Saturday, October 12, 2024

স্কুল-কলেজের শাখা ক্যাম্পাস আর থাকছে না


দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে এখন থেকে দেশে স্কুল-কলেজের শাখা ক্যাম্পাস চালুর সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল বা মনিপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে, সেগুলো হবে স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানও হবেন আলাদা।

বর্তমানে একই পরিচালনা কমিটির অধীনে চলে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সব শাখা ক্যাম্পাস। প্রতিটি শাখায় একজন শাখা প্রধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানপ্রধান রয়েছেন একজন। নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সিদ্ধান্ত মোটামুটি হয়ে গেছে। খুব শিগগির আদেশ জারির কথা রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও-সংক্রান্ত যে নীতিমালা এখন চালু, তাতে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদিত মূল ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোথাও শাখা খুলতে পারবে না। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় চাহিদা, উপযুক্ততা এবং প্রতিষ্ঠানের নামে খতিয়ানভুক্ত ও নামজারি করা নিজস্ব জমি থাকলে ওই জমিতে শাখা খোলার বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিবেচনা করতে পারবে। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিদ্যমান নীতিমালার এই অংশ সংশোধন বা বাদ যেতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ভর্তি জালিয়াতি ও আর্থিক অনিয়ম রোধ এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সরকারের এই উদ্যোগ।

রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শাখাসহ পাঁচটি শাখা রয়েছে। এগুলো পরিচালনা করেন একজন অধ্যক্ষ এবং একই গভর্নিং বডি। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচজন অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক থাকবেন। এ ছাড়া পাঁচটি গভর্নিং বডি থাকবে। অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডি স্বাধীনভাবে কাজ করবে। শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রতিটি স্কুলের জন্য পৃথক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণ হতে পারে এমন– মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শেওড়াপাড়া; মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় রূপনগর অথবা মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কাফরুল।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের কার্যক্রম চলে মূলত বেইলি রোডে এর প্রধান শাখা থেকে। তবে একই প্রশাসনের অধীনে আরও তিনটি শাখা রয়েছে; যেগুলো রাজধানীর ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। চারটি শাখায় ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন হলে স্কুলটির মূল ক্যাম্পাসসহ চারটি শাখা স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে।

১৯৬৫ সালের ১৫ মার্চ ঢাকার মতিঝিলে টিনশেড ঘরে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ যাত্রা করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে। ১৯৯৬ সালে বনশ্রী আবাসিক এলাকায় সেমিপাকা ভবনে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বনশ্রী শাখা আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালের ২ মার্চ মুগদা শাখায় পাঠদান শুরু হয়। নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব শাখা ক্যাম্পাস পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে।

ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা আছে, তাদের শাখাগুলো যে যে নামে আছে ওই নামে আলাদা আলাদা ইআইআইএন নাম্বার দিয়ে আলাদা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটি দিয়ে পরিচালনা করতে নীতিমালা সংযোজন করা হয়েছে।

শাখাকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলছেন অভিভাবকরা। এর ফলে প্রধান ক্যাম্পাসের অনৈতিক প্রভাব কমবে বলে মনে করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম মনে করছেন, শাখাকে শুধু স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ দিলেই দুর্নীতি কমবে না, এর জন্য প্রয়োজন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিং।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘শুধু এই তিন প্রতিষ্ঠান নয়; যেসব স্কুলের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে, তাদের সবার ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ম্যানেজিং কমিটি-সংক্রান্ত প্রবিধান সংশোধন হচ্ছে, অচিরেই এটি জারি হবে। নতুন প্রবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হবে। চিঠি দিয়ে প্রতিটি স্কুলকে এ ব্যাপারে জানানো হবে।’

সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, শাখা ক্যাম্পাস খোলার কারণে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। ভর্তি-বাণিজ্যসহ অন্তত ১০ ধরনের বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন গভর্নিং বডির সদস্যরা। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ওই সব বাণিজ্য কমবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআর



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles