রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি কনসার্ট হলে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৩ জন। হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী। মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু রাশিয়ায় কেন বা কী উদ্দেশ্যে বর্বর এই হামলা চালালো আইএস? শনিবার (২৩ মার্চ) এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, সশস্ত্র হামলায় সরাসরি জড়িত চারজনসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
আইএসের আফগান শাখা – খোরাসান প্রদেশে ইসলামিক স্টেট নামেও পরিচিত, আইএসকেপি (আইএস-কে) – হামলার দায় স্বীকার করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জঙ্গি গোষ্ঠী ও হামলার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা জানানো হয়েছে….
আইএসের আফগানিস্তান শাখা
আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের খোরাসান অঞ্চলে সক্রিয় থাকা একটি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট খোরাসান বা আইএস-কে। গোষ্ঠীটি আইএসের অন্যতম সক্রিয় সহযোগী সংগঠন এটি। আইএসের কাছ থেকেই বর্তমান নামটি ধারণ করেছে তারা।
২০১৪ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এটির আবির্ভাব। প্রয়াত আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোষ্ঠীটি গঠন করে পাকিস্তান তালেবানের বিচ্ছিন্ন যোদ্ধা এবং স্থানীয় যোদ্ধারা। তখন থেকেই ভয়ংকর বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখিয়ে দ্রুতই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে গোষ্ঠীটি।
সামরিক বিশ্লেষক ও তুর্কি সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল মুরাত আসলান বলেছেন, তিনি মনে করেন জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শই তাদের লক্ষ্য নির্ধারণে অনুপ্রাণিত করেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোকে তারা জাতীয় শত্রু হিসেবে দেখে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও ২০১৮ সাল থেকেই আফগানিস্তানে এর সদস্য সংখ্যা কমতে শুরু করে। তারপরও ২০২১ সালে আফগানিস্তানে আশরাফ গনি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা তালেবান সরকারের সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে গোষ্ঠীটি। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আসলান।
আইএসের পূর্বের হামলা
২০২১ সালে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস-কে। ওই হামলায় ১২৩ মার্কিন সেনাসহ ১৭৫ জন নিহত হয়েছিল।
২০২০ সালে মে মাসে কাবুলের একটি প্রসূতি ওয়ার্ডে আইএসের রক্তক্ষয়ী হামলায় নারী ও শিশুসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিল। ওই বছর কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ২২ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে হত্যা করে তারা।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে রাশিয়ান দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি।
২০১৩ সালে ইরানের দক্ষিণ শিরাজের একটি প্রধান মাজারে দুটি পৃথক হামলার দায় নেয় আইএস। এছাড়া ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব শহর কেরমানে আইএস-কের হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছিল।
কেন রাশিয়ায় হামলা করছে আইএস?
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুসলিমদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি। এছাড়া রাশিয়াকে আইএসের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হয়। কারণ তাদের ধারণা, বিশেষ করে সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এবং আফগান তালেবানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আইএস এবং এর সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ চালাচ্ছে রাশিয়া।
তাছাড়া বর্তমান বিশ্বে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা পুতিনের রাশিয়াতেও তারা হামলা চালাতে পারে- কনসার্টে হামলার মাধ্যমে সেই বার্তায় যেন বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিলো জঙ্গি গোষ্ঠীটি।
ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন ফেলো কবীর তানেজা জানিয়েছেন, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এবং সিরিয়ার বেসামরিক মুসলিমদের ওপর হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে আইএস। এছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আইএসের মতাদর্শের বিপরীত রাশিয়ার ওপর তাই বর্বর হামলা চালিয়েছে তারা। রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা একটি দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস-কে।
রাশিয়ায় পূর্বের হামলা
এর আগেও ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছিল রাশিয়া। ২০০২ সালের ২৩ অক্টোবর মস্কোর দুবরোভকা থিয়েটারে প্রায় ৯০০ জনকে জিম্মি করে রাখে চেচনিয়ার স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের একটি দল। পরে চেচনিয়া যোদ্ধাদের সাথে রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়।