রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেটে দোকানের সামনে এবং সিঁড়িতে দেখা যায় নানা ধরনের অস্থায়ী দোকান। এসব দোকান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে স্থায়ী দোকান মালিকদের। অবৈধ দোকানগুলোর কারণে যেকোনও অগ্নিঝুঁকিতে ব্যবস্থা নিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণও বাড়ে। এমনটাই মনে করছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন বড় মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, অস্থায়ী দোকানগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে যে, মার্কেটে প্রবেশ করাও দুরূহ। ক্রেতাদের হাঁটা-চলায় তৈরি হচ্ছে বাধা। অবৈধ দোকানের বিদ্যুতের লাইনের সংযোগও অবৈধ। বিক্ষিপ্তভাবে টানা এসব লাইন দৃশ্যত ঝুঁকিপূর্ণ।
দোকান মালিকদের অভিযোগ, অবৈধ এসব দোকানের জন্য মার্কেটের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ দোকানের কারণে ক্রেতারা ওইসব মার্কেটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
মিরপুরের-১০ এর শাহ আলী প্লাজার দোকানি রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দেই। বাইরের দোকানগুলো দেয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। জিনিসপত্রও খুব একটা ভালো না। মানুষ এটা বোঝে না। তারা কম দামে কিনে নিয়ে যায়।’
মার্কেটের বাইরে আরেক মার্কেট মন্তব্য করে ক্যাপিটাল শপিং সেন্টারের দোকানি রাহাত বলেন, ‘একটা মার্কেট যদি বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর না হয়, সেখানে ভালো ক্রেতা আসে না। বাইরে দোকান নিয়ে বসুক সমস্যা নেই, কিন্তু একটা সিস্টেম তো থাকবে। যে যেভাবে পারছে, দোকান বসিয়ে দিচ্ছে।’
এ সব অবৈধ দোকান নিয়ে আপত্তি নেই কিছু কিছু দোকানির। তাদের বক্তব্য, একই পণ্য না নিয়ে বসলেই হলো।
নিউ মার্কেটের পর্দা-তোশক বিক্রেতা শামসুল আলম বলেন, ‘তাদেরও পরিবার আছে। কিছু না করতে পারলে চলবে কী করে। তাদের নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই, তবে আমরা যেটা বিক্রি করি সেটা বিক্রি না করলেই হয়। এতে ক্রেতারা ভেতরে আসে কম।’
মার্কেটের সামনে শৃঙ্খলাবিহীন এসব দোকান নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে নিউ সুপার মার্কেটের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, ‘আমাদের মার্কেটের নিচের দোকানগুলোতে সামান্য কিছু জিনিসপত্র বাইরে রাখলেই পুলিশ এসে জরিমানা করে, মালামাল সরিয়ে দেয়। অথচ তাদের সামনেই এতগুলা অবৈধ দোকান– কোনও খেয়ালই করে না। একটা মার্কেটে অন্তত চলাচলের জন্য জায়গা থাকতে হয়। সেভাবেই মার্কেট করা হয়েছে। কিন্তু এসব দোকানের জন্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ি ঢোকার মতো জায়গা নেই।’
মার্কেটে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা দরকার বলে জানান তিনি। নিউ সুপার মার্কেটের সভাপতি বলেন, ‘আমার মার্কেটে ১৫০ থেকে ২০০ অগ্নিনির্বাপক মেশিন রাখা আছে। ডিপ টিউবলও আছে। কিন্তু মার্কেটের সামনে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তাতে ক্ষতি আমাদেরও হবে।’
ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের মার্কেট ব্যবস্থাপক ফিরোজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি— এসব দোকান উঠিয়ে দেওয়ার, কিন্তু আবারও নানাজন অনুরোধ জানায়। অনেক সময় কারও কারও অনুরোধও রাখতে হয়। আবার দোকানিরাও মায়া দেখায়। তবে এসব দোকান অল্প কিছু রাখা যায়, বেশি থাকলে মার্কেটের পরিবেশ নষ্ট হয়।’
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মার্কেটের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ফুটপাত দোকানের কারণে যেকোনও দুর্ঘটনায় আমাদের উদ্ধারকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়। কোথাও আগুন লাগলে ভেতরে প্রবেশে সামনের দোকানগুলো বড় বাধা। আমরা মার্কেটের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়ে সুপারিশ করি, সে অনুযায়ী মার্কেট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু বাইরের দোকানগুলোর বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
ছবি: প্রতিবেদক
আরও পড়ুন:
ভবনটির দ্বিতীয় তলা ছিল প্লাস্টিকের দানায় ঠাসা
বেইলি রোডের ট্রাজেডিতে মৃত্যু বেড়ে ৪৬, আগুনের সূত্রপাত কোথায়?