Thursday, October 3, 2024

যে কারণে মস্কোয় হামলা হয়েছে 


রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০০ জন। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে মস্কোর উত্তর প্রান্তে ক্রোকাস সিটি হলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, পাঁচজন বন্দুকধারী এই হামলা চালায়। প্রথমে গুলিবর্ষণের পর সেখানে গ্রেনেড বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তাতে হলটিতে আগুন ধরে যায়।

এদিকে মস্কোয় ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকারের পর আইএস-কে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। সেখানে গোষ্ঠীটির উত্থান ও মস্কোয় হামলার কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

রয়টার্স তার প্রতিবেদনে জানায়, মস্কোয় এই ভয়াবহ হামলাকে আইএস-কে’র সহিংস কর্মকাণ্ডে এক নাটকীয় বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গোষ্ঠীটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করে আসছিল। এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সোফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক বলেন, ‘দুই বছর ধরেই রাশিয়াকে নিশানা করেছে আইএস-কে। তারা তাদের প্রচারণায় প্রায়ই পুতিনের সমালোচনা করে আসছে।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক অপর একটি প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা একটি দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস-কে। তারা মস্কোর বিরুদ্ধে নিজস্ব অভিযোগের পক্ষে মধ্য এশিয়ার কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকেও নিজেদের সদস্যর মতো বিবেচনা করে। তাদের আরও কাছে টানতে এই হামলা ঘটানো হতে পারে বলেও কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন।

আইএস-কে কারা?

রাশিয়ার মস্কোয় কনসার্ট হলে বন্দুকধারীদের হামলায় হতাহতের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে আইএসের যে অংশ এই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের নাম আইএস-কে বা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।

বর্তমান ইরানের উত্তরপূর্ব অঞ্চল, প্রায় সমগ্র আফগানিস্তান, দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল একসময় খোরাসান নামে পরিচিত ছিলো।

রয়টার্স জানিয়েছে, খোরাসান অঞ্চলে সক্রিয় থাকা একটি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে সংগঠনটি তাদের কাজ শুরু করে।

আন্তর্জাতিক ইসলামিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের সবচেয়ে সক্রিয় আঞ্চলিক সহযোগীর একটি এই আইএস-কে। ২০১৮ সালে এদের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়। পরে আবার তা কমতে শুরু করে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কাউন্টার টেররিজমের মতে, মূল সংস্থা থেকে তহবিল সরবরাহ কমে আসার ফলে আইএস-কের সদস্য সংখ্যা কমতে থাকে।

২০২১ সালে আফগানিস্তানে আশরাফ গনি সরকার হটিয়ে ক্ষমতায় আসে উগ্র ধর্মবাদী গোষ্ঠী তালেবান। সেই সময় দেশটিতে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর পেছনে এই আইএস-কের হাত রয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ২০২১ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দেশটিতে আইএস-কের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করার সক্ষমতায় ঘাটতি দেখা দেয়।

রাশিয়ায় কনসার্ট হলের হামলায় দায় স্বীকার করেছে আইএসরাশিয়ায় কনসার্ট হলের হামলায় দায় স্বীকার করেছে আইএস
আফগানিস্তানের ভেতরে ও বাইরে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনায় বড় রকমের হামলা চালানোর পেছনে হাত রয়েছে আইএস-কের।

চলতি বছরের শুরুতে ইরানে জোড়া বোমা হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হন। এ হামলা আইএস-কে চালিয়েছিলো বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানতে পারে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের কাবুলে রাশিয়ান দূতাবাসে রক্তক্ষয়ী আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে আইএস-কের সদস্যরা।

২০২১ সালে ২০২১ সালে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ১৩ মার্কিন সেনা ও বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে আইএস-কে। তালেবানের কাবুল দখল এবং সেখান থেকে মার্কিন সেনা ও অনেক আফগানের দেশ ছাড়ার মুহূর্তে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ওই হামলা চালানো হয়।

এদিকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কনসার্ট হলে মুখোশ পরা বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক আগে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত ৭ মার্চ রাশিয়ায় মার্কিন দূতাবাস একটি নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে। সতর্কবার্তায় বলা হয়, মস্কোয় বড় জমায়েতে উগ্রপন্থীদের হামলার পরিকল্পনার খবর জানা গেছে। এ সতর্কবার্তায় বড় জমায়েতের মধ্যে কনসার্টের কথাও বলা হয়েছিল।

সেই সঙ্গে সতর্কবার্তায় মস্কোয় অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার জন্য বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি শুক্রবার (২২ মার্চ) ওয়াশিংটনে ব্রিফিংয়ে বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ইউক্রেনের বা ইউক্রেনীয়দের সম্পৃক্ততার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles