Categories: Bangladesh News

ঈদ যাত্রায় সদরঘাটে টিকিট বিক্রির চাপ নেই


আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অগ্রিম টিকিটের বেচা বিক্রি নেই। ঈদ যাত্রা শুরু হলেও টিকিট কাউন্টারগুলোতে কাঙ্খিত যাত্রীর দেখা মেলেনি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক পথে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এক সময়ের ভরসাস্থল নদীপথের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে ঢিমেতালে।

আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না হলেও ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে আশানুরূপ যাত্রীর দেখা না পেয়ে বরাবরের মতোই হতাশ লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও অনেকটাই সুনসান বিরাজ করছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায়। লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও এখনও তেমন সাড়া মিলছে না যাত্রীদের। টার্মিনাল এলাকায়ও নেই তেমন হাঁকডাক। কিছু যাত্রী এলেও সক্ষমতার তুলনায় নগণ্য।
লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন ঢাকা থেকে অন্তত অর্ধ লাখ মানুষ লঞ্চে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেত। কিন্তু এখন তা অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে।

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা বরিশাল রুটে ৩৮টি নিয়মিত লঞ্চসহ ঈদের বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে। তবে এখনো আশানুরূপ টিকিট বিক্রি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তারা।

যাত্রীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চের টিকিটের তেমন চাহিদা নেই। তবে রোটেশনের কারণে ট্রিপে লঞ্চ কম থাকায় ছুটির দিনগুলোর আগে যাত্রীচাপ থাকে ঢাকা-বরিশাল রুটে। তখন কালোবাজার ছাড়া টিকিট পাওয়া দায় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যেসব লঞ্চ দিয়ে ঈদ যাতায়াত পরিচালিত হবে, সেগুলোর মোট যাত্রীধারণ ক্ষমতা প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার। তবে ঈদের চাপ সামাল দিতে এসব লঞ্চে প্রতিদিন বাড়তি মানুষ পরিবহনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন আনুমানিক এক লাখ ৭৪ হাজার একমুখী যাত্রী পরিবহন করবে এসব লঞ্চ। ঈদ শেষে ফেরার পথে একই সংখ্যক মানুষ ঢাকায় ফিরবে।

প্রতিদিন সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৩১টি নৌপথে নিয়মিত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তা দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে। ঈদের আগে-পরের প্রায় ১৫ দিন ছোটবড় মিলিয়ে ১৭৫টি লঞ্চ যাতায়াত করবে। আগে ঢাকা থেকে ৪১টি নৌপথে লঞ্চসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন নৌযান চলত। নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে অনিয়মের কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলগামী ১০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ৩১টি নৌপথে ১৭৫টি লঞ্চে ঈদযাত্রীদের আনা-নেওয়া করা হবে। ঘরমুখী মানুষকে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে দিতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস। এবার ঈদে নৌপথে সাড়ে ২২ লাখ যাত্রীর ঢাকা ছাড়ার কথা। তবে ঈদে নৌপথে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে না বলে দাবি করছেন মালিকপক্ষ। তবে পর্যাপ্ত টিকিট বিক্রির ধুম না দেখে হতাশা প্রকাশ করছেন তারা। তবে আশা রাখছেন লঞ্চ ছাড়ার আগ মুহূর্তে টিকিট বিক্রির চাপ বাড়বে।

এবার যারা নৌপথে বিভিন্ন লঞ্চে গন্তব্যে যাবেন তাদের বেশির ভাগই বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী। বাকি যাত্রীরা যাবেন চাঁদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তবে ঈদে সদরঘাট থেকে চাঁদপুর ও ইলিশা এ দুই রুটে লঞ্চ চলাচল বেশি। যাত্রীও মোটামুটি বেশ ভালো। চাঁদপুরের যাত্রীদের পাশাপাশি নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের যাত্রী থাকায় এ রুটের লঞ্চে মোটামুটি যাত্রী থাকে।

লঞ্চের টিকিট বিক্রেতারা জানান, ঈদ কেন্দ্রিক লঞ্চে যাত্রী এখনো বাড়েনি। কিছু কিছু লঞ্চে কয়েকটি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে ২৫ রমজান থেকে ঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।

সুন্দরবন-১১ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা মামুনুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত কেবিনের কোনো চাপ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে হয় কিনা তা আমরা এখনো জানি না। গতবারের যে চাপটা ছিল এখন আর ওই চাপটা নেই। এখন টিকিট বিক্রি আগের তুলনায় কম হচ্ছে।

এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের স্টাফ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের আগে ৭ এপ্রিল ট্রিপ আছে। এখনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। অগ্রিম টিকিট ছাড়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। টিকিট পেতে হলে যাত্রীদের ট্রিপের দুই দিন আগে এসে খোঁজ নিতে হবে।

সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার স্টাফ শাকিল হোসেন জানান, গত বছর যে রকম চাপ ছিল, এবার তেমনটা নেই। টিকিট বিক্রি অনেকটাই কম হচ্ছে এবার।

এমভি পূবালী-৬ এর টিকেট বিক্রয়কর্মী জাকারিয়া ইসলাম বলেন, এখনও উল্লেখযোগ্য ঈদ যাত্রী পাচ্ছি না। অল্প কিছু পাচ্ছি। তাতে যে আমাদের লঞ্চ পূর্ণ হয়, ব্যাপারটা এমনও না। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ছে- এটা ঠিক। আর অগ্রিম টিকেট নিতে আসছে বেশি।

হতাশা প্রকাশ করে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১৮ লঞ্চের সুপারভাইজার মোখলেছুর রহমান বলেন, সারাদিন লঞ্চে বসে থাকি। দুপুর পর্যন্ত একটিও অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সড়কপথে যাচ্ছেন। এজন্য এখন ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় কম।

একই সুরে এম ভি ওয়ালিদ-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার জিয়াউল হক বলেন, অন্যান্য রুটের তুলনায় আমাদের রুটেই যাত্রী কিছুটা বেশি। তবে ঈদ কেন্দ্রিক যাত্রীদের যে চাপ আসে এটা এখনো শুরু হয়নি। ঈদের ২-৩ দিন আগে চাপ থাকবে বলে আশা করছি। তবে ঘোষণা দিয়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় না। মালিকদের থেকেও ওরকম কোনো নির্দেশনা নেই। তবে টিকিট চাইলে আমরা দিতে পারছি। আগের দিনের সেই সদরঘাট এখন আর নেই। অগ্রিম টিকিটের চাপও নেই।

লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম খান বলেন, সাধারণ সময়ে যাত্রী টানতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেওয়া হয়। সরকারি ভাড়া ৪৫০ টাকার মতো আছে। আমাদের এখন ভাড়া আছে ৩৫০ টাকা। আর ঈদের আগ মুহূর্তে এটা সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নিবে। এর বেশি কোনোভাবেই নয়।

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে নৌপথের যাত্রী অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এরপরও নৌপথে ঈদে ঘরমুখী মানুষের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, লঞ্চে এখন ভিড় কম। যাত্রী না থাকার কারণে যেসব লঞ্চ বন্ধ ছিল চাপ বাড়লে সেসব চলবে। অগ্রিম টিকিট হয় কেবিনের ক্ষেত্রে। যাদের অগ্রিম টিকিট প্রয়োজন, পরিচয় আছে তারা ফোনে বুকিং নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, নানাবিধ কারণে বর্তমানে লঞ্চ সংখ্যা কমে গেছে। এখন ৪১টি রুটে প্রায় ৬০টির মতো লঞ্চ চলছে। ঈদের চাপ এখনো শুরু হয়নি। ২৫ রমজানের পর যাত্রীদের চাপ বাড়বে। চাপ সামাল দিতে বিশেষ লঞ্চ চলবে। এ চাপের উপর নির্ভর করছে যেসব রুটে এখন লঞ্চ চলছে না, সেসব রুটে কি লঞ্চ চলবে বা কতটি লঞ্চ চলবে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব, মেট্রোপলিটন পুলিশ, নৌ-পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস দল উপস্থিত থাকবে।

টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, ঈদকে ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্র যেন কোনোভাবেই মানুষকে বিপদে ফেলতে না পারে- সবকিছু আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। পুলিশের টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। টার্মিনালে সবসময় পুলিশ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্যরা থাকবে, সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে। আর টার্মিনালে র‌্যাবের সদস্যরাও অবস্থান করবেন। ঈদের আগ মুহূর্তে ভিড় হতে পারে। আর সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।



Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

5 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

5 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

5 months ago