এবারের কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো এক ছাগল নিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক। মোহাম্মদপুরের আলোচিত খামার ‘সাদিক এগ্রো’র এই ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ। বেরিয়ে আসে ওই তরুণের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের হাঁড়ির খবরও। ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর তিনি হারান এনবিআরের পদ, সরে যেতে হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও। ইতোমধ্যে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ছাগলের রশির প্যাঁচের মতোই প্যাঁচে পড়েছে ‘সাদিক এগ্রো’ খামারও। এরই মধ্যে গণমাধ্যমের খবরে অভিযোগ উঠে এসেছে, সাদিক এগ্রোর মালিক শাহ ইমরান হোসেন মূলত এই খামারের আড়ালে একজন গরু চোরাচালানকারী। তিনি ও তার সিন্ডিকেট ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাইপথে নানা জাতের গরু নিয়ে আসেন দেশে। এরপর সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করেন। মোহাম্মদপুরের বছিলায় খালের জমি দখল করে খামার নির্মাণ করায় সাদিক অ্যাগ্রোতে স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
এত আলোচনার পর প্রশ্ন আসে, যে ছাগল নিয়ে এই ‘এলাহী কাণ্ড’, সেই ছাগলটির এখন কী অবস্থা?
সাদিক এগ্রোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও অবিক্রিত রয়ে গেছে ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার ওই ছাগলটি। এতো বিশাল আকৃতির ছাগল সাধারণত দেশে সচরাচর দেখা যায় না। ঈদের সময় এই ছাগলের ওজন ছিল প্রায় ১৭৫ কেজি। খামারের লোকজন বলছে, এখন ওজন কিছুটা কমেছে।
ছাগলটির দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার পেছনে খামারের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল— ‘উন্নত জাত ও উচ্চ বংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন’। বিদেশি ব্রিটল জাতের ছাগল বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল।
তবে এই ছাগলের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে খামারের কেউ পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে। তারা শুধু এটুকু বলেন, ছাগলটি বিক্রি হয়নি, খামারেই আছে।
বুধবার (২৬ জুন) খামারের একজন কর্মচারী নিজেকে সাদিক এগ্রো’র ম্যানেজার দাবি করে ছাগলটি সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, ছাগলটির পেছনে দৈনিক হাজার খানেক টাকার মতো খরচ হয়। ছাগলকে কী খাওয়ানো হয়, জানতে চাইলে এক কথায় তার উত্তর ছিল, ‘পুষ্টিকর খাবার’। এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।
সাদিক এগ্রোতে থাকা গরু-ছাগলের আকাশছোঁয়া দামের ব্যাপারে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সব উচ্চবংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন গরু-ছাগল। যেগুলো আসলে ওজনের বিবেচনায় বিক্রি করা হয় না। স্বাভাবিকভাবে খাবারগুলোতে গরু ছাগলের যেমন যত্ন নেওয়া হয়, এখানে তার চেয়ে বেশি যত্ন নিয়ে লালন-পালন করা হয়। তাছাড়া এদের খাওয়া-দাওয়াও স্পেশাল।’
ছাগলকাণ্ডের এমন ঘটনা ব্যবসায় কোনও প্রভাব ফেলেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের এখানে কোরবানি ছাড়াও রেগুলার বড় গরু, ছাগল বিক্রি হতো। কিন্তু এই ঘটনার পর এখন বড় পশুর বিক্রি নেই।’
যেই ছাগলটার দাম ১৫ লাখ টাকা হাঁকানো হয়েছে, তার আদৌ এমন দামের যৌক্তিকতা আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা খামার মালিক জানেন’।
তবে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি সাদিক এগ্রো‘র স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তার মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। এমনকি মোহাম্মদপুরে খামারে গিয়েও তার খোঁজ মেলেনি।
সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সব পশু
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর রামচন্দ্রপুর খাল সংলগ্ন স্থানে সাদেক এগ্রোতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাববীর আহমেদের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযান শুরুর আগেই খামারের পশুগুলো সরিয়ে নেওয়া হয় যার মধ্যে ছিল ওই ছাগলও।
আসলেই কত হতে পারে ছাগলের দাম?
সাদিক এগ্রো’র ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো ছাগলটির দাম সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাজধানীর শফিক মোল্লা নামের এক মাংস ব্যবসায়ী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আকার আকৃতি অনুযায়ী সবমিলিয়ে এই ছাগলের দাম ২ লাখ টাকার বেশি হবে না। কিন্তু এর দাম ১৫ লাখ টাকা হাঁকানো একেবারে অযৌক্তিক।’ এই ধরনের কর্মকাণ্ড বাজারে মাংসের দাম বাড়ার জন্য একভাবে দায়ী বলে অভিযোগ করছেন ঢাকার এই মাংস ব্যবসায়ী।
আকাশছোঁয়া পশুর দাম বাজারে প্রভাব ফেলে
ছাগল ছাড়াও সাদিক এগ্রোতে আছে ‘কোটি টাকা’ মূল্যের বিদেশি জাতের গরু। এসব গরু দাম ও বেচাকেনা নিয়েও আপত্তি জানান এই মাংস ব্যবসায়ী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খামার থেকে সশরীরে গিয়ে গরু-ছাগল ক্রয় করি। সাদিক এগ্রো’র এলোমেলো দাম মিডিয়ায় ঢালাওভাবে প্রকাশের পর অন্য খামারিরাও অহেতুক গরু ছাগলের দাম বাড়িয়ে বলছে। সাদেক এগ্রো গরুর দাম কোটি টাকা হাঁকানোর পেছনে যে কারণ দেখায়, সেটা আসলে এক ধরনের প্রতারণা। তাছাড়া সেখানে যেই জাতের গরুর কথা বলা হয়, তা তো এই দেশে আমদানি নিষিদ্ধ। তাহলে সেখানে আসলো কোথা থেকে? প্রশাসনের উচিত এদিকে নজরদারি করা।’
সাদিক এগ্রো গত এপ্রিল মাসে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রাণিসম্পদ মেলায় ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের একটি গরু ওঠান। তখন দাবি করা হয়, তাদের এই গরু শতভাগ ব্রাহামা জাতের। দাম হাঁকা হয় কোটি টাকা। বলা হয়, ‘উচ্চ বংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন’ হওয়ায় এ গরুর এত দাম। ঈদের আগে আরও একটি বড় গরু প্রস্তুত করেন তারা। গ্রে ব্রাহমা জাতের ওই গরুর দাম হাঁকা হয় দেড় কোটি টাকা। সেই গরুর ওজন ১ হাজার ৪০০ কেজি। তবে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
জাফর ব্যাপারী নামে রাজধানীর আরেক মাংস ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, খামারিদের যে সংগঠন আছে সেখানকার সভাপতি সাদিক এগ্রো’র মালিক ইমরান। এর ফলে দেখা গেছে, অন্য যেসব বড় বড় খামার আছে আছে সেখানে সাদিক এগ্রো’র দামের প্রভাব পড়ে। এরা লালনপালনের খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলা ছাড়াও দেশি গরুকে বিদেশি জাতের গরু বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, করোনার আগেও কিন্তু ঢাকা শহরের গুরুর মাংস ৪৫০ টাকা কেজি ছিল। এখন সেই মাংস ৮০০ টাকার বেশি। এর পেছনে ইমরানের মতো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন এই মাংস ব্যবসায়ী।
দুশ্চিন্তায় প্রান্তিক খামারিরা
রাজধানীর বড় বড় গরুর ফার্ম বা এগ্রো’র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরুর দাম বাড়ালেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের গরুর খামারিদের। সাদিক এগ্রো’র চটকদার বর্ণনায় মুখে মুখে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গরুর। এর মাধ্যমে বিভ্রান্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। বড় গরু পালায় আগ্রহী হলেও দাম পাচ্ছে না তারা। বলা চলে বেশিরভাগ সময় অবিক্রিত থাকে এসব বড় গরু।
এ বিষয়ে কথা হয় জসীম ব্যাপারী নামের নেত্রকোনার এক গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তার খামারে মোট ১৩টি গরু ছিল। তার মধ্যে ১০টি গরু নিয়ে এবারের কোরবানির ঈদে ঢাকায় এসেছিলেন। এর মধ্যে ৬টি বড় আকারের গরু আর বাকিগুলো ছোট।
বাজারে সাদেক এগ্রো’র আকাশছোঁয়া গরুর দাম কিভাবে প্রভাব ফেলেছে সেই বর্ণনা দিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার খামারের মাঝারি ধরনের যে সব গরু আছে সেগুলো ১ লাখ ৬০ বা ২ লাখের মধ্যে ছিল। আর বড় গরু ছিল ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এটা আমি আমার খরচ অনুযায়ী হিসেব করে ধরেছি। কিন্তু হাটে আসার পর সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলাম। আমি যেই গরুর দাম পাঁচ লাখ টাকা চাচ্ছি সেই আকারের গরু দেখেছি সাদিক এগ্রো’ নানান গালগল্প বলে ২০ লাখ টাকা চাইছে। আর মানুষ সেটাই কিনছেন বলেও প্রচার করা হচ্ছে। এভাবে যখন বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরুর দাম বেড়েছে, তখন আর আমার বড় গরুগুলো বিক্রিই হয়নি।
সাত্তার নামে লক্ষ্মীপুরের একজন গরুর খামারি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেশি দামে গরু বিক্রির আশায় ঢাকার গরুর হাটে গিয়েছিলাম। কিন্তু উল্টো আম-ছালা দুটোই গেলো। লাভ তো হলোই না প্রায় ২ লাখ টাকার মতো লস হলো। হাটে দেখলাম ছোট আকারের গরুর চাহিদা। বড় গরু নিয়ে পড়লাম বিপদে। টেলিভিশনে দেখি বড় বড় গরু বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতায় শূন্য।
এই খামারি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে গরু নিয়ে ঢুকলে অটোমেটিক গরুর দাম বেড়ে যায়। গরুর দাম বাড়লেও আমরা যারা বাইরে থেকে গরু নিয়ে আসি, তাদের গরু আর বেশি বিক্রি হয় না। ঢাকার বড় ব্যাপারীরা ওই সুযোগ নেন।’ গরু বিক্রিতে প্রতারণা আর ছল-চাতুরিও ঢুকে গেছে বলে দাবি এই খামারি।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই)। ব্রেক্সিটের পর তা বাস্তবায়নের কথা বলে বারবার দলের…
Aid efforts have been underway in New York Metropolis’s Caribbean group on Wednesday as residents…
The emergence of the newspace business, characterised by the entry of personal corporations into the…
Manipur Congress MP Bimol Akoijam referred to as for taking the Manipur disaster "extra severely"Imphal/New…
On June 1, 2024, in a press release addressing the state of terrorism and fundamentalism…
Hurricane Beryl is bearing down on Jamaica, with the attention of the storm approaching the…