এই যে ইভেন্ট-টিভেন্টে টাকা-পয়সা দেই, কোম্পানির বিজ্ঞাপন করতে গিয়া লেড়কিদের সাথে ঘুরি-ফিরি, এইটা মিন করে আসলে। অত্যন্ত মিন মহিলা!
তুমি জানো এরপর কথাবার্তা কোন দিকে এগুবে। বহুবারই ঘটেছে এমন। অভ্যস্ত তুমি। এবার লোকটা তার স্ত্রীর কুৎসা করবে বেশ কিছুক্ষণ। ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝাবে এই উৎকট মহিলার জন্য তার জীবন কীভাবে তেজপাতা হয়ে গেছে। তারপরই শুরু হবে বাঙাল পুরুষের বিশেষ কাঙালপনা। কেউ তাকে ভালোবাসে না। একটু ভালোবাসা পেলে সে মরে যেত। কেউ কেউ বলে অবশ্য একটু ভালোবাসা পেলে সে বেঁচে যেত!
বাঁচা কিংবা মরা, তোমার কাছে আসলে লাগে একই। বাঁচতে মরতে পারার মতো একটু ভালোবাসাও এরা পায় না, কারণ একটুও ভালো এরা বাসতে পারে না; না মনে বাসতে পারে, না শরীরে। এদের শুধুই ছোঁকছোঁক। ওপর ওপর ল্যাপ্টালেপ্টি ভালোবাসা! ওইটা আর যাই হোক ভালোবাসা না!
যদিও বিস্ময়ের, শুয়োরটা তার বউয়ের কুৎসার দিকে না গিয়ে আলটপকা জানতে চায়- বয়ফ্রেন্ড আছে তোমার?
কখনো কেউ এমন প্রশ্ন করেনি তোমাকে। সত্যিই করেনি। এমনকি নিজেও তুমি নিজেকে করোনি কখনো। আর ওই ত্যাড়াব্যাকা সাংবাদিকেরা, তারাও না। তারা বয়ফ্রেন্ড আছে কি নেই এসবের মিনিমাম ধার ধারে না। তারা বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলে যখন যার প্রয়োজন পড়ে। লিখে দেয়- গভীর রাতে নায়িকার ফ্ল্যাটে নায়ক। গোপনে সারলেন বার্থডে অথবা অমুক-অমুককে দেখা গেল ফিফিতে ফেসবুক ভরেছে হিহিতে! প্রেমের বয়স তাদের কত?
প্রিন্ট মিডিয়া কি টিভি-ইউটিউব, এমন খবরের জন্য মুখিয়ে থাকে ভোক্তারা। আসামাত্র পড়ে। তারপর করে গালাগালি- মিডিয়াটা শালা শ্যাষ হইয়া গেছে রে। আগের মতন আর সাংবাদিকও নাই, সাংবাদিকতাও নাই! ছিছি!
আগের মতো কিছুই নাই আসলে। আছে শুধু শুয়োরগুলো। পয়সার ঢেঁকি সব। পয়সা দিয়ে কিনতে চায় যা খুশি। সময়, শরীর, মন, জীবন। এরা আছে একই রকম। একই রকম ছিল। থাকবেও আসলে এই একই রকম।
কোথাও শুনি না তো। তাই ভাবছি, নাই বয়ফ্রেন্ড?
না তো!
ভালো তাহলে কাউরেই বাসো না তুমি?
এই প্রশ্নে এসে তুমি একটু থমকে যাও এবার। ভালো কি সত্যিই কাউকে বাসো নাকি তুমি? ভালোবাসার কথামাত্র পাভলুর মুখটা এসেই মিলিয়ে যায় যেন কোনো ফ্ল্যাশ! অথচ পাভলু তো বড়জোর বন্ধু, তাই না? নাকি বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু? খুব চলে যে তোমাদের বাজারে জাস্ট ফ্রেন্ড, পাভলু তো তোমার সেটিও না। তাহলে, পাভলু তোমার কে?
শ্যামলা আছে পাভলু। চোখগুলো সাদাটে বেশি। তবে অদ্ভুতভাবেই জ্বলজ্বলে। যেন সবসময় কিছু না কিছু বলার আছে সেগুলোর। মুখে এলোমেলো দাড়ি। তিন মাসে একবার ট্রিম করে কি না কে জানে! কিন্তু সব মিলিয়ে পাভলুকে দেখতে বেশ লাগে। আবার চোখে দেখার বাইরেও, তাকে, তুমি মনেও যেন কেমন করে দেখতে পাও। তাকে বিশ্বাস করো। আর এখন মনে হচ্ছে একটু একটু ভালোও হয়তো বাসো। যেদিন সে বলেছিল- তোমাকে আমার মেয়ে মনে হয় না, সেদিন থেকেই হয়তো তাকে ভালোবাসার খানিকটা জায়গাও দিয়ে বসেছো তুমি।
শুয়োরটা ঘেঁষে এসেছে এবার। তুমি জানো তোমার বাকি দুটো অপশন কী কী! এখন থেকে ব্যাপারটাকে আরেকটু গড়াতে দেবে তুমি। তবে তার আগে ফোনের রেকর্ডার অন করে নিতে হবে তোমার। শুয়োরটার যত রকমের ঘোঁৎঘোঁতানি আছে, সব রেকর্ড করে ফেলতে হবে এরপরই। তারপর আচমকা থামিয়ে দিতে হবে শুয়োরটাকে। শুনিয়ে দিতে হবে রেকর্ড করা তার ফ্যাচফ্যাচানি। ধরতে গেলে ব্যাপারটা অত্যন্ত সহজ। এর আগেও কয়েকবার কাজে দিয়েছে। এরা ক্ষমতাবান হলেও চরিত্রের ব্যাপারে অত্যন্ত ভীতু প্রকৃতির। এদের কাছে চরিত্র মানেই অবশ্য যৌনতার চরিত্র। ঘুষ, দুর্নীতি, এমনকি মানুষ খুন করলেও এদের চরিত্র থাকে পুষ্পসমান পবিত্র। চরিত্র যায় শুধু অসামাজিক যৌনতায়। অথচ তার জন্য থাকে জীবনভর লালায়িত। ফলে, এই যে শুয়োরটা এখন আদর মাখানো কথা বলা শুরু করবে, লুতুপুতু প্রেমালাপ আরেকটু বাড়িয়ে বললে শুরু করবে যৌনালাপ, সেগুলো রেকর্ড করে ফেলতে পারলেই শুয়োরটার দাঁত ঢুকে যাবে চোয়ালের ভেতর। বিষ নেমে যাবে পায়ে। বিচি উঠবে কাঁধে।
ফারিহা খানও করেছিল একই কাজ। বলা যায়, সফলই হয়েছিল।
বছর দুয়েক আগের কথা। এসজি গ্রুপের ছোট ছেলে হাত-পা ধুয়ে লেগেছিল ফারিহার পেছনে। সকাল-বিকাল জোর করে চালাত ফোনালাপ। মাগি ছাড়া কোনো সম্বোধন ছিল না মুখে। চোখ-মুখ বুঁজে সব সহ্য করেছিল ফারিহা অনেক দিন ধরেই। কিন্তু বেলায়েতের মহরতে স্কার্টের ভেতর যেদিন ওই জুনিয়র এসজি গ্রুপ হাত ঢুকিয়ে দেয়, ফারিহা আর এক মুহূর্তও দেরি করে না। পরের দিনেই ফোনালাপ বাজারে সয়লাব। এসব জিনিস ভাইরাল হতে যে বিন্দু পরিমাণ সময় নেয় না তা সবাই জানে। যেন আগুন লাগে নেট দুনিয়ায়। শুধু ছোট ছেলে না, এসজি গ্রুপই আচমকা মাইনকা চিপায় পড়ে যায়।
কিন্তু এখন তোমার মনে হয়, সত্যিই কি মাইনকা চিপায় পড়েছিল এসজি গ্রুপ? তাদের ছোট ছেলে?
কিছুদিন ছি ছা হয়েছিল এটা সত্য। যত দূর শুনেছিলে ছেলেটা নাকি দেশও ছেড়েছিল। মালয়েশিয়ায় তাদের ছড়ানো বিজনেস। সেখানে গিয়েই ছিল ক’দিন। কিন্তু ঘটনা তো ওই পর্যন্তই আসলে। ফারিহা খানই বরং এরপর দুটো সিনেমা থেকে ড্রপ হয়েছিল। আটকে গিয়েছিল একটা সিনেমার রিলিজ। ওয়েব ফিল্ম ছাড়া নাকি তার কাছে এখন কোনো কাজ নেই; পাভলুই তো জানালো সেদিন!
শুয়োরটা বলে, এসি কততে দেয়া?
তুমি কিছু বলো না।
শুয়োরটা বলে, গরম লাগতেছে না?
তুমি ছোট্ট করে শ্বাস ফেলো। খেলাটা শুরু হতে যাচ্ছে। কী করবে তুমি?
শার্টের বোতাম খোলে শুয়োরটা। বুকের পশমগুলো পর্যন্ত সাদাটে হয়ে গেছে মালটার। হাড়সাদা চমড়া ভেতরের। ক্ষুদে ক্ষুদে লালচে আঁচিল তাতে বেশ কিছু। এরই মধ্যে লোকটা আরো দুটো বোতাম খুলে ফেলেছে। বেরিয়ে এসেছে তার বাম বুকটা। কী অসম্ভব থলথলে চর্বি! আরেকটু থেবড়ে গেলে পেট থেকে আর আলাদাই করা যাবে না। শুয়োরটা ইচ্ছা করেই হাঁসফাঁস করে কিনা কে জানে! বলে, গরম লাগতেছে না তোমার?
মোবাইলে হাত দাও তুমি এবার। এরপর যা ঘটতে যাবে তার শুরুটাও যদি কোনোমতে রেকর্ড করে ফেলতে পারো, শেষটা হবে তাহলে অন্যরকম। বলা যায়, একটা বোতামের চাপে শুয়োরটার কাছ থেকে সারা জীবনের মতো মুক্তি পাবে তুমি। এখন যেমন তুমি ভয় পাচ্ছো, শুয়োরটা তখন তোমাকে ভয় পাবে। রেহনুমার ভয়, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ছেলেমেয়েদের ভয়, কোম্পানির হাজার হাজার কর্মচারীর ভয়। তুমি জানো, তোমার মুক্তি তোমারই মুঠোর ভেতর।
কী ফোন তোমার? দেখে ফেলেছে শুয়োরটা- আইফোন না?
তুমি হাতে নিয়েই বসে থাকো ফোনটা। আইফোনই এটা। কিন্তু যাই ফোনই হোক না কেন, কী আর যায় আসে এখন! হাত বাড়িয়ে দিয়েছে লোকটা, দেখি! দাও তো।
ফোনটা দিতে চাও না তুমি। কিন্তু না বলার উপায়ও নেই আসলে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাড়িয়ে দাও হাত। লোকটা স্ক্রিনে তোমার ছবি দেখে। ঠিক বুকের ওপর তার মধ্যমা রাখে। চালাতে থাকে স্ক্রিনের ওপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে। যেন বিশেষ কোনো জায়গায় আঙুলটা নাড়াচ্ছে। মুখটা থুতুতে ভরে ওঠে তোমার। তুমি বুঝতে পারছো তৃতীয় বিষয়টা ঘটানো ছাড়া তেমন কিছু করার নেই তোমার। যদিও পুরো বিষয়টা আসলে খুব বেশি হলে মিনিট পাঁচেকে দাঁড়াবে। সাড়ে চার মিনিটের কচলাকচলি এবং কয়েক সেকেন্ডের চড়াই-উতরাই। তারপর দাঁত কেলিয়ে শুয়োরটা বলবে, তুমি যে হট! আউট হয়ে গেলাম এইবার একটু তাড়াতাড়ি!
কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়াও তুমি। কালো টপসটা খুলে ফেলো। ম্যাচিং ব্রা ছিল, খোলো সেটিও। লোকটা সোফায় শরীর এলিয়ে দেয় এর মধ্যেই। চোখের কোলের ওপর জমে থাকা রক্তগুলো যেন প্রাণ পায়। তুমি অপেক্ষা করো এবার। জানোই তো এখন কী ঘটবে! ছুটে আসবে লোকটা। তারপর ধড়ফড় করে এ-বুক ও-বুক যাবে কিছুক্ষণ। তার থুতুর গন্ধে অল্প সময়ের মধ্যেই বাতাসটা হয়ে উঠবে ভারী। শ্বাস নিতে আর স্বস্তি পাবে না তুমি। নাক-মুখ কুঁচকে আসবে তোমার, আর ঠিক তখনই লোকটা একটা বুক হাতের ভেতর নিয়ে মুখের ভেতর ঠেসে দেবে।
ঠেসে দেয়াই। এটা কোনো চুমু তো না। চুমু তোমাকে অনেক দিন কেউ খায়নি। যখন ক্যারিয়ার সিঁড়ি পাচ্ছিল, তখনও যখন দু’য়েক জন প্রেমিক জুটেছিল কপালে, তারাও শেখেনি চুমু দিতে। তারাও সুযোগ পেলে ঠোঁটে ঠোঁট ঠেসে দিতো শুধু। এরপর এমন চাপাচাপি করত, দমবন্ধ ছাড়া আর কিচ্ছু লাগত না। তারপর সেই চিরন্তনি ধড়পাকড় এবং শুইয়ে ফেলা।
এরপর ক্যারিয়ারের যত ওপরের দিকে গেছো তুমি, প্রেমিকগুলো ততই বাজে বাজে জুটেছে তোমার। আর যখন চূড়ায় তুমি, ভয়ে প্রেমিক হতে এগিয়েই আসেনি কেউ। সাফল্য তোমাকে একা করেছে। সাফল্য যে-কাউকেই সম্ভবত একা করে ফেলে; মেয়েদের করে আরো বেশি। কে না জানে, ছেলেগুলোর ভিত্তি এতই নাজুক অবস্থায় থাকে যে, মেয়েদের ওপরে ওঠাকে তারা নিজেদের অধঃপাত হিসেবে বিবেচনা করে!
তুমি এখনও একা। দাঁড়িয়ে আছো। হিসাব মতো আসার কথা থাকলেও শুয়োরটা আসে না। এলিয়েই থাকে সোফায়। তারপর হাত দিয়ে পাশের শূন্য জায়গাটা দেখিয়ে দেয়।
তুমি সময় নাও কিছুক্ষণ। এগিয়ে যাও সেখানে ধীর পায়ে। বসো। যেখানে শুয়োরটা দেখিয়ে দিয়েছিল, সেখানেই।
শুয়োরটা ধীরে ধীরে তোমাকে কাছে টেনে নেয়।
চোখ বন্ধ করে নাও তুমি। তুমি চাও পুরো ব্যাপারটা চোখের পলকে শেষ হয়ে যাক। কিন্তু তা হয় না। শুয়োরটা প্রেমিকের মতো আচরণ করতে থাকে। তোমাকে মিষ্টি একটা চুমু উপহার দেয়। তারপর তোমার শরীরজুড়ে আদর করতে থাকে খুবই ধীরে ধীরে। তোমার প্রথমে অদ্ভুত লাগে এ ধরনের স্পর্শ। যেন তোমাকে জাগাতে চাইছে, তোমাকে নিয়ে ভাবতে চাইছে লোকটার আঙুলগুলো। প্রতিটি নতুন স্পর্শে যেন তোমার অনুমতি চাইছে। এমন স্পর্শ শেষ কবে পেয়েছো তুমি?
মনে পড়ে না তোমার।
চোখ খুলতে বাধ্য হও তুমি। দেখো, থলথলে শরীর নিয়েও লোকটা যেভাবে তোমাকে ভালোবেসে যাচ্ছে, তোমার এতটুকু কুৎসিত লাগছে না ব্যাপারটা। মনে হচ্ছে না তুমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছো। মনে হচ্ছে না আর কোনো অনিচ্ছা আছে তোমার।
প্রথমবারের মতো সাড়া দাও তুমি। লোকটাকে জড়িয়ে ধরো।
এরপর পরের বিষয়গুলো ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে। মঞ্চে ওঠার জন্য তোমার ডাক আসে। কিন্তু তুমি তাদের ফিরিয়ে দাও। তুমি লোকটাকে দৃষ্টির বিপরীতে দৃষ্টি, স্পর্শের বিপরীতে স্পর্শ, চুমুর বিপরীতে চুমু দিতে থাকো।
অনেক অনেক অনেক দিন পর তোমার কান্না আসে। কেন আসে তুমি জানো না। এ কান্না কোথায় ছিল এতদিন সেটিও জানো না। কিন্তু কাঁদতে তোমার ভালো লাগে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শুয়োরটাকে তুমি ভালোবেসে যেতে থাকো। ভালোবাসতে বাসতে তোমার মনে হয়, তুমি কি এই মানুষটাকেই ভালোবেসে ফেলবে? পাভলুর কথা তোমার একবার মনে আসে চকিতে। কিন্তু ততক্ষণে শুয়োরটা তোমার কানে কানে বলে ওঠে, পাভলু ছেলেটা কিন্তু ভালো, তাই না! কী চমৎকার সেটিংটা করায়া দিলো। ওরে নাইলে আরও এক লাখ বাড়ায়া দিমু। তোমার ভালো লাগতেছে তো? নেক্সট মান্থে সিঙ্গাপুর যাইতেছি যাবা তুমি? যাবা?
তোমার কান্না হঠাৎ করেই শুকিয়ে আসতে থাকে। তুমি চোখ দুটো বন্ধ করে নাও এরপরেই।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…