Saturday, January 25, 2025

যে কারণে ব্যাংকে ফের টাকা রাখতে শুরু করেছে মানুষ


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম

ব্যাংক খাতের আমানত বাড়ছে। কেটে যাচ্ছে তারল্য সংকট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা—যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের সুদ বাড়ার কারণে আমানতের সুদ হার বেড়ে গেছে। আর আমানতের সুদ হার বাড়ার কারণে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন সুদ আয়-নির্ভর আমানতকারীরা।

ব্যাংকের এমডিরা বলছেন, সুদ হার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি প্রচলনের পর এর প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্মার্ট রেট (ছয় মাসের ট্রেজারি-বিল বন্ডের গড় রেটের) অনুযায়ী সুদ হার বাড়ানো হচ্ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য ব্যাংকের বিনিয়োগে (ঋণে) সর্বোচ্চ সুদ হার ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক আরও প্রতিযোগিতামূলক হারে সর্বোচ্চ ১১ থেকে ১২ শতাংশ মুনাফায় আমানত নিচ্ছে। আমানতে প্রবৃদ্ধির যা অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমানতের সুদ হার ছিল মূল্যস্ফীতি হারের চেয়ে নিম্ন।

জানা গেছে, যেসব ব্যাংকের বাধ্যতামূলক জমা সঞ্চিতির অনুপাত অপ্রতুল– তাদের নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার অনুপাত (স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও বা এসএলআর) কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা উচ্চ সুদ হার দিয়ে আমানত আকৃষ্ট করতে হচ্ছে। এতেই সুফল পাচ্ছেন সঞ্চয়কারীরা। যদিও এর আগে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমানতের সুদ হার ছিল মূল্যস্ফীতি হারের চেয়ে নিম্ন।

জানা গেছে, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো এখন তুলনামূলক বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে। কোনও কোনও ব্যাংক ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে আমানত নিচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক মেয়াদি আমানত নিচ্ছে ১০ শতাংশের বেশি সুদে। ন্যাশনাল ব্যাংক বিশেষ সঞ্চয় স্কিমে সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ তথা ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক তিন বছর মেয়াদি আমানত রাখলে দিচ্ছে সাড়ে ৯ শতাংশ মুনাফা। সংকটে থাকা কোনও কোনও ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ হার গত ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আমানত প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল।

এ প্রসঙ্গে এবিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী করতে ব্যাংকগুলো সাধারণত বছরের শেষ দিকে এসে আমানত বৃদ্ধির লক্ষ্যে জোরেশোরে প্রচারণা চালায়। এবারও সেটা হয়েছে। এছাড়া সুদের হার বেড়েছে। আমানতকারীরাও ব্যাংকে সঞ্চয় করাকেই বেছে নিয়েছেন। এতে আমানত বেড়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদ হারে এক অঙ্কের যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের পরেই আমানতে সুদের হার বাড়তে শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঋণের সুদ হারে সীমা তুলে নেওয়ায় আমানতের সুদ হার বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘পলিসি রেট (নীতি সুদ হার) বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের সুদ হার বেড়েছে। যদিও এখনও মূল্যস্ফীতি রেটের তুলনায় আমানতের রেট কম।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ হার সীমা তুলে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্মার্ট রেট’ ঘোষণা করেছে। সেপ্টেম্বরে সুদ হারের ব্যবধানের (স্প্রেড) সীমাও তুলে নেওয়া হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো এখন উচ্চ সুদ হারে আমানত নিতে পারছে। বর্তমানে গ্রাহকের ঋণের রেট পরিবর্তন হচ্ছে ছয় মাসের ট্রেজারি-বিল বন্ডের গড় রেটের (স্মার্ট) ওপর ভিত্তি করে। এর সঙ্গে আরও ব্যাংকগুলো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে গ্রাহক ঋণ দিতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর—এই ছয় মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ কমেছে ৩৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles