বাঙালির পরাধীনতা বা অন্যের দ্বারা শোষিত হওয়ার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। যে কারণে চাকরি ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ খুব কমই কপালে জুটেছে। সেই সেন, সুলতানি, মোঘল যে আমল বলি না কেন; বাংলার শাসকরা তেমন কেউ স্থানীয় বাঙালি ছিলেন না। সেই সময়ের শাসক বা রাজাবর্গরা সাথে করেই উজির-নাজির, পাক-পেয়াদা, সৈন্যসামন্ত ও অন্যান্য জনবল নিয়ে আসত। অধিকাংশ চাকরি করে অর্থ উপাজন করে এ দেশ থেকে চলে যেত।
মুসলিম শাসকরা প্রায় ৫০০ বছর বাংলা শাসন করলেও বাংলার স্থানীয় নব্য মুসলিমদের তেমন কোনও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা ছিল না। নিভৃত পল্লীর অতি দরিদ্র নব্য মুসলিমরা তেমন কোনও চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ তাদের ধর্মের অনুসারী শাসকদের কাছ থেকে পেয়েছে, তার প্রমাণ খুবই কম মেলে। যদি কেউ অতি উৎসাহী হয়ে মুসলিম শাসকদের সাথে দেখা করত তাহলে তাদের রাজদরবার হতে শুধু একটা আলখাল্লা পোশাক ধরিয়ে দেওয়া হতো।
ইংরেজ আমলের প্রথম দিকে চাকরির অবস্থা প্রায় আগের মত অর্থাৎ সব চাকরি ইংরেজদের ছিল। তবে, পরবর্তীতে কৌশলগত কারণে স্থানীয়দের কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। চাকরিজীবি বাঙালি, তাই সে হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক, সংখ্যায় খুবই কম ছিল। তারপর আবার ইংরেজদের নীতি ও অনগ্রসতার কারণে মুসলিম চাকরিজীবি খুঁজে পাওয়া আরও দুষ্কর ছিল। পাকিস্তান আমলে চাকরি চলে যায় পাকিস্তানিদের বিশেষ করে পাঞ্জাবিদের হাতে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে দেশে রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। একদিনে গেল ছয়টি তাজা প্রাণ। অসংখ্য আহত। দেশজুড়ে সংঘর্ষ, হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছে, গুজবে ভাসছে দেশ। জেদাজেদি চলছে। পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানাতে মেতে উঠেছে বাঙালি। সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন ‘আমি অমুক কোটার পক্ষে আমি অমুক কোটার বিপক্ষে’। চলছে আক্রমণাত্মক ও অশোভন বাক্যবিনিময়। বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির কারণে জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশব্যাপী স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে আসছে খবর, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিবৃতি দিচ্ছে।
দেশে চাকরির বাজারের শিক্ষিত তরুণদের অবস্থা যে খুব ভালো না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হু হু করে বেড়ে চলেছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে ছুটতে হতাশায় উচ্চশিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম। কোটাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মাথা যখন গরম, তখন পিএসসির সাবেক এক চেয়ারম্যানের বেরসিক গাড়িচালক আবেদ আলীসহ অন্যান্য কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড তাদের মাথা আরও গরম করে দিয়েছে। বিষয়টি একবারে আগুনে ঘি ঢালার মতো। আসলে পিএসসিতে কী হয়, কয়টা পরীক্ষা ফেয়ার হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু পিএসসি নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দেশব্যাপী সরকারি নিয়োগ নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের চক্র বা সিন্ডিকেট।
বিসিএস ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা নাকি চোখ-কান সবই দেখে, সাইকোলজি টেস্ট করে চাকরিপ্রত্যাশীদের যোগ্যতা দেখার জন্য। আর পাশের চেয়ারে বসা সহকর্মী ও নিজের গাড়ির চালকদের মনোভাব বা কর্মকাণ্ড তারা বুঝতে পারে না, সেটা কি করে হয়? স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর স্বচ্ছ ও প্রশ্নহীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে না পারাটাই জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। কেন শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য ‘লাইনঘাট, ‘সিস্টেম’ আর ‘মামু খালুর’ সন্ধানে ব্যস্ত থাকবে।
১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নয় মাসের রক্ত ঝরানো যুদ্ধের পর পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালি পায় নিজের ঠিকানা, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড ‘বাংলাদেশ’। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনভাবে অসম্মান করার সুযোগ নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় এই ধরনের যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হওয়ার পর তাদের আত্তীকরণ বা রাষ্ট্রের কাজে লাগানো হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সেই সময় অবকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। সক্ষমতা না থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সবাইকে আত্তীকরণ বা রাষ্ট্রের কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। যে কারণে পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য সরকারিতে চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়।
আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে মারা গেছেন আর বাকিরা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, চাকরির বয়স নেই। যে কারণে তাদের সন্তানদের এক সময় এই সুবিধার আওতায় আনা হলে বিষয়টি নিয়ে তেমন প্রশ্ন ওঠেনি। নতুন করে যুক্ত হয়েছে নাতি-নাতনি, পুতা-পুতনি। যে কারণে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বব্যাপী আগের সেই যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন শুধু স্বামী-স্ত্রী শুধু তার সন্তানদের নিয়ে একক পরিবারে থাকতে চায়। পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ। দিন দিন বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা। এমন অবস্থায় নাতি-নাতনি, পুতা-পুতনি ও পরবর্তী প্রজন্মদের এই কোটা সুবিধার আওতায় আনা কতটা যুক্তিসংগত এবং আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোন উপকারে আসবে কি না, সেটা ভেবে দেখার বিষয়।
এ ক্ষেত্রে কোনরকম ঝুঁকিতে না যেয়ে, যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখনও জীবিত আছেন, তাদের সরাসরি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বার মাসে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) অনুযায়ী, গেজেটভুক্ত মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩৮ হাজার ৮৪১ জন। তখন দেশে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৯৮ হাজার ৫৪১ জন। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি-দুর্নীতির খবর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি অথচ এমন অনেক লোক এই তালিকায় ঢুকে পড়েছে, আবার অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও ঐ তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি, এমন লোকের সংখ্যা অগণিত, প্রায় প্রতিটি গ্রামে আছে।
স্বাধীনতার পর একাধিক সরকার একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করলেও তা নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে তালিকাও বদল হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন, আবার অনেক অমুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা। একেক সময়ে তৈরি করা হয়েছে একেক রকমের মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা। এ নিয়ে হাজার হাজার মামলাও হয়েছে। (ইত্তেফাক রিপোর্ট ৬ জানুয়ারি ২০২০)। যেখানে তালিকা নিয়ে এত ঝামেলা সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি না করে বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
বিষয়টি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবমাননাকরও বটে। তারা কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায় নয় বরং দেশের জন্য, দেশের মানুষকে ভালোবেসে, বৈষম্যহীন সমাজ উপহার দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটই নেননি। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবার ও সন্তানেরা এই কোটার বিরুদ্ধে কথা বলছেন যেটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।
কোটার কারণে সরকারি অফিস-আদালতে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়ে সরকারি কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হয় বলে অনেক অভিযোগও অনেক সময় আসে।
যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করছে তারা সবাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, পড়াশুনা শেষ করা চাকরিপ্রত্যাশী, তারা বয়সে তরুণ। আসলে তরুণ বা যুবকদের মানসিকতা আমাদের সবার বোঝা উচিত। তাছাড়া লেখাপড়া, চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে চরম প্রতিযোগিতা। একজন সুবিধা পাবে অন্যজন পাবে না, এটা তরুণ সমাজ আসলে কীভাবে গ্রহণ করে সেটা উপলব্ধির বিষয়।
চাকরির বাজার এখন অনেক প্রতিযোগিতামূলক। একটা পদের বিপরীতে শত শত প্রাথী। প্রতিযোগিতায় কেউ কারও ছাড় দেয় না। একজনের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে বা কম মেধার অন্য একজন চাকরি পেয়ে যাবে সেটা প্রার্থীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এতে করে সমাজে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।
অনেকে বলছেন, কাউকে ছাড় দিয়ে, সুবিধা দিয়ে কোন প্রতিযোগিতা হয় না, প্রশ্ন উঠবেই। এক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের বৃত্তি ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়ানো যেতে পারে, যাতে তারা ভালো করে পড়াশুনা করে চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করতে পারে।
একটি দক্ষ প্রশাসন গড়তে ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের বিকল্প নেই। দেশে সুযোগ না থাকার কারণে মেধাবীরা অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। আমরা যদি এ দেশের মেধাবীদের ও সম্পদ ধরে রাখতে না পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তাতে সন্দেহ নেই। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন এত উন্নত! কারণ তারা শুধু নিজেদের মেধাবীদের ও সম্পদ ধরে রাখেনি; তারা এমন ব্যবস্থা করেছে যেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মেধাবীদের সেখানে যেতে হয়। যেমন ইলন মাস্কের বাড়ি দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু তার মেধার ‘ফসল খায়’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আমাদের মনে রাখতে হবে, সবাই এ দেশের মানুষ। সরকারি চাকরি সীমিত, সবাই পাবে এমন হতে পারে না। তবে এমন একটা স্বচ্ছ ও প্রশ্নহীন ব্যবস্থার প্রয়োজন যার উপর তরুণরা আস্থা স্থাপন করতে পারবে। পড়াশোনা বা যোগ্যতা থাকলে চাকরি হবে, তা না হলে নয়, এমনটাই জাতির জন্য কল্যাণকর।
সব কোটা একেবারে উঠে যাবে সেটাও কোনো বাস্তবতা নয়। কোটা থাকতে পারে অনগ্রসর, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ও অঞ্চলভিত্তিক। এ কোন জেদাজেদি, আবেগ বা রক্ত ঝরানোর বিষয় নয়, কারো দাবি প্রাসঙ্গিক, ন্যায্য এবং যৌক্তিক কিনা সেটা ভেবে সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই সমাধানের পথ।
রবীন্দ্রনাথ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, মতবিরোধ ভালো, কিন্তু তার প্রকাশের উপর একটা নিয়ম ও ভাষা আছে। মজা করেছিলেন এই বলে যে, নতুবা বরযাত্রী ও কন্যাপক্ষে ঝগড়া করে বিবাহটাকেই পণ্ড করে দেবে! চাকরিতে কোটা নিয়ে রক্ত ঝরানো ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জাতির শেষ পর্যন্ত কী পণ্ড হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…