Categories: Bangladesh News

ঈদে প্রিয়জনের কাছে ফেরা হোক নিরাপদে


রমজানে টানা এক মাস রোজা শেষে খুশি নিয়ে হাজির হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সেই খুশিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে ছুটে আসে সবাই। ঈদযাত্রায় পথে পথে লাখো মানুষের চলাচল ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে এই যাত্রা কোনো কোনো পরিবারে আনন্দকে বিষাদে পরিণত হয়। এত মানুষের একসঙ্গে ঘরে ফেরার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা। ঈদ উদযাপন মানেই ঘরে ফেরা, প্রিয়জনের কাছে ফেরা। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সব স্তরের মানুষের মাঝে, ঈদে বাড়ি ফেরা হোক নিরাপদ।

প্রতি ঈদে মানুষ নিজ বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে যায়। লক্ষ্য— ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে মানুষ ছুটছে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু, আমাদের দেশের সড়কগুলো যেন হয়ে উঠছে এক একটি মৃত্যুফাঁদ। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে, আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩ এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে  প্রায় ৮৭ জনের। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে মানুষের জীবন বাঁচাতে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দরকার ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।

সামনে ঈদুল ফিতর। বিগত বছরগুলোর মতো এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ঈদযাত্রায় ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী ১৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৬ জন নিহত এবং ২৫৮ জন আহত হন। সেজন্য ঈদের ছুটি উপলক্ষে সড়কগুলো নিরাপদ করতে এখন থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে এত সংখ্যক লোকের মৃত্যু খুবই উদ্বেগজনক। এতে জিডিপির তিন শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫৯৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২৩ জন নিহত এবং ৭২২ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩১ জন আহত হয়েছেন। বিশ্বে ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে দরকার সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন।

সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ এ সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ওই বিধিমালায় গাড়ির গতিসীমা, সিটবেল্ট, মানসম্মত হেলমেট, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশু আসন ইত্যাদি বিষয়ে পরিপূর্ণ দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। বেপরোয়া গতি, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা করা, সাইকেল-রিকশা-মোটরগাড়ি একই সঙ্গে চলাচল করার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও চালকরা তার কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিবছর ঈদ-পূর্ব যাতায়াতকালে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ দ্রুত নেয়া দরকার, তা হলো—অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণ করা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা; মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। সড়ক দুর্ঘটনা এড়িয়ে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হলে মোটরসাইকেল চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সড়কে এখন সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে মোটরসাইকেলের কারণে। তাছাড়া, ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্টদের নজরদারি জোরদার করতে হবে। শুধু চালকের বেপরোয়া গতিই সড়ক দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে ক্রটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ড্রাইভার, ভুয়া লাইসেন্স, অতিরিক্ত পণ্যসামগ্রী বা যাত্রী পরিবহন, চালকের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অসচেতনতার অভাব, চলন্ত বাস-ট্রাকে মুঠোফোন ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। খারাপ রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও ওভারটেক করার মানসিকতাও এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

মূলত, নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আসল যুদ্ধ শুরু হয় পবিত্র ঈদ আসলেই। প্রতিবছরই ঈদে নগরবাসীদের বাড়ি ফেরার সময় পড়তে হয় নানা রকম ভোগান্তিতে। অনেকের তো বাড়িই ফেরা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত যানজটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতেই থাকে। নিরাপদ সড়কের জন্য নিয়মিত রাস্তাঘাট মেরামতসহ গতিবিধি মেনে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করতে পারলে অনেকাংশেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে। গতিবিধি না মেনে গাড়ি চালালে তার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে।

আপনজন হারানোর বেদনা শুধু স্বজনরাই অনুভব করতে পারেন। কে, কখন, কোথায়, কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবেন, তা কেউ জানে না। বাস্তবিক অর্থেই এটা মহামারির রূপ নিয়েছে। এর রাশ টেনে ধরতেই হবে, থামাতে হবে মৃত্যুর মিছিল। তবেই হয়ত উৎসবে নাড়ির টানে যাত্রা আর ফিরতিকালে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়বে না কেউ, বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার সময় লাশ হয়ে ফিরবে না! সড়ক দুর্ঘটনায় এই মৃত্যুর মিছিল সামাল দিতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা জনগণ ভীষণভাবে অনুভব করছে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসুক। প্রতিটি উৎসব হোক নিরাপদ, উৎকণ্ঠাহীন, বর্ণিল ও আনন্দময়।

 

লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), রোড সেফটি প্রকল্প, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।



Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

5 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

5 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

5 months ago