‘আমি ভিন্ন মত নিতে পারি না’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। বিয়ে করেছি ১১ বছর আগে, স্বামী আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদসহ একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস। এরপর দুই সন্তান হলো। সেই সন্তানরাও এখন অনেক বড়। আমার বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। এক রুমে দুই মেয়েসহ থাকতে হয় আমাদের। কিন্তু আমার স্বামী আলাদা হবে না। খুব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হচ্ছে আমার সন্তানরা। শাশুড়ির মানসিক অত্যাচার, ঘরভর্তি মানুষের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে জীবন থেকে খুব সুন্দর কিছু সময় হারিয়ে ফেলেছি। এই বাসা বদলে বড় বাসা নেওয়াও সম্ভব না। কারণ এটা তাদের পারিবারিক বাসা। ধীরে ধীরে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। প্রচণ্ড মানসিক অশান্তি নিয়ে দিন কাটাই। মাঝে মাঝে মনে হয় এই জেল থেকে মুক্তি বুঝি মরে না গেলে সম্ভব না।

উত্তর: প্রথমেই আপনার সাহস ও ধৈর্য্যের প্রশংসা করছি। আপনি যে মানসিক চাপ ও অশান্তির মধ্যে আছেন, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন:

১) খোলামেলা কথা বলুন: আপনার স্বামীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলার চেষ্টা করুন। আপনার অনুভূতি ও সমস্যাগুলো তাকে জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ

২) সমর্থন খুঁজুন: পরিবারের বাইরে আপনার বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের সমর্থন ও পরামর্শ আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩) পরামর্শদাতা বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন: একজন পেশাদার পরামর্শদাতা বা থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। তারা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারেন।

৪) নিজের জন্য সময় বের করুন: নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন, যা আপনার মানসিক শান্তি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে।

৫) আইনি পরামর্শ: যদি পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়, তাহলে আইনি পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আপনার ভালো থাকার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা করতে পিছপা হবেন না। সবসময় মনে রাখবেন, আপনি একা নন। আপনার চারপাশে কারোর না কারোর সাহায্যের হাত রয়েছে।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। আমার সমস্যা হচ্ছে আমি ভিন্ন মত নিতে পারি না। কেউ আমার কথার বিরুদ্ধে কিছু বললে আমি অস্থির হয়ে যাই। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য যুক্তি দিতে শুরু করি। আমার সারাটা দিন অস্বস্তিতে কাটে। মেজাজ খারাপ থাকে। ফেসবুক পোস্টে কেউ আমার বিরুদ্ধে কিছু বললে আমি যুক্তিতে না পারলে পোস্ট সরিয়ে ফেলি। এরপর সারা দিন মন খারাপ থাকে। এই সমসার সমাধান কী?

উত্তর: আপনার অনুভূতিগুলো খুবই স্বাভাবিক। ভিন্ন মতামত গ্রহণ করতে না পারা এবং অস্থিরতা অনুভব করা অনেকের ক্ষেত্রে বা অনেক সময় ঘটতে পারে। নিচের পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনি ধীরে ধীরে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন:

১) নিজেকে সময় দিন: যখন কেউ আপনার মতের বিরুদ্ধে কিছু বলে, তখন সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে কিছু সময় নিন। গভীর শ্বাস নিন এবং নিজেকে শান্ত করুন।

২) মতকে সম্মান করুন: মনে রাখবেন, প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। অন্যের মতামতকে সম্মান করার চেষ্টা করুন, এমনকি যদি তা আপনার মতের বিপরীতে হয়।

৩) আত্মবিশ্বাস বাড়ান: নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। সবসময় নিজেকে প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। আপনার মতামত মূল্যবান, এমনকি যদি সবাই তা না মেনে নাও নেয়।

৪) সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সংযম: ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কম সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। এটি আপনার মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

৫) মেডিটেশন ও রিলাক্সেশন: নিয়মিত মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন। এটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

৬) পেশাদার সাহায্য নিন: যদি সমস্যা খুবই গুরুতর হয়, তাহলে একজন পেশাদার পরামর্শদাতা বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। আপনার অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক এবং আপনি একা নন। ধীরে ধীরে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আপনি যদি আরও কিছু জানতে চান বা কথা বলতে চান, আমি এখানে আছি।