আশির দশকে দেশে নারী শিক্ষার প্রচলন খুব একটা ছিল না। ঠিক ওই সময়ে যারা উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতেন, তাদেরই একজন আইনুন নাহার চৌধুরী জুই। তিনি আশির দশকের শেষে এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে গাইবান্ধা থেকে এসএসসি-এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের এ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
স্নাতকে থাকা অবস্থায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার স্বপ্ন পূরণে যেন নতুন করে উৎসাহ খুঁজে পান। চাকরিজীবী স্বামী সহজেই যেন তার মনে লালিত স্বপ্ন বুঝতে পারতেন। এজন্য জুইয়ের উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে তিনিই (স্বামী) সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন।
জুই বলেন, আমি সবসময় চাইতাম- স্বাধীনভাবে কাজ করতে, যাতে অন্যদের জন্য কিছু করতে পারি। আমার হাজবেন্ডের উৎসাহ এবং কিছু প্রাপ্তি এখানে শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
২০০০ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি চাকরির চেষ্টা না করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এবং শেফদের থেকে বেকারি, ইন্ডিয়ান, থাই, চায়নিজ খাবারের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এরপর নিজেই ‘নতুন ভূবন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সেখানে আচারসহ বেকারি, থাই, চায়নিজ খাবার এবং ব্লক, বাটিক, টাই-ডাই ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষাণ দিতে শুরু করেন। এ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নানা পণ্য নিয়ে মেলার আয়োজন করা হতো। একটা সময়ে ঢাকার বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন জুই।
তখন ২০০৩ সাল, ধানমণ্ডি থাকতেন। সেখানে ক্যাটারিং চালু করেন এ নারী উদ্যোক্তা। ধানমণ্ডির অফিস পাড়া ছাড়িয়ে মতিঝিল এলাকাতেও নিয়মিত তার খাবার পৌঁছে যেত। পারিবারিক ঝামেলার কারণে ২০০৬ সালে এসে তার এসব উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে হয়। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি, শুরু করেন অন্য এক জগতে পথচলা। ওই বছরই তিনি অটিজম শিশুদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন।
আইনুন নাহার চৌধুরী জুই বলেন, আমি মূলত হোম মেড খাবারের সঙ্গে যুক্ত। আমার সিগনেচার পণ্য আচার। এছাড়াও বিভিন্ন খাবার কাস্টমাইজড করি। আমি হোম মেড খাবারের পাশাপাশি জুয়েলারি এবং ড্রেস নিয়ে কাজ করি। এখন সমাজের সবাই যেমন উদ্যোগের প্রতি সহযোগী, আগে তা ছিল না। উদ্যোগকে খুব ছোট কাজ বলে হেয় করা হতো। কাপড় বিক্রি, খাবার বিক্রি- এটা কোনো পরিচয় হতে পারে না, এমনটাই ছিল সবার ধারণা। এই প্রতিবন্ধকতা কাটাতে না পেরেই আমাকে উদ্যোগ ছেড়ে চাকরি শুরু করতে হয়।
২০০৬ সালে অটিজম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এ প্রতিষ্ঠানে একজন সফল শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ১৯ বছর অতিবাহিত করেন এবং বর্তমানেও সেখানে তার কর্মতৎপরতা অব্যাহত আছে। এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা আজ কেবল শিক্ষার্থী নয়, তার উদ্যোগের অংশও।
২০২০ সালে করোনাকালে তার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আবারও নতুন আঙ্গিকে ‘ঝটপট খাবার’ এবং ‘পশরা মার্ট’ এর মাধ্যমে শিক্ষকতার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরু করেন।
শুরুর দিকে বেশ ভালো অর্ডার আসছিল তার। ২০২২ সালে ব্যবসায় একটু স্থিতিশীল হয়ে যায়। তারপরও প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি পণ্য সেল হয় তার। বেশিরভাগই তার রিপিট কাস্টমার।
তিনি এখন মোহম্মদপুল এলাকায় থাকেন উল্লেখ করে বলেন, আমার এলাকায় ডেলিভারি চার্জ সম্পুর্ণ ফ্রি। প্রথম কাস্টমারের জন্য ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। আমি লাভটা নূন্যতম রাখি, যাতে কাস্টমারের নাগালে থাকে এবং রিপিট হতে পারে। খাবার বা পোশাকের ক্ষেত্রে সবসময় কাস্টমাইজড এর সুযোগ রাখি। কারণ এতে পণ্যের চাহিদা বোঝা যায়।
জুই বলেন, আমি ‘র’ ম্যাটারিয়াল সংগ্রহ করে আমার মতো করে কাজ করতে পছন্দ করি। শাড়ির ক্ষেত্রে আমি পাইকারি বাজারকে গুরুত্ব দিই। তারপর নিজের মতো করে ডিজাইন করি। কিছু কিছু কাজের জন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিই। আর আমার হাজবেন্ড ও দুই ছেলে সহযোগিতা করে। সবমিলিয়ে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।
পণ্য সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, খাবার, জুয়েলারি ও পোশাকের ক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করি অর্ডারের পরে কাজ করার। আর ওপেন ফিল্ডের জন্য কিছু পণ্য রেডি থাকে। যেমন- পোশাকের ক্ষেত্রে ব্লকের বা টাই-ডাইয়ের পণ্য, খাবারের ক্ষেত্রে আচার, বিভিন্ন ফ্রোজেন ফুড; যা সবসময় চলে।
তিনি মনে করেন রান্না বা হাতের কাজের মাঝে নিজের স্বকীয়তা প্রকাশ পায়। মনের একটা চাওয়া থাকে তার পরিপূর্ণ বিকাশ হয়। এজন্যই মূলত তার এ সেক্টরে কাজ করা। এ নারী উদ্যোক্তার স্বপ্ন পূরণের জন্য নিয়মিত ছুটে চলাই একমাত্র লক্ষ্য। এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশেষ শিশুদের কর্মসংস্থান করাই তার উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।
তিনি পোশাক ও অলংকার নিয়ে কাজ করলেও ফুড নিয়ে বেশি কাজ করেন। কারণ ফুড নিয়ে কাজ করতে বিনিয়োগ কম লাগে, যেটা পোশাকের ক্ষেত্রে হয় না। তিনি মনে করেন নতুন অবস্থায় কোনোকিছুতেই বেশি বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়।
এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অনেকেই পরিচিতি পেয়ে গেছেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, আমি ২০০০ এ যখন শুরু করি, তখন প্রচার মাধ্যম বলতে প্রিন্টিং মিডিয়াই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়া উদ্যোক্তাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। অন্যপথে সময় ব্যয় না করে নিজের ও উদ্যোগের পরিচিতি এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সময়কে কাজে লাগাতে পারলে রিটার্ন আসবেই।
তিনি মনে করেন, প্রত্যেক উদ্যোক্তার নিজস্বতা থাকতে হবে. যা অন্যদের থেকে ভিন্ন কিছু তুলে ধরবে। সে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনা গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি নিজের আত্মবিশ্বাস, কাজ করার ইচ্ছেশক্তি এবং নিয়মিত লেগে থাকার মানসিকতা। এই তিনের সমন্বয় করে উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন সফল হতে পারে। আর স্বপ্ন যদি হয় বিলাসিতা, তাহলে ঝরে যাবার সম্ভাবনা বেশি।
তিনি বলেন, আমি ২০০০ সালে শুরু করে ২০০৬ এ বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু আমার ভেতরের স্বপ্নটা রয়েই গিয়েছিল, যা কোভিডের সময় প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। আমি আবারও শুরু করেছি। তার মানে স্বপ্নটা আমার ক্ষুধা, যা নিবারনের জন্য আমি চলছি প্রতিনিয়ত।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমার খাবার ও ড্রেসের একটি আউটলেট তৈরি করতে চাই, যা একসময় ব্রান্ডে পরিণত হবে। আর আমি যে অটিজম শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করি, তাদের কর্মসংস্থান করতে চাই। আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি একা নই, সন্তানদের পাশাপাশি আমার শিক্ষার্থীরাও আছেন।
আইনুন নাহার চৌধুরী জুই উদ্যোক্তা ও শিক্ষক হিসেবে পথ চলতে গিয়ে অনেকবার পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৩ সালে প্রাণ প্রথম আলো জাতীয় আচার প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হন, ২০০৬ সালে রুপচাঁদা আলুর রেসিপি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হন, একই বছর নেসলে হেলদি স্যুপ রেসিপি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন।
২০২১ এ আলিয়াস কালেকশন ও হাসান মিঠাই ঘর হতে নারী দিবসের সন্মাননা লাভ করেন, ২০২৩ সালে আচারের জন্য দিল্লি থেকে বিশেষ সন্মাননা পান এবং চলতি বছর গ্লোবাল স্টার কম্যুনিকেশন থেকে আলোকিত সফল নারী সন্মাননা এবং হাসান মিঠাই ঘর হতে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। এছাড়া বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকেও একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন এ অদম্য নারী উদ্যোক্তা।
তিনি লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত আছেন। ইতোমধ্যে ‘রংধনু মেঘ’ ও ‘শুধুই তোমার জন্য’ নামে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সমসাময়িক নানা বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
Pondering of constructing the change from iPhone over to Android? There are a whole lot…
Huawei carried out this venture in Thailand in partnership with Midea, AIS and China Unicom…
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সরকারি কাজের ‘গতি’ বজায় রাখার কথা উল্লেখ করে ২৬১টি নতুন…
There at the moment are tens of billions of Web of Issues units in use…
WASHINGTON — The launch of Boeing’s CST-100 Starliner spacecraft on its first crewed flight has…
গুচি ব্র্যান্ডের লম্বা সাদা শার্ট। কোমরে বেল্ট। পায়ে মেরুন রঙা হিল। চুলগুলো মাঝ দিয়ে সিঁথি…