গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪, ১০:৩০ এএম
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবুল কালাম। তিনি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট। জনপ্রতিনিধি হওয়ায় লোকজন বিশ্বাস করতেন। এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গ্রাহকরা তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। প্রতারণার শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।
কয়েক বছর আগে দামপাড়া বাজারের ভিআইপি সড়কে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখাটি চালু করেন আবুল কালাম। গত এক সপ্তাহ ধরে শাখাটি বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ার পর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখাটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে গ্রাহকদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নির্ধারিত ক্যাশ মেমোতে বিভিন্ন অংকের স্থায়ী আমানত ওই শাখায় জমা দিয়েছেন। বিপরীতে শতকরা ১১ শতাংশ মুনাফা পেতেন। গত ছয়-সাত মাস লভ্যাংশের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করে আসছিলেন শাখার এজেন্ট। ডিসেম্বর মাস থেকে লভ্যাংশের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে গ্রাহকরা কালামকে চাপ দিলেও ধৈর্য ধরতে বলেন এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না বলে জানান। তার আশ্বাসে এতদিন ধৈর্য ধরেছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ আবুল কালাম পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।
অর্থ হারিয়ে অসহায় হয়ে সিদ্দিক মিয়া নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘কালাম মেম্বার কইছিল লাখে এক হাজার ১০০ টাকা করে লাভ দেবে। অনেক কষ্ট করে লাভের আশায় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা স্থায়ী আমানত ওই শাখায় জমা দিয়েছিলাম। ছয় মাসের মতো লাভ পাইছি। অহন হুনি মেম্বার পলাইছে। তার মোবাইল নম্বর বন্ধ। বাড়িঘর ও দোকানে তালা মারা। আমি অহন কী করবো, কিছুই বুঝতাছি না। আমার সব শেষ।’
সিদ্দিকের মতো দামপাড়া ইউনিয়নের গোয়ালহাটি গ্রামের আছির উদ্দিন ১০ লাখ, মন্টু রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার ও রাধানাথ মল্লিক ছয় লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে আমানত হিসেবে জমা রাখেন। তাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, প্রথম কিছুদিন জমা টাকার ওপর ১১ শতাংশ হারে লাভ পেয়েছেন। সর্বশেষ লাভের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল গত ১৯ জানুয়ারি। অনেককে মূল টাকাসহ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল সেদিন। কিন্তু সবার টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে গেছেন কালাম মেম্বার।
গোয়ালহাটি গ্রামের রইসউদ্দিন নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘পুরো জানুয়ারি মাস টাকা দেওয়ার কথা বলে ঘোরানো হয়েছে আমাদের। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেখছি, কালামের অফিসে তালা। পরিবার নিয়ে পালিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, পুরো এলাকার শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি আমানত নিয়েছিলেন আবুল কালাম। টাকার অংক মিলিয়ে নেওয়ার কথা বলে বেশ কিছু গ্রাহকের রসিদ কৌশলে নিজের কাছে রেখে নেন। অনেককে আবার টাকা জমা নেওয়ার বিপরীতে রসিদ দেননি। জনপ্রতিনিধি হওয়ায় লোকজন ভয়ে কিছু বলতেও পারেননি। ফলে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ অনেকের কাছে নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আবুল কালামের মোবাইল নম্বরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের কথা শুনেছি। তবে আবুল কালামের সঙ্গে আমার দেখা নেই অনেকদিন। বর্তমানে কোথায় আছে, তাও জানি না। শুনেছি পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।’
আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তার পার্শ্ববর্তী দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। মোবাইল নম্বর বন্ধ করে রাখায় তার সঙ্গে আমাদের কারও যোগাযোগ হচ্ছে না।’
এ ঘটনায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কালামের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেছে।
কালামের বিরুদ্ধে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমি বাদী হয়ে গত ২২ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেছিলাম। আদালত নিকলী থানার ওসিকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। তবে এখনও মামলা নথিভুক্ত করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
মামলা নথিভুক্ত করার ব্যাপারে জানতে চাইলে নিকলী থানার ওসি এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আদালতের আদেশের কপি এখনও হাতে পাইনি। আদেশের কপি হাতে পেলে মামলা নথিভুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’