Categories: Bangladesh News

ঈদের আনন্দের বদলে মনে দুঃখ-কষ্ট, হাহাকার


আজ পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন। বছর ঘুরে ঈদ আবারো এসেছে অনাবিল আনন্দ-উৎসবের আমেজ নিয়ে। বাংলাদেশ ও বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় এই উৎসবের আগমনে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শহর-বন্দর-গ্রামে ঈদ পালিত হচ্ছে। কোরবানিকে ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পশুর হাটে কেনাকাটার যে ধুম ছিল; তা শেষ। বিপণীবিতানগুলোতেও ভিড় ছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও সাইক্লোন রেমাল বিপন্ন এলাকায় ঈদের আনন্দ অনুপস্থিত। রেমাল তাণ্ডব অনেক মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। যার ঘরই নেই; তার জন্য ঈদ আসবে কীভাবে! ঈদের আনন্দের বদলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মনে দুঃখ-কষ্ট, হাহাকার। 

গত মাসের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে প্রবল সাইক্লোন রেমাল। এটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এটি ২৫ মে সন্ধ্যায় গভীর নিম্নচাপ থেকে সাইক্লোনে রূপ নেয়। উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার সময় ঝড়টির গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১৫ কিলোমিটার। রেমাল-এর প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতে মোট ৭৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রেমাল অন্যান্য সাইক্লোন থেকে পুরোপুরি আলাদা ছিল। এটি ২০ ঘণ্টা থেকে কোথাও কোথাও ৪৮ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। ফলে সমগ্র উপকূলেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। 

সাইক্লোন রেমাল তাণ্ডবে সব হারিয়েছে এই নারী

‘ঘর নাই। এখনো বাড়িতে তিনবেলা রান্না করতে পারি না। ঈদ করবো কীভাবে?’ — বলছিলেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের তেলিখালী গ্রামের আতাউর রহমান মোড়ল। এবার ঈদের কথা তিনি ভুলেই গেছেন। সাইক্লোন রেমালের আঘাতে ধ্বসে পড়া ঘর গোছানো, তিনবেলা খাবার যোগাড় করা, সুপেয় পানি সংগ্রহ করা, উপার্জনের সুযোগ খোঁজা, ইত্যাদি কাজেই তার দিনগুলো চলে যাচ্ছে। সাইক্লোনের তিন সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও স্বাভাবিক হয়নি তার জীবন। এ অবস্থায় ঈদের ভাবনা সরিয়ে রেখেছেন এই শ্রমজীবী মানুষটি। আতাউর রহমান বলছিলেন, তার কয়েকটি গরু ভেসে গেছে, দুইটি মাছের ঘেরের মাছ চলে গেছে রেমালের পানির তোড়ে। আগামী দিনে খাবারের জন্য ঘরে জমানো ধানও পানিতে ভেসে গেছে। 

একই গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম শেখেরও একই অবস্থা। দু’টি মাটির ঘর পড়ে যাওয়ায় এখন তার বসবাসের জায়গাই নেই। ঈদ করবেন কীভাবে? কামরুল শেখ এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য এবারের ঈদ এসেছে সংকট নিয়ে। তেলিখালী গ্রামের আতাউর রহমান মোড়ল, কামরুল ইসলাম শেখ, তাহেরিন বেগমসহ আরো অনেকের অবস্থা খবই সংকটজনক। গত বছর এরা সকলে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করলেও এ বছর তাদের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। শুধু তেলিখালী নয়, দেলুটি ইউনিয়নের গোপীপাগলা, হাটবাড়ি, সৈয়দখালী, ফুলবাড়ি, বিগরদানা গ্রামগুলোতে অধিকাংশ মানুষ এ বছর ঈদে অংশ নিতে পারেনি। সাইক্লোনের পরে এসব এলাকার অনেক মানুষের তিনবেলা খাবার যোগাড় করাই কঠিন।

সাইক্লোন রেমালের তাণ্ডব, পরে আছে শূন্যভিটা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করার পরে রেমাল প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যমনগরে। সাইক্লোনের কারণে ওই অঞ্চলের মানুষও বিপাকে পড়েছেন। ঈদের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে রেমাল আঘাত করায় তাদের ঘরে এবার ঈদের আমেজ নেই। শ্যামনগরের ভারতের সীমান্ত লাগোয়া ইউনিয়ন কৈখালীর দক্ষিণ কৈখালীর কালিন্দি আইট এলাকার মানুষেরা চরম সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। কালিন্দি নদীর তীরের এই এলাকাটি বাংলাদেশ-ভারত সুন্দরবনের পাঁচ নদীর মোহনায় অবস্থিত। ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপদ এই এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করেছে। সে কথাই বলছিলেন কৈখালী ইউনিয়নের বইশখালী গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী এবং আনার আলী। এরা দু’জনই শ্রমজীবী মানুষ। সাইক্লোন রেমাল তাদের অনেক ক্ষতি করে গেছে। গত বছর এরা কোরবানির ঈদে অংশ নিলেও এবার তাদের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। 

খুলনা কয়রা উপজেলা আরেকটি সাইক্লোন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত করা প্রত্যেকটি সাইক্লোন এই উপজেলায় কোন না কোন ক্ষতি করে। এবারও উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করেছিল। এলাকাবাসীর চেষ্টায় বেড়িবাঁধের মেরামত সম্ভব হলেও মানুষের স্বাভাবিক জীবন সংকটের মধ্যে ডুবে আছে। তিন সপ্তাহ পরেও কারো ঘর নাই, কারো উনুন নাই, কারো ঘরে নেই খাবার। এ অবস্থায় এবারের ঈদ আনন্দ তাদের থেকে অনেক দূরে। দশহালিয়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম গাজীর পুরো ঘর উড়ে গেছে। পড়ে আছে শূন্য ভিটে। খর দুপুরে তিনি ঘরের ভিটেয় পড়ে থাকা আসবাবপত্র গোছাচ্ছিলেন। পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্য সেখানে বসবাস করছেন কোনমতে। পাশে সিরাজুল ইসলামের বাবা আবদুল হামিদ গাজীরও একই দশা। সাইক্লোনের পরে এভাবে মানুষগুলো চরম সংকটের মধ্যদিয়ে জীবনযাপন করছেন।  

রেমাল তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ঘর

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রেমাল আমাদের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। গরু-ছাগল কেনার কথা তো চিন্তাই করতে পারি না। বাচ্চাদের মুখে ঈদের দিন সকালে সেমাই-নাস্তাও দিতে পারব না। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতেও অনেক সময় লাগবে। জরুরি রিলিফ সহায়তা অনেকে দিলেও আমাদের জীবন পুনর্গঠনের লড়াইয়ে কেউ পাশে থাকে না। এখন সাইক্লোনে সব হারিয়েছি। ঋণ নিয়ে আবার জীবন শুরু করতে হবে আমাদের একাকেই।’ 

একইকথা দশহালিয়া গ্রামের মোকসেদ গাজী, জাহাঙ্গীর সরদার, হাসানুর রহমান গাজী, রেশমা বেগমসহ আরো অনেকের। 

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে মধ্য উপকূলে চোখ ফেরালে সেখানেও একই চিত্র। মেঘনা নদীর অববাহিকায় এবারের সাইক্লোন রেমালে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার একটি বড় অংশ এবার রেমাল প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলে এবার ঈদের আনন্দ  ম্লান হয়ে গেছে। কমলনগরের মতিরহাট থেকে মেঘনার তীর ধরে রামগতির আলেকজান্ডার হয়ে টাংকিবাজার পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকা বছরের পর বছর ধরে অরক্ষিত। এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সাথে লড়াই করে বাঁচে। এবার দীর্ঘ সময় ধরে রেমালের তাণ্ডব ওই অঞ্চলের মানুষের লড়াই আরো কঠিন করে দিয়েছে। সাইক্লোন রেমাল-এর প্রভাবে উচ্চ জোয়ার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বাড়িঘরে ঢুকেছে। বাড়িগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 

কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ-এর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। ঈদের আনন্দের বদলে তারা এখন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সাইক্লোন রেমাল তাদের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষের ঘরে ঈদের আনন্দ নাই। বাঁধের জন্য আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। কিন্তু বরাদ্দ হওয়া সত্তেও আমরা এর সুফল পাইনি। কাজের মেয়াদের তিন বছর চলে গেছে। কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। কাজ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙনের শঙ্কায় থাকেন। 

রেমাল তাণ্ডবে নিঃস্ব মানুষের আর্তনাদ খুব বেশি দূর পৌঁছায় না

সমুদ্র মোহনায় অবস্থিত ঢালচর এবারের সাইক্লোন রেমাল-এ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তীব্র জলোচ্ছ্বাসে বাড়িঘর উড়ে গেছে। অনেকে শেষ সম্বল বাড়িটি হারিয়েছে। এখন বসবাসের আশ্রয়টুকু পর্যন্ত নেই। ফলে এবার তাদের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। এদের মধ্যে বাবুল হোসেন এবং নূরে আলম। সাইক্লোন রেমাল-এর পর থেকে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বসবাসের ঘরসহ বাবুল হোসেনের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নূরে আলম হারিয়েছেন প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল। এরা উভয়ই মৎস্যজীবী পেশায় জীবিকা নির্বাহ করেন। সামনে ইলিশের প্রধান মৌসুম। এই সংকটের মধ্যে তারা ইলিশ ধরতে যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত। ঈদের কথা তাদের মনে নেই। 

ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিপদগুলো দ্বীপের মানুষদের পিছিয়ে দেয়। তারা সংকটের মধ্যে বসবাস করে। এবার সাইক্লোন রেমাল মানুষের সেই সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঈদের জন্য সরকার থেকে যে সহায়তা আসে, তা খুবই সীমিত। ফলে সব মানুষকে সেসব সহায়তা আওতায় আনা সম্ভব নয়।’ 

ছবি : প্রতিবেদক এবং সংগ্রহ




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago