Saturday, October 12, 2024

স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের আহ্বান


স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। ২৬ মার্চ ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।

এসময় ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, আজকের এ দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার কমার পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল ও মেট্রোরেল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছে। পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহ ও ভূ-রাজনৈতিক সংকটের প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী নানামুখী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত বিপুল রেমিটেন্স অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদেরকেও সম্পদ ব্যবহারে হতে হবে মিতব্যয়ী এবং ভোগবিলাসে কৃচ্ছতা অনুসরণ করতে হবে। আমি আশা করি, বিগত বছরসমূহে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম এবং আর্থসামাজিক সূচকসমূহে সরকারের অভূতপূর্ব অর্জনের ওপর ভিত্তি করে আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব।

তিনি বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ -বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আমাদের অর্জন প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। বাংলাদেশ যুদ্ধের বিভীষিকা দেখেছে, বাংলার মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। আমরা বিশ্বে আর কোনো যুদ্ধ চাই না। ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের যে সকল দেশে যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে আমরা তার নিন্দা জানাই।

তিনি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য দেশে যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। কোনো কিছুই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হলেন মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যু তাকে নিঃশেষ করেনি বরং বাঙালির চিত্তাকাশে আরও উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত করেছে। নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুধাবন করতে হবে, আজ তারা যে পথ দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা তৈরি করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভবিষ্যতেও তার দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান।

তিনি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে-মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles