Saturday, October 12, 2024

চিকিৎসা সেবা চাওয়ায় কিশোরকে পিটিয়ে মামলা দিল চিকিৎসকরা 


গতকাল সোমবার দুপুরে ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন শাজহান রাঢ়ি (৭০) নামে এক বৃদ্ধ। তাকে ঐদিন দুপুরেই তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও সেবা পাচ্ছিলেন না তিনি। এ নিয়ে উত্তেজিত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ডাক্তারদের হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনায় জড়িত রোগীর জামাতাকে না পেয়ে রোগীর নাতিকে ধরে বেদম মারধর করে পুলিশে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। ৯ম শ্রেণির ছাত্র জিহাদ এবং তার খালু মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন চিকিৎসক ডা. তারিকুল ইসলাম। স্বজনদের অভিযোগ, থানায় ওই ডাক্তারের পা ধরে মাফ চাইলেও রেহাই পায়নি ঐ কিশোর।

এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

জানা গেছে, উজিরপুরের সাবেক ইউপি সদস্য মুমূর্ষু শাজহান রাঢ়ি এখন ঢাকায় নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আর ছাত্র জিহাদকে রাতভর থানায় রেখে পরদিন পুলিশ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। জিহাদ নগরের কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।

মঙ্গলবার (২৬মার্চ) বেলা ১টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ডে পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় দেখা হয় কিশোর জিহাদ হাওলাদারের সঙ্গে। করুণ দৃষ্ঠিতে তাকিয়ে জিহাদ জানায়, স্ট্রোক করায় তাঁর নানার অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু ডাক্তার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও চিকিৎসা দেয়নি। এ নিয়ে তর্ক হয়েছে। পরে ডাক্তাররা তাঁকে ধরে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে বলে জানায় জিহাদ। ওই সময় জিহাদের মাকে থানায় ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ ভ্যানের পিছু পিছু আদালতে ছোটে জিহাদের মা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজন বিবাদীরা হয়তো হাসপাতালে মাথা গরম করেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়েছে। মামলায় মো. জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি এবং জিহাদ হাওলাদার নামে ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রকে আসামি করেছেন বাদী ডা. তারিকুল ইসলাম। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। গ্রেপ্তারকৃত জিহাদকে আদালতের মাধ্যমে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।’

সোমবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার দ্বিতীয় তলায় গিয়ে মামলার বাদী ডা. তারিকুল ইসলামের পা জড়িয়ে ধরেন ছাত্র জিহাদের খালা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারী বলেন, ডা. তারিকুলের সঙ্গে থাকা কয়েক প্রভাবশালী লোক তাঁর গায়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। পা ধরে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা না করার অনুরোধ জানালেও তাঁরা সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করে। গায়ে হাত দেওয়ায় তিনি নারী নির্যাতন মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

ওই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, তাঁর বাবা শাজাহান রাঢ়ি মৃত্যুর পথে। তাঁর ওপর বোনের বাচ্চা ছেলে থানায়। ডাক্তাররা এত নির্দয় যে, পা ধরেও নিস্তার পাননি। শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় সোমবার গভীর রাতে তার বাবাকে ঢাকা নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। আর কিশোর বয়সী জিহাদের পেছনে ছুটছেন তাঁর মা।

জানতে চাইলে ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি থানায় মামলা করেছেন। মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত আছেন। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে তারপর তিনি গণমাধ্যমে কথা বলবেন।

একজন কিশোরকে কেন আসামি করলেন—জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, উজিরপুর থেকে স্ট্রোকের মুমূর্ষু রোগী নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই রোগীকে দেখার সময় এক স্বজন ভিডিও করার একপর্যায়ে তর্কবিতর্ক হয়। উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়। এ সময় মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তরিকুল ইসলামকে মারধর করে। পরে ওই ডাক্তারের লোকজন এসে থানায় মামলা করেছে।

পরিচালক আরও বলেন, ‘ওই মুহূর্তে যাকে পাওয়া গেছে তাকেই পুলিশে দেওয়া হয়েছে। সে কিশোর কি না তা পুলিশ এবং আদালত বুঝবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআর



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles